বুদ্ধিজীবী

তোমাকে যারা এতকাল বুদ্ধিজীবী বলতেন
        আমিও ছিলাম তাদেরই দলে ;
তোমার ক্ষুরধার লেখনি, চাবুকের মত কথা,
ইস্পাত কঠিন বিবেক, আমি ফিদা হয়ে ছিলাম !

সেদিনও তোমাকে যখন ওরা পুরস্কৃত করলে -
কতলোকের কত কথা, গল্প থেকে কেচ্ছা কাহিনী
কথা কথায় মহাকাব্যের লড়াই 
আমি কিন্ত তোমার পক্ষেই ছিলাম ।
শহীদ মিনারে তোমার ধুপদুরস্ত পোষাক
তোমাকে স্বর্গের দেবদূত দেখাচ্ছিল ।
আমি জনে জনে বলেছিলাম
তোমার পোষাক যতটা না পরিচ্ছন্ন 
তারও শতগুণ পবিত্র তোমার মন,
কারণ, তুমি যে মানুষের কথা কও !
তোমার কবিতা জুড়ে শুধুই আর্তের আর্তনাদ 
আর অস্তিত্বের লড়াই । যুদ্ধ যতই একপেশে হোক
তুমি ভাঙ্গবে তবু মচকাবে না -
তুমি যে কবি, প্রতিবাদের আঁতুড়ঘর !


সকাল থেকেই গুমোট হাওয়া ভাব
থেকে থেকে খবর আসছে ভেসে 
কারা নাকি ঘর পুড়ছে কাদের ।
কারো ঘরে গরু ছাগল, কারো টাকা কড়ি 
কারো ঘরে ভাঙ্গছে ইষ্ট, লাঠিসোটার ঘায়ে ।
সবাই জানে একতরফা লড়াই -
পুলিশ যারা ফুলিশ সেজে বসা
এরই মধ্যে কেউবা হচ্ছেন শিকার-
"পোয়াতি কন্যার আবার হচ্ছে বিয়ে !"
আমার মনে তখনও আস্থা ছিল, 
আসলে আমরা তো সব এক পরিবারের লোক !

কাল দুপুরেই ঘুম ভাঙ্গলো আমার 
ফেসবুকের পেজে যখন তোমাকে দেখলাম-
ধানমন্ডি ভিড়ে হাতে সিলিং ফ্যান-
আমি চমকে উঠেছিলাম, হয়তো দেখার ভুল 
বারবার দেখছি তবু, মানছিল না মন, কিছুতেই ।

ভুল ভাঙ্গলো কাল মধ্য রাত্রিবেলা
তুমি এলে, হ্যাঁ তুমি এলে সঙ্গে বহুজন ।
ঘরে ছিল যা কিছু শেষ সম্বল
সোনা - দানা - টাকা, ইলেকট্রনিক সব আইটেম-
যতটা নেওয়া যায় সবটাই -
বাকিটা জ্বালিয়ে দিলে রাতের অন্ধকারে ।
তোমাদের ক্ষুধার্ত শরীরে 
যোগান দিতে দিতে আমার নাবালিকা বোনটা 
রাত ভোর হতে না হতে লাশ হয়ে গেল -
আমরা দেখলাম ঝোপের আড়াল থেকে -
দেখলাম, তবু লড়তে পারলাম না !!!
তোমার রঙচড়া মুখোশটা হারিয়ে গেছে ভিড়ে
তুমি তখন গমক শেষে মীড়ে -
আমি সেই প্রথম জানলাম 
'মানুষ আসলে মানুষ নয়
মুখোশের আড়ালে আস্ত জন্তু বিশেষ !'

 আজ ঘর পুড়েছ, মন পুড়েছে, আমার মিথ্যা অহংকার,
দুঃখ করি না, সেই আগুনেই পুড়েছে যে -
তোমার মেকি সাহিত্যের সার !
  

Comments