রবি ঠাকুর, এ টিঠি তোমার জন্যেই লেখা। 
তোমার অনেক অনেক কবিতা পড়েছি,
অনন্ত প্রেম, স্মৃতি, ধ্যান, প্রথম চুম্বন, আফ্রিকা -
কিংবা সেই কবিতা - "সাধারণ মেয়ে" আমি পড়েছি।
তোমাকে আমার এ কারণেই লেখা।
 তুমি লিখেছ, শরৎ বাবুর শেষ বইটি পড়ে। 
আমি লিখছি তোমার সাধারণ মেয়ে নিয়ে । 
এক অন্তপুরের মেয়ে, যার কিনা স্বপ্ন আছে,
 হৃদয় দিয়ে ভালবাসতে জানে, 
তার কষ্ট নিয়ে স্বপ্ন এঁকেছ তুমি । 
তার অপূর্ণতায় কলম ছুঁয়ে রক্ত ঝরিয়েছো -
ভালোবাসার নিক্তিতে সে হীরের পাশে কাঁচ ।
রবি ঠাকুর, এ তোমার অন্যায় আবদার !
এবার ওরই জন্য আবার তোমায়
আরো একটা কবিতা লিখতে হবে । 
এ শুধু আমার নয়, সময় দাবিদার। 

কবি, তুমি তো তার মনের কথা জানো। 
একটি মেয়ে, সে নাইবা হল ডাকসাইটে সুন্দরী। 
হিল্লি দিল্লি বোম্বে থেকে এমএ, বিএ পাস। 
নাই বা থাকলো তার বাপের ঘরে অঢেল সম্পত্তি। 
তাই বলে কি ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে গেল । 
তুমি বলো, তুমিই বলো, ভালোবাসার মাপকাঠিটি কি? 
রবি ঠাকুর, এবার সত্যি নিয়ে একটি কবিতা লিখ। 

তোমার গল্পে পাত্র শুধু বিদেশ চলে যায়। 
কেন? বিদেশ কেন ? বিদেশ গেলেই পাত্র বুঝি ভালো ?
সাগর পার, সাদা চামড়া, বাদামী রঙের চোখ 
ওইখানে কি লুকিয়ে আছে ,ধরার সকল সুখ ?
কেন ? এমন করেও লিখতে তো তুমি পারো ,
একটি মেয়ে, ভালোবাসলো একটি সাধারণ ছেলে
খুবই সাধারণ। বছর জুড়ে নেই তো ঘরে ধান। 
না থাক । খেটে খায় সে, নেই যে কাজে মন। 
উদাস থাকে, গলায় মিষ্টি সুর। 
ভালোবাসার ধারধারে না সে। 
কিসের টানে ঘুরে বেড়ায় নিজেই জানে না। 
তেমনি একটি ছেলের প্রেমে মাতলো একটি মেয়ে
তার জীবন নিয়ে চমক নেই পুলক রাশি রাশি  
এবার তুমি সেই মেয়েটির গল্প লিখবে ঠাকুর। 

রবি ঠাকুর, তোমার এই কবিতাটি যতবার পড়ি,
প্রতিবার দ্বিধা জাগে মনে। 
তোমার এই মেয়েটি আমি যে নই, আমার কথা নয়। 
আচ্ছা কবি , তুমি কি চেনো, এমন একটি মেয়ে,
যাকে তুমি বলতে পারো অতি সাধারণ। 
তোমার কাছে আছে তার সঠিক ঠিকানা ?
আমি জানিনা। আমার কাছে নেই। 
আমার কাছে কোন মেয়েই সাধারণ যে নয়। 
যদি বৃত্তে বৃত্তে ঘোরো, যদি উত্তাপ তার ছুঁয়ে যায় মন
ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাবে এমন একটিও নেই ।
যদি দেখার মত সঠিক চোখ থেকে থাকে 
ঘরে ঘরে তাকিয়ে দেখো অসামান্য সব নারী 
আমি নিজেও তাই , তুমি জাননা ?
এবার আমার জন্য, একটি কবিতা লিখ !

রূপের খোটা দিও নাকি, কোথায় কিসে কম ?
কালো বরণ বাপের দেওয়া 
তাতেও যা অঙ্গে ধরি, ঈর্শা জাগায় মনে
তুমি রূপের পূজারী
কালো মেয়েকে সহজেতেই কালো বলতে পারো। 
যতই তার রূপের ছবি আঁকো। 
কাজল টানা চোখ , মেঘ বরনা চুল 
সবার শেষে সেই তো বর্ণখোটা -
আমার তাতে গায়ে লাগে না, ঈশ্বরের দান,
আমার যা তা, তাতেই গর্ব, দিব্যি আছি বেশ ।


গল্পে আমার কি নাম দেবে তোমার ইচ্ছে। 
ইচ্ছে হলে রাখতে পারো মালতি নাম । 
ওই নামেতে তোমারিতো অনেক কবিতা আছে। 
আবার ওটাই আমার পোশাকি নাম বটে। 
হাজার ভিড়ে চিনবে না কেউ, চিনবো শুধু জানি,
যখন ক্লান্ত হবে মন, সব বিলিয়ে রিক্ত হবে আমি। 
তোমার কবিতা ঠিক তখনই সঞ্জীবনী হবে। 
আমার জন্য একটি কবিতা লিখ। 

ছেলেটির নাম নরেশই থাক । 
খাপে খাপে মিলবে তোমার সাথে। 
আমি তারে ভালোবাসবো নদীর মত। 
তুমি বলবে নদী কেন সাগর কেন নয়? 
নোনাজল যে ভাসিয়ে নিতে জানে। 
পিয়াস মেটায় তেমন শক্তি কই? 
তুমি বলবে তিয়াস যদি মিটেই যায় 
ভালোবাসা ফিকে রঙের হয়। 
আমি বলব এতই সোজা ? 
ভালোবাসা এতই ঠুনকো কথা ?
প্রতিদিন নতুনরূপে নতুন রঙের ধরা দেবে সে আমায়। 
আমি তাকে ভালোবাসবো নিজের মতো করে। 
কখনো সে কৃষ্ণ কালা, গোপাল বালা। 
কখনো সে গোষ্ঠ রাখাল, মাখন চোরা। 
আবার কুঞ্জে যখন অভিসারে মাতবো তাকে নিয়ে 
আমি তাকে আগলে রাখবো চিত্রা বিশাখা থেকে। 
কবি তুমি আমায় নিয়ে তখন কবিতা লিখ ।

সে থাকবে নিজের মতন আপন খেয়ালে। 
ভালোবাসা বুঝতে নারে এমন মূর্খ নয় -
প্রকাশ তারে কেমন করে কয়, 
সেটাই শুধু জানেনা সে। 
মনে মনে দহন জ্বালায় রজত খন্ড হবে। 
আমার কাছে ফিরে ফিরে আসে, 
কেন আসে জানিনে কি তা? 
আমি তাকে বুঝতে দেই না কখনও -
ঠোঁটের কোলে লুকিয়ে হাসি, কঠিন থাকি -
শাসন করি, শোষণ করি, 
আবার সময় সময় সোহাগ দিয়ে অঙ্গ সাজাই তার। 
সে আমার ভালোবাসার ধন। 
আমার ইচ্ছে খুশি রঙে তারে দেখবো যখন তখন। 
আমার গল্প নিয়ে একটি কবিতা লিখবে তুমি। 

এমনি করে মাসের পর বছর ফিরে যায়
ঠোঁটের কোণে কথারা সব লাজে ঝরে মরে ।
বিনেসূতার বাঁধন সে যে কখন 
 আঁগল খুলে বেরিয়ে গেছে নিজেই জানি না ।
ভালোবাসায় নজরটিকা কাটিনি কোন কালেই 
কোন নাগিনী নজর দিল বুঝতে পারিনি ।
যখন আমার জ্ঞান হল সময় পেরিয়ে গেছে,
খাঁচা ছেড়ে ময়না তখন দূর গগনে কোথাও। 
দূরে গেছে তা যাক চলে যাক সুখের ঠিকানায়,
নাওয়া, খাওয়া সঠিক কিনা সেটাই ভাবনা আমার, 
সুরের নেশায় কখন কোথায়, কে রাখে তার খবর ?
আমার ভাবনা ? না থাক ওসব কথা -
দুঃখ আমার মুখপোড়াটা চাইতে শিখলে না ।
হাতে ধরে তোতাকথা, সময় সময় অনেক ঈশারায়-
মুখপোড়াটা সবই বোঝে 
ঠোঁট ফুটে সে চাইলে না যে কিছুই ।
নাইবা চাইলে, আমার কি আর দেবার বাকি ছিল ?
সব শুষে সে পালিয়ে গেল কিসের বাসনায় ?

তোমার কাছে দয়ার পাত্রী ? আমিতো নই ।
কলম ছুঁয়ে আমায় তুমি পাটরাণী করে দেবে ?
ভালবাসার মানুষটাকে মুঠোয় ধরে রাখবো ?
এমন ভাবনাও মনেতে দিইনি স্থান
না থাক কবি, এই কথাটাই বাদ দিয়ে দাও -
তুমি বরং লিখে দিও ভালো আছি আমি -
আমার জীবন থেকে শনি গেছে কেটে,
এখন আমার স্বাধীন জীবন 
ভালোবাসার গড্ডালিকায় অঢেল সোহাগ -
সোহাগ জ্বালায় ঘুম আসে না রাতে ।
রাতের পর রাত জেগে তারারা রয় দাঁড়িয়ে
যদি ভুল করে আমি ভুল করে ফেলি !
না, থাক, এই কথাটাও লিখতে যেও না,
শুধু লিখবে, যদি সে ফিরে আসে আমার জীবদ্দশায় 
সে হোক কোন সকাল কিংবা মধ্য রাত্রি ক্ষণ, 
আমার দরজা খোলা থাকবে অহর্নিশি 
তুমি তারে বলে দিও কবি, 
             আমি তারে ক্ষমা করে দিলাম । 
 

Comments