গদ্দার

অনিতা অগ্নিহোত্রীর গদ্দার কবিতাটি
পাঠ করছিলাম বড়বাংলার বারান্দায় বসে
ওখানে থেকেই দেখা যায় বিক্ষত লালবাগ -
যেখানে আশৈশব কেটেছে 
মাদল আর তালপাতার বাঁশির সুরে ।

ওখানকার ঘন সবুজ চা বাগিচা
এখন শুকনো জঙ্গল,
সাপ, শেয়াল আর - আরো কিছুর আস্তানা ।
কোন এক রাজার খেয়ালে অগুন্তি গাছের লাশ
আর চাপ চাপ সাদা রক্ত -
নিষ্ফলা আক্রোশ জাগায় শিরায় শিরায় ।
সমুদ্র মন্থনে সশব্দে কানে বাজে
সুখীয়া আর লছমীদের কাঠফাঁটা কান্না,
আমি দেখেছি সহস্রবার, হৃদয় দিয়ে ।

সুদর্শনের ঘরটা এখন ধ্বংসস্তূপ ।
ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে একদল বুলডজার
পিষে দিয়ে গেছে তার সাজানো উঠান,
তিন্নাথের থান আর ঢেঁকিশাল । 
ওখানেই সপ্তাহ আগে পোয়াতি বিনীতা
স্বপ্ন দেখেছিল নতুন করে ঘর বাঁধবে আবার ।

নিরঞ্জনের গোয়াল ঘরটি আর নেই ।
সাহেবের গামবুটে মাথা খুঁড়ে খুঁড়ে 
এক সপ্তাহ সময় নিয়েছে চেয়ে,
ন‌ইলে বসত বাড়িটা - থাক ।
রামবিলাস, শৈলেশ, বিপুল এখন ছাঁটাই শ্রমিক
রোজ সকালে একদল যুবতী স্বেচ্ছায়
ঘুরে বেড়ায় জঙ্গলে
সর্বস্বের বিনিময়ে একপেট খাবারের আশায়,
তবু এখানে সূর্য ওঠে ঠিক ঘড়ির কাঁটা মেনে
কারণ এদেশের নিয়ম ভীষণ কঠোর !

গাড়ি থেকে একদল সাহেব নামলেন সেদিন,
হাতের ফিতা, টেনে টেনে মাপ-ঝোঁক হলো বিস্তর,
কালো ভীত চোখগুলো যাদের রক্ত হিমশীতল,
যারা জীবনটাকে শুইয়ে দিয়েছিল কালো বুটের ডগায়,
যারা শতাব্দী পূর্বেই ভুলে গেছে প্রতিবাদ -
যারা স্বপ্ন দেখে তাদের নাতজামাই
ঠিক এই মাটিতেই নামবে উড়োজাহাজে চড়ে -
জানতেও পারলে না তাদের ভবিষ্যত,
তাদের স্বপ্ন, আগাছার মতো ছেঁটে দিল
কিছু শকুন শিয়ালের দল -
আমি প্রতিধ্বনিত হতে দেখলাম
 অনিতা অগ্নিহোত্রীর কবিতা 'গদ্দার' -
এই লালবাগের বুকে !




Comments