আমগাছ


আমাদের বাড়িটা যজ্ঞেশ্বরপুর থেকে
তিন কিলোমিটার ভিতরে ।
আমার যখন জন্ম হয়,
কোন পাবলিক বাস, অটো, নিদেনপক্ষে রিক্সা -
কিছুরই চল ছিল না সেখানে ।
সারাদিনে দু'টো বাস - বাস থেকে নেমে হাঁটা পথ,
আমার বাবা ছিলেন ওখানকার পোস্টমাস্টার ।

আমাদের বাড়িটা চার চালা ঘর
পাশেই উত্তরে ঠাকুর, দক্ষিণে গোয়ালঘর -
সামনে তুলসী মঞ্চ আর
তার পাশেই বিশাল সিঁদুরে আম গাছ ।
আমার বাবা মা কেউই বেঁচে নেই,
বোন একজন, তার‌ও বিয়ে হয়ে গেছে ।
আমি বাড়ি ছাড়া আজ তেত্রিশ বছর ।

বাড়িতে সেই আম গাছটি কেমন যেন বুড়িয়ে গেছে,
আমাকে দেখেই চিনতে পেরেছে হয়তো ।
একটা দমকা হাওয়া গায়ে সবুজ পাতা ছুঁয়ে
আমার বুকে আছড়ে পড়লো শেষে ।
আমি অনেকদিন পর প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলাম ।

একজন ভদ্রলোক মাথায় বিশাল টাক
ধূতি আর ফতুয়া গায়ে, ধীর পায়ে
আম গাছ থেকেই বেড়িয়ে এলেন যেন ।
বললেন, "বাড়িটা বেচে দিলি শেষমেশ -
ওটা যে আমার রক্ত জল করা টাকা ।"
আমি চমকে তাকিয়ে দেখি, অবিকল বাবা !
গলার আওয়াজটিও অদ্ভুত চেনা !



Comments