গাঙপাড়ের সেই শ্যাওড়া গাছটা
ভেঙ্গে গেছে সেই কবেই,
মাহাতোদের কচি বউটা ওরই এক ডালে
গলা ঝুলিয়েছিল কোন এক অন্ধকার রাতে ।
দুর্জনেরা অনেক কিছুই বলেন -
নকুল নাকি সকল জড়ের মূল,
সবাই সেটা মানেন না,
থানা থেকে দিব্যি সাফাই দিয়েছে -
সব কথাই ভুল ।
পাশেই ওই চূণ সুরকিতে তৈরি বাঁধানো ঘাট -
এককালে কৃষ্ণা যেখানে জল তুলতো
প্রতিদিন সূর্য ওঠার সাথে -
এখন সবটাই অতীত ।
কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে পাথরের গায়
সবুজ শ্যাওলার মতো
বাকিটা ভাসিয়ে নিয়েছে ভরা নদীর স্রোত ।
ভেঙ্গে গেছে চাতাল আর মস্ত মস্ত স্তম্ভ ।
জোড়া শিবমন্দির এখন সাপ শেয়ালের আস্তানা ।
জংলা কালির থানটি ছিল ঠিক শ্মশানের পাশে
এখন সেখানেই দিনরাত্রি মেসিন কাঁদার শব্দ
নদী বেয়ে যত চোরাই কাঠ নামে,
এখানেই তার চেরাই, বিক্রি হয়।
জঙ্গলে আর কাঠ নেইকো, কাঠের বাচ্চা সব
তারই মধ্যে অবাধে চলছে সিন্ডিকেট রাজ ।
সে আমার বিষ্ণুপুর গ্রাম ।
এখানেই বালেশ্বরের বাড়িতে বসতো
প্রতিরাতে বাসর
গান হতো, নাচ হতো, আকন্ঠ মদ
নকুল মহাজন জমিদারের দোসর -
প্রতিদিনই আসতো সাঙ্গো পাঙ্গো নিয়ে,
রাতের জোনাকির মতো টাকা উড়তো শূন্যে
লক্ষ্মীবাঈএর জন্যে ।
লক্ষ্মীবাঈ হিন্দু বিধবা, ভট্টচার্যি মেয়ে
নাচতো যখন নুপুর পায়ে, ঢাকা থাকতো মুখ
শুধু নকুল জানতো লক্ষ্মীবাঈ-তে কত রতি সুখ ।
নদী যেখানে বাঁক নিয়েছে, চোরাবালির চর
ঠিক সেখানেই কালো পাথর রক্তে মাখামাখি ।
কৃষ্ণাকে তুলে নিয়েছিল কৃষ্ণা চতুর্দশী রাতে
নকুল, আরশাদ আর বিষ্ণু মাহাতোর দল ।
কৃষ্ণা ছিল আমার ভালবাসার ধন ।
সেদিন নদীর তীরে মহোৎসব
কচি পাঁঠার সাথে যুবতী মেয়ের শরীর
কালো পাথরে চলছে কৃষ্ণলীলা ।
আমার তখন মাথার ঠিক নেই
মোষ বলির খড়গ ছিল ঘরে,
তাই দিয়েই চার চারটি লাশ -
তারপর বহুবছর বেঘর ছিলাম আমি ।
গতকালও শ্রীঘর ছিল বাস ।
আমাকে আপনারা সবাই চিনতে পারেন,
আমি মোহন, মোহন কান্তি দাস
গ্রামের নাম বিষ্ণুপুর
বাপ ছিল এই গ্রামেরই মহাজন,
নাম নকুল কান্তি দাস ।
।
Comments
Post a Comment