বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক

যেদিন কারখানায় তালা ঝুলিয়ে ছিল ওরা
আমার পাঁচ মাসের পোয়াতি ব‌উটার
                 গায়ে ভীষণ জ্বর ।
ঘনঘন বমি, ঘাড়ে মাথায় অসহ্য ব্যথা, 
ঘরে তখন তিনটে নাবালক সন্তান
আমার পোয়াতি বৌ, তিন সন্তানের মাতা ।

ওখানে তখন বন্ধ ঘরে ঠান্ডা আলোচনা,
বিক্রি হচ্ছে মীরপুরের মিল ।
আমি তখন ধর্ণাতে বসেছি,
       কারখানার গেটে ।
কিছু লোক এসেছিলো, চিনি না,
বললে, গেট খালি কর্ -- ।
তারপর, কিছু বুঝে ওঠার আগেই
আচমকা কশে লাথি হাঁকলে পেটে,
উর্দি পড়া লোকগুলো দাঁড়িয়েছিল দূরে
ওরা রাজার অনুচর ।

ভরা বর্ষায়, বর্ষাতি হাতে আমার বৌটা --
গায়ে আগুন পোড়া জ্বর
ঘনঘন বমি হচ্ছে তবুও,
ছুটে গিয়েছিল, হাসপাতাল ।
তিন দিন তিন রাত হাসপাতাল ঘর
বসে থাকতো শয্যার পাশে ঠায়
পথ্যি জোগাতে তখন পিত্তি শুকিয়ে যায় ।
ডাক্তার বলেছিল, এই রুগী ফিরবার নয় ।
আমি অবশ্যি শেষমেষ ফিরেছিলাম বাড়ি
পোয়াতি ব‌উটা আমার আর ফেরেনি ঘর ।

ইউনিয়নকে বলেছিলাম একটা বিহিত করো
আট মাসের বেতন বকেয়া,
পিএফ গ্রেচ্যুয়েটি আরো অনেক কিছু,
তবুও তো হাজির ছিলাম কাজে,
তিন তিনটে মা মরা বাচ্চা,
কাষ্ঠ করি সেই কড়িও নেই ।
বলেছিলাম, বৌটা আমার বিনা চিকিৎসাতে গেল
 কিছু একটা হিল্লে হবে না তার ? 
বললে ভায়া, তোমার চাঁদা হয়নি জমা,
তুমি তো আর সদস্য ন‌ও আমাদের,
তোমার জন্যে ভাবনা হয় সত্যি !
তাই বলে লড়াই যায় না লড়া ।
থানায় গেছি, আদালত, কাঠগড়া,
পঞ্চায়েত থেকে মন্ত্রী আমলা সব
আমি গেছি, ছুটে গেছি বহু বহুবার,
নিষ্ফলা আশ্বাস আর মনগড়া গল্প। 
এখন আর আস্থা নেই কিছুতে ।

তোমরা যারা ঈশ্বরের সন্তান
দুবেলা চব্যিচষ্য খেয়ে আমাদের নিয়ে ভাবো,
মিটিং মিছিলে সাড়ম্বরে কাঁদো,
তোমাদের জয় হোক বন্ধু !
জঠরে জ্বলুক আগুন,
খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা আর বাক অধিকার
সংবিধানে থাক -
একের পর এক বন্ধ হোক প্রতিষ্ঠান,
সারা দেশ বিক্রি হয়, হোক আরো একবার -
মন্দির আর মসজিদে ভাগ হোক প্রতি অন্তর,
মালিক হোক শ্রমিকের নেতার - বন্ধু,
আর তোমাদের বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
চায়ের কাপ থেকে মলের দরজায় ।।

Comments