একটা জামা চাই

দেখতে দেখতে পূজো এসে গেছে । আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন । এর‌ই মধ্যে সবটুকু কাজ সেরে ফেলতে হবে । গতবছর পূজা অনেকটাই অনিয়শ্চতা আর ভয়ের মধ্যে কেটেছে । সেই অর্থে আনন্দে ষোল আনা নয় খামতি থেকে গেছে অনেকটা । আমেজটা আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেই পূজো শেষ । এবার অবশ্য পরিস্থিতি সেই তুলনায় সহজ বা সরল । এখন ভয়ের কারণ থাকলেও ভয় কেটে গেছে মন থেকে । মনে মনে বেপরোয়া ভাব যেন - অনেক হয়েছে আর পারবোনা । যার গায়ে গরম হাওয়াটি পর্যন্ত লাগেনি তার গলাতেও এক সুর । বাঁধনহীন জীবনের জন্য আঁকুপাঁকু মন । মূল কথা এবার পূজোয় মজা খোঁজ ।
এবারে এই অবসরে আপনাদের কারো কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা আছে নাকি ? টিকিট কাটা হয়ে গেছে ? সত্যি তো আর কতদিন বাড়িতে বসে থাকা যায় ! পায়ের গাঁটে গাঁটে ব্যথা, অভ্যেস নেই তো ! ছেলে মেয়েরা এতদিন বাড়িতে থেকেই অফিস করেছে, সবে যে যার কর্মক্ষেত্রে ফিরে গেছে নিশ্চয়ই । অনেকটা দিন কাছে পেলেন, আমিও । সত্যি এই দুর্দিনেও সময় যে কার কাছে কিভাবে আশীর্বাদ হয়ে আসে । ন‌ইলে একটানা এতদিন চোখের সামনে ? ভাবাই যায়না । তার জন্যে যদিও কোম্পানি বেতনের একটা অংশ কেটে রেখে দিয়েছে প্রতিমাসে, তবু এটা কিন্তু করোনাতে বাড়তি পাওয়া, স্বীকার করুন বা নাই করুন ।

পূজোর কেনাকাটা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই । আজকাল তো সব‌ই অনলাইনে হয়ে যায় । ঘরে বসেই কেনা বেচা শেষ । শুনেছি দামেও সাশ্রয় । তবে শহরের দোকানগুলো একবার দেখে নিলে মন্দ হতো না কিন্তু । পূজোর কেনাকাটার পাশাপাশি দোকানে দোকানে শাড়ি দেখে বেড়ানোর আনন্দ কোন অংশেই কম নয়, আমি তো যাই । আমাদের মলিমাসী সেই যে মোটুশীর মায়ের মাসতুতো বোন, উনি তো খোলাখুলি বলতেন, " আমি পূজোর আগে একমাস নিয়ম করে দোকানে দোকানে ঘুরি, সবদিন কি আর কিনি ? শুধু কাপড়ের গন্ধ নিতে যাই । প্রত্যেকটা শাড়িতেই একটা আলাদা গন্ধ । সে তুই বুঝবি না । ভালো লাগলে একবার ট্রায়েল দিয়ে সেলফি, ব্যাস মনখুশ । কিনতে হবে কে মাথায় দিব্যি দিচ্ছে ?" আমাদের মমতার বন্ধুর বর, ওই যে সেন্ট্রাল রোডে দোকান, আহা কি যেন নামটা --- থাকগে, দেখলাম ভালই কালেকশন । আর দামটাও সাধ্যের মধ্যে । মমতার কাছেই শোনা । জিজ্ঞেস করেছিলাম, অনলাইনে এত কেনাকাটার পর‌ও আরো চাই তোর !
বললে, দেখে নিতে ক্ষতি কী । দেখতে তো আর পয়সা লাগছে না । তাছাড়া এই সুযোগে বন্ধুর পাশেও দাঁড়ানো গেল । 
আমিও বলি, দেখে নিতে ক্ষতি কী । ওইসব দিন এখন আর নেই, সবটাই রিজনেবল । ভালো লাগলে কিনলেন, তাই না ।
পূজো আসতেই সমস্যা সবচেয়ে বেশি বোধহয় আমাদের পূজো কমিটির ভাইদের । শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা । বৌদিদের হাত এখন একেবারেই শক্ত । দিব্যি সুইগির ছেলেটা আসতেই দাম দিয়ে খাবারের প্যাকেটটা নিলেন অথচ চাঁদার বেলায় মাত্র পঞ্চাশ টাকা ! ওই টাকাতে শুনেছি ভালো করে গনেশ পূজাও নাকি হয়না । সত্যি, করোনা এখন বাহানা হয়ে গেছে সবার । কী ভাবছেন ? একেবারেই সাদামাটা পূজা সারবেন ? একদমই কিছু না ? যে ছেলেটা প্রতিবছর প্যান্ডাল সাজিয়ে দেয়, তার কথা ভাববেন না ? যে লাইট করে, যে ছেলেটা মাইক ভাড়া দেয়, তাদের কথা ? ছোট্ট করে দিনের বেলাতেই একটা অনুষ্ঠান হোক না, ক্ষতি কী । অবশ্যই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে । না হয় বসার কোন ব্যবস্থা নাই রাখলেন, পথ চলতে চলতে না হয় শুনলাম দু'চারটে গান । গান বাজনা যাদের জীবিকা, পূজো তো তাদের‌ও জন্যে, নয় কি ? সবকিছুর একটা ভারসাম্য বজায় রেখে হোক না পূজার আয়োজন । আনন্দ যে ভাগ করে নেবার জন্যেই ।
গতকাল শান্তশ্রী ফোন করেছিল আমায় । জিজ্ঞেস করলে, পূজোয় কেনাকাটা শেষ কিনা ।
আমাদের অনেকটাই অনলাইনে হয়ে যায়, টুকিটাকি কিছু শহরের দোকানগুলো থেকে, তাই বললাম । বললে, একটা অনুরোধ করি দাদা, অনলাইন, অফলাইন পূজোর কেনাকাটা যে ভাবেই হোক, মা দূর্গার কাপড় কেনার সময় মনে করে আরো একটা কাপড় কিনে নিও সেই দূর্গার জন্যে, টাকা দিয়ে কাপড় কেনার ক্ষমতা যার হয়নি কোনদিন । পুরনো কাপড়ে যার লজ্জা নিবারণ হয় দশকের পর দশক । ওর জন্যেও তো কাপড় একটা চাই । 
তারপর একটু থেমে আবার বললে, একটি সার্ট সেই বাচ্চা ছেলেটির জন্যেও নিতে পারো, যে খোলা বুকে বেলুন নিয়ে তোমার আমার পেছনে ছুটে শুধুমাত্র একটি বেলুন বেচার জন্য । কিংবা এক প্যাকেট খাবার ওই ভিখারিটিকে একদিন কিনে দাও না, যাকে দেখা মাত্রই ফুটপাত ছেড়ে আমরা রাস্তায় নেমে পড়ি, কি জানি পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে পাঁচটা টাকার জন্য । দেখো কত আনন্দ । একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারো কিন্তু । মায়ের পূজা হোক সার্বজনীন ।
আমার ঠোঁটে কথা সরছিল না তখন । ছোট্ট শান্তশ্রীটা কবে এতো বড় হয়ে গেল নিজেই জানলাম না ।

Comments