সেই কোন সকাল বেলা কাকভোরে ওঠে
আমার স্নানাদি শেষ।
ঘরের আসনে যে পটটি বসানো
সূর্য ওঠার সাথে সাথেই, সেই পূজো পাঠের ইতি।
অপটু হাতে ধুতির কোচাটা গুঁজে দিয়ে ফাঁকে
ত্রস্ত আমি ব্যস্ত পায়ে ছুটছি নিজের লক্ষ্যে।
পড়নে পাঞ্জাবি, হাতের প্লাস্টিক থলেতে
একপ্রস্ত ধুতি চাদর, পাঁচ পদ ফল মিষ্টি,
সাথে পকেটে সামান্য প্রণামী --
আমাকে পৌঁছতে হবে সময়ের আগে।
এক ভদ্রলোক বললেন, ' দাদা ওদিকটাতে যান,
ওখানেই ডালাদি সাজিয়ে দেওয়া রীতি'।
কিসের ডালা ? কিসের মালা ?
আমি আনকোড়া নতুন --
যে যা বলেন, শুনতে হবে বৈকি !
একটি ছোকরা ছেলে ছিটকে এসে
সেরা ফলটি সরিয়ে নিলে আমার ।
আঁতকে বলি, একি !
ছেলেটি হাসে, বলে, জানেন না বুঝি ?
অর্ঘের প্রথম ভাগ যে ঠাকুরের হয়।
বলি, তাই তো ! একদমই মনে নেই আমার ।
ধীর পায়ে নাট মন্দিরে এসে আমি তো অবাক ,
ততক্ষণে ভক্তজনে ভরে গেছে হল -
গুরু মহারাজ এলেন ক্ষানিক বাদেই।
সৌম্যকান্তি, উজ্জ্বল বর্ণ, স্নিগ্ধ আলোর ছটা,
কথা যেন করুনার ক্ষীর --
যত দেখি ততই যেন উজ্জ্বলতর মূরতি --
অবাক বিষ্ময়ে দেখি মহামানবেরে।
আমাকে বললেন তিনি, 'বলো তিনবার'।
ভক্তি, আবেগ যেন সম্মোহনী শক্তি -
ক্রমে ক্রমে তিনবার উচ্চারণ করি --
তিনি বললেন, 'ওভাবে নয়, এইভাবে করো,
শুদ্ধ উচ্চারণ আর অটল বিশ্বাস
জেনো মন্ত্রের আসল শক্তি' ।
দুহাতে চরণ ধরি, বলি, প্রভু যদি ভুল হয় ?
আমাকে প্রশ্ন করেন মৃদু হাস্যেতে,
' অক্ষর জ্ঞান তোমার হয়েছে নিশ্চয়ই ?'
অহঙ্কার, অহঙ্কার,, শুধুই অহঙ্কার -
কাঁধ নেড়ে তক্ষুনি বলি, অবশ্যই প্রভু ।
' তবে আর কি ?'
হায় ঈশ্বর, বুঝিই নি তখন তিনি কি বলেছিলেন।
আজ তাই দীর্ঘ, দীর্ঘ বছর পর
এই মহান দিনে,
করজোড়ে প্রার্থনা করি তোমার চরণে,
হে গুরুদেব, --- দয়া করো, দয়া করো আমায় --
নাম নয়, ধাম নয়, অর্থ, যশ বিষ,
ষড়রিপু কালসাপ, আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে,
তুমি কি জানো না প্রভু ?
অধমেরে ক্ষমা করো,
জ্ঞানহীনে দাও অক্ষর জ্ঞান
হে অন্তরযামী যেন মোহ মুক্তি ঘটে ।
Comments
Post a Comment