লেখাটি Hridmajhare 💘 হৃদমাঝারে গ্রুপের একটি লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই গ্রুপের জন্যেই লিখেছিলাম। যেহেতু অনেক বন্ধুরা ওই গ্রুপে নেই তাই এখানে পোস্ট ।
আমার "তুমি" কে --
তোমার চিঠি পেলাম। আবেগঘন, অভিমানে ঠাসা। গতকালই পিয়নটি হাতে দিয়ে গেল। চিঠি খুলে বুঝতে পারি অনেক দেরী হয়ে গেছে। তুমি চলে গেছো এখানকার পাট চুকিয়ে ঠিকানা না রেখে। সত্যি, এত অভিমান !
চিঠিখানি বারকয়েক পড়েছি। ভেবেছিলাম সযত্নে রেখে দেব ডাইরীর ভাঁজে কোন একখানে, যেখানে যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছি তোমার সেই সময়কার পাঠানো চিঠিগুলো, আমাকে দেওয়া তোমার প্রথম উপহার -- লাল গোলাপ ফুল । কি উত্তেজনা ! ঐসময়ে লাল গোলাপে অসীম আবেগ জড়ানো থাকতো। আর হ্যাঁ, সাথে রেখেছি প্রথমবার দোলে পাঠানো রঙিন আবিরের প্যাকেট। তুমি হয়তো জানো না, এখনো পাতায় পাতায় সঞ্চিত সমস্ত স্মৃতি । সময়ে অসময়ে যার স্পর্শে আজও আমি আগের মতই উত্তাপ অনুভব করি। এখনো যদি কোনদিন একান্তে নিজের সম্মুখে বসি, যদি কখনো নিজেকে খুব একা একা লাগে, আলতো হাতে খুলে নিই তোমার খোলা চিঠিগুলো যা আমার একলা মনের সাথী, আমার বৃষ্টিবেলার মেঘ, আমার মেঘ বালিকা কবিতা। আমি জানি, যতই আড়ালে থাকো, তুমি আছো আজীবন আমার সাথে, এ আমার আজন্ম বিশ্বাস । ঠিক যেমনটি এই কদিন আগেও ছিলে আমার শয্যার পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো।
তোমাকে কতবার বলেছি, তুমি মানতে চাও নি কিছুতেই, সব নদী চাইলেও সাগরে মিশে না সব দিন সব তারা কি আকাশে ফোটে ? তুমি আমার শুধু বন্ধু নও, আমার সবকিছু -- জন্ম জন্মান্তরের । ছাদনাতলায় নিয়ে গিয়ে তাকে স্বীকৃতি দেবার প্রয়োজন কেন ? ভালবাসা সহস্র ধারার মতো, বিয়ে তাকে আশ্রয় দিতে পারে, বাঁধতে পারে কই। তুমি নিজেও তাই বিশ্বাস করো আমি জানি।
তুমি জানো না, আমার কাছে তুমি আমার দিঘীর জল । তোমাকে অঞ্জলীতে বাঁধি সে সামর্থ্য আমার কোথায় ? ঘড়ার জলতো নও যে নিত্যদিন তোমাকে ভাঙ্গি আর গড়ি নিজের মেজাজে। তোমাকে দূর থেকে দেখা যায়, অনুভব করা চলে, স্পর্শ করি, ভালবাসি, আবার তোমাতে অবগাহনও করা যায় ইচ্ছে মতন। তাই বলে ঘরে নিয়ে রাখি তেমন পাত্রতো আমি নই।
মনে পড়ে, দীপবলির ঠিক আগের রাতে তুমি আমাদের বাড়িতে আসতে সন্ধ্যের একটু আগে । দুজনে একসাথে মিলে "চৌদ্দবাতি" জ্বালাতাম ছাদে বড় একটা গামলায় । হাতজোড়়ে আশীর্বাদ চাইতাম, একসাথে, তোমার মনে পড়ে সব ? নির্জন ছাদে তখন তুমি আর আমি। তুমি সচেতন ভাবেই ঘোমটা টেনে নিতে, আমি দেখতাম। খুব সুন্দর দেখাতো তোমাকে । ছোট্ট ছোট্ট আলোর কি অপূর্ব নৃত্য, অবাক বিস্ময়ে দেখতাম আগুনের সেই মোহময়ী ক্ষমতা । একটা প্রদীপ থেকে আরো একটি প্রদীপে কি আশ্চর্য ভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে অথচ প্রত্যেকেরই সতন্ত্র অস্তিত্ব । ছোট্ট ছোট্ট আলোগুলো তোমাকে সেই রাতে আরো মোহময়ী করে দিত । আমি বিবশ হয়ে দেখতাম। আমাদের ভালবাসাও তেমনি অজান্তেই দীপ থেকে দীপে ছড়িয়ে গেছে।
জীবনে সব চাওয়া পূর্ণ হয় না। আমাদেরও তাই। আমার স্ত্রী সব বোঝে। তবু আমাকে খুব ভালবাসে। ওখানে তার কোন কার্পন্য নেই। আমার অতীত জেনেও। ওকে যত দেখি অবাক লাগে আমার। সব জেনেও কি করে এত আস্থা, বিশ্বাস রাখে, ওকে না দেখলে তুমি বুঝতে পারবে না। যখনই ভাবি সব বন্ধন কেটে বেরিয়ে আসি তখনই তার করুণ নিষ্পাপ মুখচ্ছবি নতুন করে পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেয়। আমি না চাইতেও বন্দি -- আমার পরিবারের কাছে, আমার সন্তানের কাছে, সমাজের কাছে, আমার দায়বদ্ধতার কাছে। এ আমার সেচ্ছাবন্দীত্ব । আমি চাইলেই আমার একটা সিদ্ধান্তে একটা পরিবারকে নিমেষে অনিশ্চিয়তায় ঠেলে দিতে পারি অথচ আমি তা হতে দিতে পারি না। এতটা স্বার্থপর আমি কি করে হই বল ? আমাকে বোঝায় চেষ্টা করো। আমার সব পেয়েও কোথায় যেন অভাব বোধ। এই কষ্ট একান্তই আমার । অবস্থাটা অনেকটাই " না ঘরকা না ঘাটকা" । যেমনটি আমি আমার স্ত্রীকে ছাড়তে পারিনা, তেমনি তোমাকে। তুমি বলবে, এ আমার শঠতা। আমি বলব, হয়তো তাই । তোমার আমার ভালবাসা ততটাই সত্যি যতটা আমাদের বিবাহিত জীবন। সে যদি আমার ঘরের ছাদ হয়, তুমি আমার মুক্ত আকাশ। ওখানে আমি নিশ্চিতে ঘুমুতে পারি, ঠিক যেমনটি তোমার মধ্যে আমি খুঁজে পাই বেঁচে থাকার মূল মন্ত্র। তোমার মধ্যেই আমার মুক্তির স্বাদ, আমার স্বাধীনতা। সে যদি হয় আমার বন্ধন, তুমি আমার মুক্তি। ওখানে আমি শান্ত, দায়িত্বশীল, এখানে চঞ্চল, দুর্বার, দুর্বিনীত। তুমি আমার বাঁধন ছাড়া বাউল মনের অচিন ঠিকানা। তোমরা দু'জন আছো তাইতো আমার জীবন পরিপূর্ণ। কাউকেই হারাতে পারিনা আমি যে কোন মূল্যেই।
প্রদীপে পবিত্রতা আর চাঁদে স্নিগ্ধতা, কেউ কারো পরিপূরক হতে পারে না। যদি ঘর বাঁধি তবে প্রদীপই চাই। আবার চাঁদ আছে তাই মুগ্ধতা, তাই জীবনে প্রেম, আমার অসংখ্য কবিতা। তুমি আমার চাঁদ, ঘরে তোমায় স্থান দিই ঈশ্বর আমাকে সেই ক্ষমতা দেননি।
চোখের আড়াল মানেই কিন্তু মনের আড়াল নয়, উল্টো মনকে শাস্তি দেওয়া বলে । যেখানেই থাকো, এই সত্যিটা জেনো। তুমি চাইলেই আমাকে ভুলতে পারবে, আমি বিশ্বাস করি না । তবু যদি সামনে থাকো মনে ভরসা পাই । কে জানে তুমি ছিলে বলেই হয়তো আমি এযাত্রায় মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে এলাম।
তোমার চিঠিটা আমার স্ত্রীর হাত ঘুরে এসেছে। যদিও খুলে দেখেনি আমি জানি ও সব জানে। এই চিঠিটা হয়তো লিখা হতো না, যদিনা সে দায়িত্ব নিত পৌঁছে দেয়ার। আমাদের মধ্যে কোনদিনই কোন আড়াল ছিল না সবটাই খোলা মেলা । ওর মনটা আকাশের চেয়েও বিশাল। তুমি ওকে ভুল বুঝতে যেও না। ওরই অনুরোধে তোমাকে এই খোলা চিঠি লিখা, নইলে এই শরীরে আমার সাধ্যি কোথায় তোমাকে আবারো খুঁজে পাই ।
সবশেষে তোমাকে সংসারী হতে বলি, সত্যি বলতে কি, এতটা উদার আমি নই ।হয়তো বা উল্টো আমার কপটতাই প্রকাশ পাবে তখন। শুধু অনুরোধ করি যত দিন বেঁচে আছি এমনি ভাবেই ভালবেসো আমায়, প্লিজ ---
ইতি
তোমারই
"আমি"
Comments
Post a Comment