মা

মা

পার্থ আমাকে একটি ফটো পাঠিয়েছিল কাল,
খুব চেনা ছবি, কোথায় যেন দেখেছিও
মনে পড়ছে না কিছুতেই।
তোবড়ানো গাল, অযত্ন আর বয়সের ভার,
কুঁচকে গেছে চামড়াগুলো, জৈষ্ঠ্যের মাঠ। 
চোখ দুটো ঘোলাটে তায় বোবা দৃষ্টি,
সৃষ্টি যেখানে ক্লান্ত হয়ে হারিয়েছে পথ,
তেমনটাই দৃষ্টি মহিলার।
চুলগুলো সাদা কালোয় বেখাপ্পা মিশ্রণ,
মেরুদন্ড বাঁকা, অনেকটা ধনুকের মত,
অপুষ্টি আর পরিশ্রমের স্বাক্ষর,
তবু শতছিন্ন আঁচল জুড়ে মায়ের স্নিগ্ধতা
যেন জন্ম জন্মান্তরের চেনা,
দেখা মাত্র আপন মনে হয়।
অনেক ভেবেছি কোথায় দেখেছি যেন,
কিছুতেই মনে পড়ছে না।
চাইলে আপনাকেও পাঠিয়ে দিতে পারি ছবি
কেউ হয়তো চিনতে পারেন, আশ্চর্য নয় মোটেই।

আমাদের একটি ওয়াটস‌আপ গ্রুপ আছে,
নাম "একতা"। ওতে অনেকেই আছেন
তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ,
সাধু থেকে রাজনীতিবিদ সবাই, কে নেই ?
ফটোটি তাই গ্রুপেই দিয়েছি
                        পাওয়ার সাথে সাথেই,
কেউ হয়তো বলতে পারবেন এই ভরসায়।

অনেকেই সাড়া দিয়েছেন, অনেকেই।
প্রথম রিপ্লাইটা রাজেশ দিয়েছিল।
রাজেশ,ছোটবেলার বন্ধু; আমলাগিরি করে,
ওর মতে ওটা নাকি আরতীর মায়ের ছবি ।
আরতী সেই যে পুণেতে জন্ম, 
                    এখন এই শহরেরই মেয়ে
এমে পাশ করে একটা এনজিও করে,
জীবের মধ্যে নিভু নিভু জীবনটাকে
বাঁচিয়ে রাখতে চায়। ফারুক বলেছিল ভুল,
শাহেদ বললে ওটা তো ফেরদৌসীর আম্মু।
একসময়ে লোকে বলে অনেক টাকা ছিল,
এখন সব খুঁইয়ে পথে পথে ভিক্ষে করে খায় ।
সাইড থেকে আমারও মনে হয়েছিল তাই,
জীতেন বললে, "কোনে কলে আপনাক,
ময় সিওর ক‌ইসু, এঁটো বন্দনা আই হয়।"
এখানেই শেষ নয়, নিকীতার‌ও আপত্তি আছে স্পষ্ট।
হরবিন্দর আর রাজিন্দর মনে হয় ভাই,
ভাই নয়। একজন বিহার অন্যজন পাঞ্জাব,
তবে এক জায়গাতে সহমত,
                            ওটা বন্দনা আই নয়।
পুনম, স‌ইদুল্লা, মহাদেবন, হেমন্ত মহাপাত্র
সবাই বলছিল, তবে মিলছে না মত,
বিবেকটা অনেকক্ষণ সীন করছিল সব,
খুব একটা খিস্তি দিলে প্রথম,
তারপর লিখলে," ভালো করে দেখ গাধার দল,
ওই চোখ, ওই ঠোঁট, গাল, কপাল চুল --
এত কিছু দেখেও চিনতে পারিস না মাকে ?
ওটা মায়ের ছবি রে, তোর, আমার নিকীতার,
হরবিন্দর আর রাজিন্দরের। হামিদের‌ও মা।
ভালো করে দেখ 'ভাই', 
    এটা আমাদের মা, ভারতী মায়ের ছবি।
তোদের কাছে যা আছে সব রঙ চড়িয়ে তোলা
এটাই মায়ের আসল রূপ, 
              দেখ চিনতে পারিস কিনা।"

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments