আয়না

সকাল বেলা ভোরের আলো ফুটতেই
সাঁজি হাতে যারা ফুল তুলতে যান --
আমার আধঘুম চোখে ওদের 
                                    কসাই মনে হয়।
মনে হয় একদল দস্যু জোর করে
টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ঘরের লক্ষীকে
আর গাছগুলো মাথা ঝাঁকিয়ে চিৎকার করে
ক্রমাগত প্রতিবাদ জানায়,
তবু ভেঙ্গে পড়তে পারে না
                   ওদের ঘাড়ে কিংবা মাথায়,
প্রাচীন সংস্কার বা নিস্ফলা আক্রোশে।

ময়রা পাড়ার সেই বিচ্ছু ছোকরাটা
আমার একদমই পছন্দ নয়।
মায়াবী একটা দৃষ্টি, সবসময়ই দুঃখী ভাব,
পেট পুরে খেতে পায় না হয়তো।
শোকেসে থরে থরে রকমারি মিষ্টি
হাতে কাজ না থাকলে তাই দেখে একমনে,
চোখে অতৃপ্ত ইচ্ছা, কিন্তু হাত দেয় না ভয়ে।
রক্ত জল করে দোকানটাতে কাজ করে
অথচ রক্ত গরম করে একটা পুরতে পারে না মুখে,
এই ছেলেটি আমার একেবারেই নাপসন্দ ।

কবিতা লিখা আমার রোজকার অভ্যাস
ভেতরের আগুনটা জ্বালিয়ে রাখার জন্য
একটার পর একটা কবিতা লিখেই চলেছি,
চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি কিংবা ফেরীঘাটে স্টীমারের মতো।
কিন্তু পোস্ট দিই না কখনো, 
                             ভুল বোঝাবুঝির ভয়।

জমিদার বাড়িতে বৌটার শুনেছি অনেক জ্বালা
স্বামীটা না মর্দ, শ্বশুর তাই ভর দুপুরে
ডেকে এনে দরজায় খিল দেয়।
মেয়েটির ডাবল কষ্ট, কিন্তু চাপা ।
রান্নাঘরে যখন ধারালো বঁটি দিয়ে
একটার পর একটা মাছ কোটে
তার দু'চোখ তখন ঝাপসা অন্ধকার।
হাঁটু দুটো বুকে চেপে দুঃখ চাপতে চায়,
কিন্তু নিমেষে শুন্যে তুলে নিতে পারে না
মাছ কোটার ধারালো বঁটিটি,
হয়তোবা প্রাচীন সংস্কার বা অঙ্কুরটির ভয়ে ।

আজকাল মাঝে মাঝেই আমার ভুল হয়
নিস্পাপ ওই ফুল, আমার কবিতা,
বিচ্চু ছেলেটি বা যুবতী বৌকে
আমরা নিজের মধ্যে দেখি । আবার
আয়নার সামনে দাঁড়ালেই ---, না থাক,
সেই সৎ সাহস আমার নেই অনেকদিন।



Comments