গরম ভাত

আরো একটা লকডাউন শুরু,
আবারও ঘ্যানঘ্যানে ঘরবন্দি জীবন ।
দেহে, মনে, মগজে অচেনা ভাইরাস।
তাই মুখে, মস্তিস্কে, চলনে, বলনে সর্বত্র
এক একটা এন-নাইন্টিফাইভ মাস্ক ।
ঘেন্না ধরে গেছে নিজের উপর।

আদ্যিবুড়ি রিক্সাটা চলছিল না ইদানিং,
মেরামতি আর ভাড়া দিয়ে পরিশ্রমটাই সার,
অনেক ভেবে ধার কর্জে তাই টটোটি কেনা।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়,
ডিসেম্বরেই মাসিক কিস্তিতে প্রথম
ঠিক তারপরেতেই অতিমারীর খেলা।
এখন টোটো চলছে না আর রাস্তায়
গ্যারেজ ঘরে চাদর টেনে ঘুমে
লাভের মধ্যে কর্জটা আটকে গেছে গলায় 
শ্বাসনালীর ঠিক পাশেই, গলার মধ্যিখানে।
একটুখানি এদিক ওদিক হলে
কাঁটার মত খচখচিয়ে ওঠে,
             রক্ত ঝরে মাঝে মধ্যিখানে
ছোট্ট হলেও দগদগে আর পাকা ।
লোকে বলে এটাই নাকি জীবন !
নষ্ট ডালে ঘটা করে ফোড়ণ !

আমাদের আছেটা কি বর্ণহীন জীবনে 
হাড় ভাঙ্গা খাটুনির শেষে পঁচা ভাতের চোলাই
কিংবা মশারীর ঘেরাটোপে মস্ত করে কুস্তি।
আজকাল এসবেও লকডাউন টানা,
মা ষষ্টির অসীম দয়া যে।
কত বলি বৌটাকে, সরকার কতকিছু দেয়
কিছু একটা কর‌, শালী ভয়ে থাকে সিঁটিয়ে,
বলে একটা ছেলে হোক, তারপর।
ওই শুকনো বুকদুটোর কি ভয়ংকর তেজ
একটার পর একটা জন্ম দিয়ে যাচ্ছে,
কিন্তু মরতে দিচ্ছে না একটাকেও।
যুদ্ধ করে নিজের সাথে, বেঁচে আছি আমি
গলা টিপে কিছুতেই মারতে পারি না,
মায়ার সংসার যে, শখের উনুনে গড়া।

গতকাল সারারাত ঘুম আসেনি চোখে
শেষ যে কয়েকমুঠো চাল ছিল ঘরে
তাতে পরশু রাত সেদ্ধ ভাত খেয়েছি
গতকাল দুপুরে শুধু কুড়িয়ে আনা কচুমুখী
সাথে কাঁঠাল বীচি সেদ্ধ,
রাতে কুয়ো থেকে তুলে এনেছি জল।
বাচ্চাগুলো  সোনার টুকরো যেন
বয়েসের তুলনায় অনেক বেশি বড়,
আমাকে বললে, গ্যাস হয়েছে ভীষণ
রাতে কিছু না খাওয়াটাই ঠিক।
আমি কি এতটাই মূর্খ, বুঝি না কিছু ?
বাড়ি ভাড়া তিন মাস হয় বাকি,
এভাবে আর কতদিন ?  জানি না।
দয়ার সাগর কেও আজকাল আমার
কিপটে মনে হয়, বাড়িওয়ালা তো মানুষ !
প্রাণে বেঁচে আছি -- এটাই সত্যি, 
বেঁচে আছি কিনা জানিনা।

মেরুদন্ডটি বাঁকাতে গিয়ে আধখানা চাঁদ
তবু ভাঙ্গব না, এই বিশ্বাস আমার আছে ।
আজ তাই জোর করে টোটো নিয়ে রাস্তায়।
লকডাউন, কোরোনা ভাইরাস, প্রশাসন, স্বয়ং ঈশ্বর‌ আমার কাছে হাস্যকর, তুচ্ছ,
আমি আর ভয় পাই না কিছুতেই
কোন শক্তি নেই আটকে রাখে আমায়
আর দশটার মত আমার বাচ্চার‌ও চাই 
একথালা গরম ভাত, হোক সে যে কোন মূল্যে।

সুপ্রদীপ দত্তরায়, কবিতা

Comments