মানুষ তো আর মানুষ রইল নারে
মানুষ তো আর মানুষ রইল নারে
ছ'ঘণ্টা টানা ছিলাম উঠানে পড়ে
ছুঁয়েও দেখে নি কেউ।
অবচেতনে ভেতরে ভেতরে
ছটফট করছি যন্ত্রণায়
বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট, ঘাম হচ্ছিল শরীরে।
অস্ফুট শব্দে বারবার
চিৎকার করে ডেকেছি ওগো শুনছো !
আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ
ঔষধ দাও, আমি বাঁচতে চাই।
একটা ডাক্তার কিংবা এম্ব্যুলেন্স
কিছু একটা ব্যবস্থা,
নইলে বাঁচবো না আর আমি
কেউ একজন এগিয়ে এসো প্লিজ।
দুর থেকে, তোমরা গোঙানিটাই শুনলে
কষ্টটা বুঝতে চাইলে না কেউ।
আমার অসহায় বৌটা, পাগলের মতো
একে ওকে ক্রমাগত ফোন করে চলেছে
ছুটে ছুটে ঘর বার --,
চিৎকার করে কাঁদছে, কখনো শাপ শাপান্ত --
ঠাকুরের আসনে ঠুকে ঠুকে কপাল
লাল হয়ে গেছে জায়গাটা,
তবু সাড়া দিচ্ছে না কেউ।
সবারই মৃত্যুভয় আছে যে, ভয়টাই বেশি।
আমি করোনা আক্রান্ত সন্দেহে,
বৌটাকে ছুঁতে দেয়নি আমাকে --
মৃত্যুপথযাত্রীকে একফোঁটা জল --
তাও দিলে না খেতে ।
কি জানি ছোঁয়া লেগে যায়।
আমি যে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জীব,
অছ্যূৎ, শতাব্দীর শাপগ্রস্থ মানুষ,
ঘৃণা তো আমারই প্রাপ্য।
এবারে ? এবারে মুক্ত আমি।
মৃত্যুর ওপারে দাঁড়িয়ে,
নির্মল আনন্দে দেখছি তোমাদের ।
এই যে এতলোকের অসহায় আচরণ,
লোক দেখানো সমবেদনা
আর বেঁচে থাকার তীব্র আকুলতা,
আমি দেখতে পাচ্ছি।
দোষ দিই না, সবটাই ভাগ্য লিখন।
শুধু যাবার পথে একটি কথা বলে যেতে চাই,
আমার যা হবার সেতো হয়ে গেছে
মুক্ত হয়ে গেছি সমস্ত যন্ত্রণা থেকে,
তোমাদের কি হবে ভবিষ্যতে?
কোরোনা আমাকে মুক্তি দিয়েছে,
তোমাদেরে অভিশাপ ;
বেঁচে থাকো ভাই সব, আতঙ্কে, অবিশ্বাসে
আর সন্দেহের বাতাবরণে,
মনুষ্যত্ব হীন মানব সমাজ।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment