গতকালই বৃষ্টি এসেছিল
হঠাৎ করেই ভর দুপুরে
আমি তখন ভাত ঘুমেতে ব্যস্ত
বৃষ্টি এলো আমার ঘরে
দমকা হাওয়ায় মতো।
মিনিট কুড়ি ছিল শুধু
তার বেশি নয়
তার মধ্যেই অনেক কান্ড
রাগ অনুরাগ, মান অভিমান
নাটক অভিনয়।
আমার সাথে বৃষ্টি ?
সেই আদ্যিকালের পরিচিতি
শ্যামলী তখনও আসেনি আমার
জীবনসঙ্গী হয়ে
আমি ভবঘুরে
প্রেমের জন্ম হয়নি তখনও
বৃষ্টি ছিল আমার সেইসময়ের বন্ধু
আমার কুড়ি অবস্থায় প্রেম।
সেই বৃষ্টি, এলো আমার ঘরে
অনেকদিনের পর ।
আচমকাই, বন্ধ ঘরে, ভর দুপুরে।
শেষ যেবার বসেছিলাম মুখোমুখি দুজন
আমি তখন কালিম্পং এর লজে
একটা দিন আর গোটা একটা রাত্রি
আমরা ছিলাম একা, আমি আর বৃষ্টি
কখনো চায়ের কাপ হাতে
কখনো শয্যায়, আলিঙ্গনে
আবার কখনো বারান্দায়, রেলিংয়ে ভর দিয়ে
রবীন্দ্র সংগীতে
আমি আর বৃষ্টি,
ভেসে ছিলাম গোপন অভিসারে, সেও একবছর।
আজ আবার সেই বৃষ্টি এলো
দমকা হাওয়ায় চড়ে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, হঠাৎ ? তুই ?
-- কেন ? আসতে নেই বুঝি ?
আমি বলি, তা নয়, আচমকা কি মনে করে ?
- তোকে আমার ভীষণ মনে পড়ে !
আমি বলি, জানি তো, একদমই সত্যি,
আমারও যে তাই --;
বৃষ্টি হাসে সশব্দে, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে
বলে, তাই ? তাই বুঝি পালিয়ে এলি
কালিম্পং থেকে ?
আমি বলি, পালিয়ে নয়, পালিয়ে নয়,
এসেছি সংসারের দায়ে।
বৃষ্টি আসে আমার কাছে
ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকের পরে
বুকে নিয়ে হাপরের হাওয়া
বলে, তোমার জন্যে কবিতা এসেছি গো -- ।
আমার বুকে জ্বলছে তখন
বাগজানের ঐ আগুন
ঘরে কৃষ্ণচূড়া ফাগুন
উষ্ণতায় উষ্ণতর-- অনেক কষ্টে বলি
-- বৃষ্টি, আমি যে বিবাহিত ।
বৃষ্টি হাসে ঢেউ তুলে,
তার বুক হাসে, আর ঠোঁট হাসে,
তার ওষ্ঠে, চিবুকে, নাভিমূলে সমুদ্রের ঢেউ,
বলে, আমি কি নই ?
আমরা তখন হারিয়ে যাচ্ছি কোথায় ?আটলান্টিক পাড় ? আমাজান জঙ্গল ?
নাকি সোঁদরবনে সোঁদা পানির স্রোতে ?
হয়তো পদ্মানদীর পানসী নৌকার ছইএ।
সেখানে মুক্তো ভান্ডার থেকে শেষ মুক্তো কুড়িয়ে
চোখে ভাসে আচমকাই সংসার, পরিবার --
বলি, বৃষ্টি কি হলো এই?
আমি যে সংসারী, পরিবার নিয়ে আছি ।
--- আমার কি নেই ?
-- যদি তাই তবে কেন ফিরে ফিরে আসিস ?
বারবার কেন বল জার--জারিনী সাজা ?
বৃষ্টি, তুই বোঝার চেষ্টা কর।
একটা দীর্ঘ নীরবতার পর
বৃষ্টি হাসে করুন সুরে, ঝাপসা দৃষ্টি তার
বলে, বন্ধু, বন্ধন বড় শক্ত জানিস,
রক্তাক্ত হৃদয়ে তাই আসি বারবার
ফিরে পেতে গচ্ছিত ধন, নিঃস্বার্থ প্রেম
তোরই অলিন্দে --
ভালবাসার কাঙাল কে নয় বল ?
যদি পারিস, ক্ষমা করে দিস,
বন্ধু --- বিদায় !
যেতে যেতে বলে যায়,
যদি ঈশান কোনে দেখিস, কালো মেঘের সাজ
দরজায় খিল দিস বন্ধু
অসাবধানে যদি হয় দৃষ্টি বিনিময়
অচেনার ভান করে কেটে পড়িস তুই
ভালবাসার চেয়ে ভালো থাকা
অনেকখানি জরুরী,
ভুল যেন আর না হয় তোর।
সুখে থাকিস বন্ধু, সুখী হ, তুই, তোর পরিবার।
বৃষ্টি আমার ফিরে গেল
ঝাপসা করে ঘরের আলো
ফুলদানিটা, কুশনটাকে ছুড়ে ফেলে
ব্যালকনি আর শোবার ঘরে উলোট পালোট --
আমার লেখা শেষ কবিতা
হাওয়ায় স্রোতে উড়িয়ে নিয়ে বৃষ্টি গেল চলে।
শুন্য ঘরে, বিবশ আমি, বিবর্ণ বিষ্ময়ে --
চাদর জুড়ে বাসর বেলার
স্মৃতি রইলে আঁকা।
বৃষ্টি আমার চলে গেছে, এখন আমি একা।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment