বন্ধু করোনা

বন্ধু কোরোনা

তোমায় যদি সত্যি কথাটা বলি, 
করোনাই আমার আসল বন্ধু আজ, 
চমকে উঠবে জানি ।
নিমেষেই শহর জুড়ে উঠবে ভীষণ ঝড়।
তর্জনে গর্জনে ভরবে ফেসবুকের পাতা 
লকডাউনে এতদিন ঘরবন্দি যারা
পঞ্চব্যঞ্জন আফিংখোর সব
মুহূর্তেই একঝটকায় সোজা, 
এই দুর্দিনে লটারি পাওয়া যে ! 
এতদিনে বিষয় পেলেন এবার ।
বলবেন, লোকটা পাগল হলো নাকি ?
বিশ্ব জুড়ে হাহাকার, ত্রিশ লক্ষ রুগী, 
মৃত্যুফলক দুই লক্ষাধিক
এইসময়ে করোনাকে বন্ধু বলা যায় ? 
পাগল, বদ্ধ পাগল --,
লকডাউনে হায়রে লোকটা পাগল হলো এবার ।

বন্ধু,  আমি সত্যি পাগল, 
পাগলরাই জেনে রাখুন নিজের ভালো বোঝে।
যে লোকটার মৃত্যু হল ইতালি বা ফ্রান্সে, 
ওর জন্যে দুঃখ হয় জানি, আমারও বুক কাঁদে,  
 তবু বলি, যে যাই বলুক রাগে ক্ষোভে, দুঃখে
 করোনা আমার বন্ধু, আমার মিত্র 
এই বললাম তিন রাস্তার মুখে,  
এবার যার যা খুশি বলতে পারে আমায়।
বলি নাইবা কেন ? 
বিবেক বিচার নিরপেক্ষ হয়। 
এই যে লকডাউন নিয়ে এতো এতো ভয়
আমি জানি, ওর জন্যেই আকাশ পরিষ্কার ;
বাতাস স্বচ্ছ,  সুস্থ আছি সবাই। 
এ আমার নতুন আবিষ্কার।
ওর জন্যেই আমরা আবার একান্নবর্তি পরিবার।
যে দাদারা, খোঁজ নিতেন না আগে, 
দেখা হলে চোখ মেলাতে ভয়, 
আজ তারা সব খবর নেয়, 
রোজই পাঠায় এটা ওটা খাবার ।
দেখা হলে কথা কয়,  কথা নেই তবু তৈরি হয়, 
একসাথে আড্ডা দিয়ে খাচ্ছি জলখাবার । 
কম কথা ?
কেউ জানো না, সে আমার অনেকদিনের কষ্ট
আমার হৃৎপিণ্ডের কাঁটা।
কি করে করি মিথ্যাচার।

এখন আমি অনেক কিছু জানি, 
ফুলের গন্ধ কেমন হয়, ঘরের খাবার সুস্বাদু হয়, 
ঘর মানে কি কমন ছাদ ? কক্ষনো নয় । 
লকডাউনেই নিচ্ছি এসব পাঠ।
এখন আমি রাঁধতে পারি,
ঝোপঝাড় সব ঝাড়তে পারি,
চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে, 
অনেকটা সুখ কিনতে পারি,
ছোট্ট ছোট্ট মোচড়েতেই ফিরছে মুসকান ।
কম কথা? 
এখন আর ঝগড়া হয় না, 
কথায় কথায় বন্ধ হয় না কথা 
একটা টিভিই ভাগ করে নেই দুজন ।
এখন আমি ফোন করি, মা মাসীমার খবর রাখি
কাজের দিদি, ড্রাইভার, অফিস পিয়ন, তরফদার,
খবর রাখি বিশু পাগলা এখন আছে কোথায়,
টেলিফোনে ভরসা দিই, বেঁচে থাকার রসদ দিই,
সরল মনে হাত বাড়াই, তুচ্ছ তঞ্চকতা।
জীবনটাই আজ পাল্টে গেছে, একটি ঘটনায়।
সবটাই সৌজন্যে বন্ধু নোবেল কোরোনা।
তাই না ?

করোনা, "তুমি বেঁচে থাকো "বলবো না, 
"আবার এসো" ? কক্ষনো না ।
তবে যে পাঠ তুমি শিখিয়ে গেলে,
যতদিন বেঁচে থাকবো, কথা দিলাম ভুলবো না ।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments