অন্য ঠিকানা

অন্য ঠিকানা

গতবছর কোন একদিন
একটা চাঁদ সন্ধ্যাকে জন্ম দিয়েছিল,
ব্রিটেনিয়া কেক কেটে তাই, এই উৎসব।
মল্লিকা বলছিল রেশমীদের ডেকে
আকাশের মন নাকি ভালো নেইকো।
একঝাঁক চিন্তা দুঃস্বপ্নের মতো,
অভাব, অনিশ্চিয়তা আর অক্ষমতার কোলাজ।
লকডাউনে আজ ঠিক একত্রিশ দিন
সঞ্চয় এযাবৎ যা, হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস
গরীবের ঘরেই  জন্ম নেয় বেজন্মার বাচ্চারা,
যদি ওরা জানতে পেতো কোনদিন,
আরো একটা খুন হতো আমার বিশ্বাস।

যেখানে সূর্য ওঠে, সেই শহর জুড়ে  অদ্ভুত মেলা
থলে হাতে রাস্তায় হাভাতে, ভরপেটদের দল
একটা কুকুর সারাদিন ডাস্টবিন খুঁজছে
ব্লিচিং আর সেনিটাইজারে এখন শহর জঙ্গল।
খোলাবাজার এখন অশৌচ চলছে, 
যাদের পকেট দরাজ, তাদের উৎসবি মেজাজ
ভীড় করছে, গলি, বেসমেন্ট বা ঠেলায়
কেউ অসহায়, দরজায় কড়া নাড়ে শুধু,
পাথরে মাথা ঠোকে, গর্জায়, তবে সবটাই নীরবে।

গঙ্গাধরের সুখ এখন অসুখ বলা যায়
প্রায়শই দাঁড়ি কাটতে ইচ্ছে জাগে না।
চুরুটে অরুচি, ঘুমের ওষুধ বেকম্মার হাঁড়ি।
চেষ্টা করেও ঘুম আসে না চোখে।
গেটে দাঁড়িয়ে  দেশ বিদেশের গল্প
এখন সব বন্ধ।
কেউ যেচে এলে, ছলছল চোখে বলেন, 
বাবারে, পুলাডার জন্য একটু প্রার্থণা কইরো,
ঈশ্বর যে এত নিষ্ঠুর হইবো বিশ্বাস হ‌ইতাছে না।

বসন্তের দিন এবার শেষ ,
শেষ সিগারেটটাও খতম ,  একঘন্টা প্রায়
এখন থেকে বিড়ি খাওয়াও বন্ধ করা উচিত,
গরীবের বিলাসিতা আর বেশ্যার সতী সাজা
শালা সমান অপরাধ।
সান্যাল বলছিল আর লোক চাই না ওদের
কাপড়ের মল, কবে খুলবে বলা খুবই দুষ্কর।
এক বুক শুষ্ক জৈষ্ঠ্য নিয়ে মলি বলছিল কাল,
দেখো, একটু দুধ যদি জোগাড় করতে পারো ---
বাচ্চাটা বাঁচবে তো আমার !

শরৎ আর হেমন্ত গিয়েছিল, দাঁড়িয়েছিল লাইনে
বাপ ঠাকুরদা কোনদিন হাত পাতেনি কোথাও,
একটা ব্যাজ লাগানো ছোকরা, ধমক দিলে,
বললে, ধান্ধা করার জায়গা পাসনি তোরা ?
গরীবের মুখের গ্রাস কেড়ে খেতে চাস ?
লজ্জায় মুখে কিছু বললে না কেউ।
পথ এসে পা ছোঁয়, 
বলে চল যাই অন্য ঠিকানায়।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments