শঙ্খচূড় ও সেই মেয়েটি
আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনে
যে দিঘীটি ছিল,
তারই কোন এক পাড়ে, এক ঝোপের আড়ালে
শঙ্খচূড়ের বাস।
সাপটির মাথায় ছিল এক উজ্জ্বল মনি।
ছোট্ট হলেও খুব একটা ছোট্ট নয়।
উজ্জ্বল, নির্মল, স্বচ্ছতার খনি।
যেদিক দিয়ে যেতো, আলো হয়ে যেত জায়গাটা।
খুব একটা লোকালয়ে আসতে দেখিনি তাঁকে।
কে বা কারা দেখেছে জানিনা,
তবে আমি দেখেছি তাকে খুব কাছে থেকে।
বড় নিরীহ আর ভীষণ একা।
মানুষ থেকে সে অনেক দুরে থাকে।
মানুষগুলো সব মানুষ কিনা
লোকালয়ে এলে তাঁকে লাঠি ছুড়ে লোকে,
কেন --------?
কেউ তার বিষকে ভয় পায়, কেউ মনির লালসায়।
ঐ মেয়েটিকেও আমি চিনি,
শ্যামলা বরণ, মিষ্টি গড়ন,
অনেকটা সেই দূর্গা প্রতিমার মতো
মুখের দিকে তাকালে, মায়া জাগে মনে।
আমি তাকে দেখেছি অনেকবার
অনেকখানে।
যখন একা থাকে, একদমই একা,
আপন মনে হাসে, যেন জলতরঙ্গ ভাসে।
যদি কেউ দেখে ফেলে, লজ্জা পায়
পলকে অদৃশ্য হয় চোখের নিমেষে।
ভারী মিষ্টি মেয়ে সে, তবে প্রচন্ড একরোখা,
যত বড় খোঁপা নয়, ততোধিক চোপা।
মানুষ দেখলে যেন মুখরা হয়ে যায়
ভাল করে কথাই বলে না,
কেউ যদি গায়ে পরে পীরিত করতে চায়
তার সে খোলস রাখে না।
একদিন একান্তে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাকে
এই তুই এমন কেন রে ?
সে বলেছিল বিশ্রীভাবে, তাতে তোর কি বে ?
আমি অবাক হয়েছিলাম শুনে ,
একটা মিষ্টি মেয়ে, সে কিনা ওমন করে বলে।
লোকে বলে মেয়েটি ভাল নয়, ভীষণ মুখরা
এখন বুঝি এই মুখোশটি তার ইচ্ছে করেই ধরা,
নিজেকে আড়াল করতে লোকের থেকে
লোকের ভিতর সুপ্ত থাকা ইচ্ছে থেকে
মুখোশ পরা কুটুম গুলোর কামড় থেকে
শরীরটাকে বাঁচিয়ে রাখা।
ভেতর থেকে মেয়েটি কিন্তু একটা নিষ্পাপ কমল
আর ভীষণ ভাবে একা।
আসলে শঙ্খচূড় আর ওই মেয়েটি
দুজনেই কিন্তু অভিশপ্ত
একজনের অভিশাপ মাথার চূড়ামনি
অন্যজনের, যৌবন পর্যাপ্ত।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment