গিউলিয়া

গিউলিয়া

আজ তোমাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে গিউলিয়া,
ঘরে বাজার সামগ্রী সব ঠিকঠাক তো ?
তোমাকে এককাপ কফি বানিয়ে দিই ?
সকালে ব্রেকফাস্ট নিশ্চয়ই হয়নি এখনো ?
কি খাবে বলো ? বাটার টোস্ট ?
কিংবা বয়েল্ড এগ, সাথে প্লেন রুটি ?
কিছু না খেলে যে অসুস্থ হবে তুমি ।
চলো, একটু ব্যালকোনিতে বসি ।
গাছগুলো দেখো কেমন মিইয়ে আছে, 
আজ সকালে জল দাও নি বুঝি ?
দেবে একটু জল ?

ওমন করে বসে থেকো না প্লিজ,
ঘুম হয়েছে তোমার ?
রোজ বলি রাতে ঘুমের আগে
মনে করে ঘুমের বড়িটা খেয়ো ,
কি ? খেয়েছিলে ? তবু ঘুম হয়নি সারারাত ?
কি মুস্কিল ! এই লকডাইনে ডাক্তার কোথায় পাই ?
কতবার বলেছি টিভিতে ছাইপাশ সব দেখো না,
সব খবর সত্যি হয়না কখনো।
টিভির লোকেরা অনেকসময়ই অর্ধসত্য বলে।

কি হলো ? ছেলের জন্য মন খারাপ হচ্ছে ?
ওদের জন্যে ভেবো না, ওরা ভালো আছে গো।
তাছাড়া তুমি কি করবে বলতো ?
তুমি আমি তো কিছু করতে পারি না 
শুধু ভাবনা ছাড়া।
এখন ইতালিতে ভীষণ কড়াকড়ি,
ইচ্ছে করলেই ছুটে যেতে পারবোনা কেউ।
নিজের কথা ভাবো, তোমার হার্টের অসুখ,
ওদের কথা ভেবে ভেবে অসুস্থ হয়ো না প্লিজ।

একি কাঁদছো তুমি ? গিউলিয়া ? তুমি কাঁদছো ?
খবরটা তাহলে পেয়েই গেছো এতক্ষণে,
আমি তোমাকে ইচ্ছে করে বলিনি গিউলিয়া,
আমাদের একমাত্র ছেলে আর ছেলের বৌ আইসিইউতে,
নাতনি কোয়ারেন্টাইনে।
গিউলিয়া আমাদের একমাত্র সন্তান !
তুমি ঠিকই শুনতে পেয়েছো গিউলিয়া ।
কার পাপ কে শাস্তি পায় হে ঈশ্বর !
কেঁদো না, কেঁদো না, মন শক্ত করো ।
এখন আমাদের কাতর হবার সময় নয়,
দেখো আমি পাথর হয়ে গেছি।
কেঁদে কি লাভ বলো ?
ছেলেকে বিদ্যা দিয়েছি, বুদ্ধি দিয়েছি,
বিপদে কি করে স্থির থাকতে হয়,
সেই শিক্ষাও দিয়েছি,
কিন্তু মৃত্যু এলে কি করে শিকল টানতে হয়,
আমিতো সেই বিদ্যা জানি না গিউলিয়া।
সেই বিদ্যা তো কেউ শেখায়নি আমাকে।

বেশ, তবে তাই হোক, কাঁদো,
আরো কাঁদো, আরো কাঁদো,
কেঁদে কেঁদে চোখের জলে ভাসুক 
তোমার বুকটা একটু হালকা হোক ।
একটু হালকা হোক,
তারপর তোমার আমার চোখের জলে
যখন পৃথিবীর সমস্ত পাপ ধুয়ে মুছে যাবে
তখন এসো গিউলিয়া, সবাই মিলে প্রার্থনা করি,
হে ঈশ্বর,যা ক্ষতি, সেতো হয়ে গেছে,
আর যেন কারো কোল খালি না হয়।
তুমি একটু দেখো ঈশ্বর।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments