ঝড়
আজ হঠাৎই, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বিনা নোটিশে আকাশ কালো হয়ে এলো। স্মৃতিকণা একঝলক তাকিয়েই বুঝতে পারলেন ঝড়ের সম্ভবনা প্রবল। সবটাই অভিজ্ঞতা। পাশে সুখেন্দু ভাতঘুমে। আজ দু'বছর প্রায় পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। নেহাতই ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত, মা লক্ষ্মীর অচল অবস্থান, তাই এই যাত্রায় বেঁচে গেছেন। তবে এখনো পুরোপুরি নিরাপদ নন।
একটা মেয়ে সারাদিন থেকে নার্সিং করে রাতে বাড়ি ফিরে যায়। এখন লকডাউনে সব বন্ধ, তাই আসতে পারছে না। ছেলে মেয়েরাই খরচাপাতি দেয়, একজন বোষ্টন, একজন নরওয়ে থেকে ফোনে খবরাখবর রাখে। দুজনেই যে সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। এখানে স্মৃতিকণাকে একা হাতেই এদিকটা সামলাতে হয়।
এই মুহূর্তে উনি বই পড়ছিলেন বিছানায় বসে বসে। দুপুরের অবসরটুকু উনি বই পড়ে কাটান। অনেকদিনের অভ্যাস। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই অদ্ভুত ভালো লাগায় মন ভরে উঠলো। ঝড়েরও একটা নিজস্ব সম্মোহনী শক্তি আছে। যখন সে ধেয়ে আসে, অপূর্ব তার রূপ। চোখ জুড়িয়ে যায়। হাতের বইটা বুকমার্কে চাপা দিয়ে খোলা জানালায় অবাক চোখে ঝড়ের তান্ডব দেখতে লাগলেন স্মৃতিকণা । হঠাৎই খেয়াল হলো এই মুহূর্তে জানালা দরজা বন্ধ না করলে তছনছ হয়ে যাবে সব। তক্ষুণি উঠে যাচ্ছিলেন তিনি, ঠিক সময়ে বেজে উঠলো মুঠোফোন। এইসময়ে সাধারণত পুরবী, সন্ধ্যা বা মাসতুতো বোন অনিন্দিতা ফোন করে থাকে। ভালোমন্দ খোঁজ খবর নেয়। স্মৃতিকণা একবার ভাবলেন, দরজা জানালা বন্ধ করে এসেই স্বস্তিতে ফোনটা ধরবেন। আবার কি মনে হতেই ফোনটা হাতে তুলে নিতেই অবাক। বোষ্টন থেকে বাবুর ফোন।
--- হ্যালো ? ..... হ্যাঁ বাবা বল, হঠাৎ এতরাতে .... হ্যাঁ, আমরা তো ভালোই আছি। তোরা ? ..... কি বললি ? ওমা সেকি ! কি বলছিস সব বাজে কথা .....হে ঠাকুর......।
বাকি কথাগুলো আর শোনা হলো না। বাইরে বিশাল শব্দ করে একটা বাজ পড়লো যেন। স্মৃতিকণার সমস্ত শরীর হঠাৎই শিথিল হয়ে আসছে। কোনভাবে দরজা পাল্লা ধরে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলেন উনি। ধীরে ধীরে পাশের ডিভাইনে বসে পড়লেন নিজের অজান্তেই। ফোনটা কখন কান থেকে সরে গেছে কিছুই খেয়াল নেই। খবরটা একবার সুখেন্দুকে জানানো উচিত এক্ষুনি। আফ্টারঅল বাবাতো। কিন্তু ওর শরীর কি পারমিট করবে এই অবস্থায় ? মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। বুকে একটা অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করছেন স্মৃতিকণা। চোখ দুটো ঝাঁপসা হয়ে আসছে। এখনই বৃষ্টি এলো বুঝি। দরজা জানালা গুলো খোলা। বন্ধ করার তাগিদটাই হারিয়ে গেছে এখন।
বিধংসী ঝড় তখনই শিলাবৃষ্টি সহ প্রচন্ড আক্রোশে আছড়ে পড়লো পৃথিবীর বুকে।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment