মহাপ্রস্থান

মহাপ্রস্থান

পিচ্ছিল পথ, জমাট বাঁধা অন্ধকার
যারা চলেছি, পথ চিনি না কেউ
প্রতিটি বাঁকে খুঁজতে হচ্ছে পথের দিশা।
কুপিতে আলো কম, দীর্ঘ পথ
সহযাত্রী যারা, তারা ক্লান্ত, শ্রান্ত দিশাহারা।
একটা অজানা ভয় পথ আটকে দাঁড়ানো।
দুটো পা, শিকল বেঁধে রাখা।
"কে যাবে প্রথম, আছো কেউ ক্ষুদিরাম ?"
জিজ্ঞাসে কান্ডারী।
কিছু লোক ত্রস্ত পায়ে আসে, প্রথম সারিতে,
 কে ওরা ? কে যেন ফিসফিসিয়ে বলে,
"ভাগ্যিস কিছু কসাই ছিল দলে।"
সাথে সাথে সিপাহী বরকন্দাজ যত
বলে, মাভৈ, ভয় নাই আর, চল এগিয়ে চল।
জয় নিশ্চয়ই।
দুপাশে মৃতের সারি, বাতাসে ক্রন্দন,
কাঁধে ভর দিয়ে চলে অগুনিত দ্বিপদ,
বৃদ্ধ, শিশু, কিছু শয্যা শায়িত,
শ্বাস রুদ্ধ হয় শোক পাথরে,
ঘিয়ের বাতিতে আলো বন্ধ দেবালয়।
হঠাৎই পিছন থেকে চিৎকারে কেউ
"কে আছো বিধর্মী এই মহাপ্রস্থান পথে ?
তফাৎ যাও ! তফাৎ যাও এইক্ষণ !"
অবাঞ্চিত দুটো লাশ পথ আগলে দাঁড়ায়,
উলুধ্বনি শোনা যায় ক্রন্দন সুরে।
বাদুড়ের অট্টহাস্যে বিব্রত পেঁচক।
ক্রমশ তেল এসে তলানিতে ঠেকে।

দুরে কোথাও পৃথিবীর প্রাচীনতম বটবৃক্ষ তলে
সমস্ত প্রজাতির যূথবদ্ধ পশুপক্ষী সব
করজোড়ে প্রার্থণা করে, হে ঈশ্বর ‌,
ক্ষমা করে দিও, ক্ষমা করে দিও
এই হুঁশহীন মানুষ প্রজাতিকে। 
বড় কষ্ট, বড় কষ্টে আছে ওরা,
এখনো ওদের মধ্যে শুভ বিদ্যমান,
ক্ষমা করে দিও প্রভু, শেষবারের মত
এই মানুষ প্রজাতিকে।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments