বন্দী


তোমরা ভালো আছো তো স্বদেশ ?
আজ চারদিন, সবাই ঘরবন্দি, 
কি এক মারণ ব্যাধি এলো
সব হিসেবটাকে এলোমেলো করে
আবারো প্রমাণিত হলো, আমরা কত অসহায়।
সত্যি কিনা বল ?

রাত্রি আটটায় প্রথম যখন ঘোষণাটি শুনলাম,
তখনই জানি, বিপদ এখনো অনেকখানি বাকি।
তুমি কি বাড়ি পৌঁছে গেছিলে তখন ?
তুমি আর শাখী ?
শাহন‌ওয়াজ ফোন করেছিল গতকাল
ওর বাবার নাকি শ্বাসের ব্যারাম, খুব কষ্ট,
গতকালই বেড়িয়ে ছিল ঔষধ কিনবে বলে,
নিজে যে বাইক চালানো জানে না
মজিদকে নিয়েছিল সাথে। কেনা আর হলো কোথায় ,
রাস্তা আটকে দাঁড়ালো কিছু স্বেচ্ছাসেবী ছেলে,
বুঝতে চাইলে না ঔষধটা জরুরি ছিল ভীষণ,
ভেবো না দোষ দিচ্ছি কাউকে, 
দোষারোপের নেই কোন কারণ -
সবাইতো মৃত্যু আতঙ্কে ভুগছি আমরা।
তুমি কি কিছু করতে পারো স্বদেশ ?

আমার ড্রাইভার ছেলেটার বাচ্চা-- ভীষণ জ্বর,
বললাম হাসপাতালে নিয়ে যা, কিছু একটা কর ;
বুকে কফ জমে গেলে সমুহ বিপদ।
যেতে চাইলে না ভয়ে, কি জানি ডাক্তার কি বলে,
একটা ভয়, ভয়ংকর আতংকে ভুগছি জানো ,
কি করলে যে নিরাপদ থাকা যায়
আমরা কেউ তা জানি না এখনো।
সবসময় মুখে মাস্ক, বুকে ভয়, 
বাতিকগ্রস্তের মতো ক্রমাগত হাত ধোয়া,
আর পান থেকে যদি চূণ খসে ---, বিরক্ত হ‌ওয়া।
আসলে সবটাই যে ভয় আর হতাশার
বহিঃপ্রকাশ মাত্র।

কাজের মেয়েটি, সবিতাদি, তুমি দেখেছো অনেকবার
আমার এখানে কাজ করতো সে
উল্টো দিকের ফ্ল্যাটেই তার‌ বড় মেয়ে, 
এখন আর আসে নাকো তারা।
ফ্ল্যাট কমিটির নিষেধ আছে জারি
বাইরের লোকের ফ্ল্যাটে আস্তে মানা।
বেচারি সবিতাদি, চা পেটে বেড়িয়ে পরতো কাজে,
খাওয়া দাওয়া যা এখানেই হতো সব,
সাথে যাবার সময় সঙ্গে এটা ওটা।
এবার যে তার সব বন্ধ। ফোন করেছিলাম,
বললে, " ভালো নেই গো।" ভালো থাকবে কেন ?
ওর উপর‌ সংসার, ওই যদি ঘরে থাকে, 
ঘর চলে বলো ?

মনে পরে তোমরা খুব বলতে, অনেক তো হলো,
শরীরটাকে বিশ্রাম দিন এবার,
কিছুদিন ছুটি নিন, ঘরে থাকুন,ব‌ই পড়ুন,
ভালো লাগলে গান শুনুন
সব ভুলে কটা দিন --- শুধু পরিবার।
স্বদেশ, আমি এখন বাড়িতেই আছি।
কাজ ছেড়ে, রোজকার অভ্যেস ছেড়ে
এক অদ্ভুত জীবন যাপন।
পৃথিবী যখন ধ্বংসের দিকে ছুটে যাচ্ছে,
আমি তখন ঘরে বসে হাঁফিয়ে উঠেছি
আমি ---, আমি যে বড়ই অসহায়,
 কিছুই করতে পারছি না আজ।
টিভির সামনে বসতে পারি না,
খবরগুলো দৈত্যের মত হামলে পরে মনে।
টেলিফোন, ইন্টারনেট,, মোবাইলে
শুধুই ভয়ার্ত মুখ, আর মৃতের মিছিল,
আমি আর পারি না স্বদেশ।
বিশ্বাস করো, আমি আর পারি না।

স্টেশনের সেই ক্ষ্যাপা পাগলাটাকে দেখলাম আজ,
ছাদ থেকে দেখা যায়, এদিকটাতে এসেছিল।
সমস্ত রাস্তা সুনশান, মোড়ে মোড়ে পুলিশ,
পাখিরাও এই কদিনের হঠাৎ নিস্তব্ধতায় হতবাক।
ক্ষ্যাপা শুধু একা, চিৎকার করে হাঁটছিল রাস্তায়,
---" পাপ,পাপ,পাপে ছেয়ে গেছে দুনিয়া---
খা, খা, কত খাবি, মানুষের রক্ত খা ---
খেয়ে খেয়ে তোরা নির্বংশ হয়ে যা সব ---।"
আবার হঠাৎই পাল্টে গিয়ে কাতর স্বরে বললে,
---" এই আমাকে কিছু খেতে দে না তোরা,
তিনদিন জল ছাড়া কিছু খাইনি জানিস,
আমার জন্যে কষ্ট হয় না তোদের,
আমার মনে যে প্রচন্ড ক্ষুধা।"






Comments