ক্ষমা করে দিও

ক্ষমা করে দিও

বাবা,
আজ সপ্তম দিন। তোমার নিথর দেহ
এখনো হাসপাতাল, মর্গে শুয়ে,
আমরা আলশিঙায় পথে দাঁড়ানো,
রোদ, বৃষ্টি, ক্ষুধা, তৃষ্ণার উর্ধ্বে
বিচারের প্রত্যাশায় ।
আর আমাদের মতো যারা ভুক্তভোগী,
যারা সময়টাকে বুঝতে জানেন,
ক্রমে ক্রমে তারাও আসছেন পাশে ।
আশীর্বাদ করো বাবা,
আমরা যেন জয়ী হই।
দৃষ্টির ওপাশে, যারা পূর্ব পুরুষ
যারা অনুক্ষণ আমাদের মঙ্গল কামনায় ,
মিনতি তোমাদের পায়,
ক্ষমা করে দিও ।
বাবার মৃত্যুর পর সাত সাতটা দিন
এখনো করিনি দাহ, কি কঠিন পরিস্থিতি
কতটা চাপ, যন্ত্রণা আর অসহায় বোধ
সেতো অভাগাজন‌ই জানে।
কোন কিছুই তোমাদের দৃষ্টির আড়ালে নয়,
বাসী মরা  যে করতে নেই, আমরা জানি,
ওতে অকল্যাণ হয়, শাস্ত্রে নিষেধ ।
তবু, অপারক,  আমরা ক্ষমাপ্রার্থী,
আমরা যে বাবার শাপমুক্তি চাই,
ক্ষমা করে দিও হে পিতৃপুরুষ ।

কত লোক যেচে এসে কত কথা বলে ,
তিন পুত্র থেকেও যার মুখাগ্নি হয়নি
এমন পিতাকে নাকি অভাগাই বলে।
মৃত দেহ নিয়ে যারা রাজনীতি করে
পাষণ্ড তারা, তারা নরকের কীট ,
ধর্ম বলে আছেতো কিছু ?
আমরা নাকি হিন্দু নই, মিথ্যে ভেকধারী
নরকেও স্থান হবে না, যদি সৎকার না করি।
তবু, বাবা তবু, অভিশাপ কালসাপে জর্জরিত
তোমার আত্মজ, আমরা আছি বাবা,
শাপমোচন করবোই তোমার ।

তোমার সুন্দর শরীরটা, এখন তাকানো দায়,
সমস্ত শরীর শুকিয়ে কিসমিস, কালচে বর্ণ,
সেই প্রসন্নতা নেই, তাকাতেই ভীষণ ভয়,
কেমন যেন কাঠ কাঠ শক্ত শরীর
মাংসগুলোতে পচন সাথে উগ্র ফরমেলিনের গন্ধ
অনন্যপায় না যদি হয়, কেউ করে না এমন।
ক্ষমা করে দিও বাবা তোমার আত্মজদের,
আমরা শাস্ত্র জানি না, বিধান জানি না,
জানি শুধু পিতৃসত্য পালন ।
আশীর্বাদ করো বাবা, যেন পথভ্রষ্ট না হই ।
ঝড় আসুক, ঝঞ্ঝা আসুক,
আসুক প্রলয়ঙ্করী তুফান
পৃথিবীটা অনাচারে দুমড়ে মুচড়ে
আগুনের গোলা হয়ে ফেটে পড়ুক
ইন্দ্রের রাজসিংহাসনে,
আমরা আছি বাবা, এখনো আছি
সমস্ত প্রলোভনের উর্ধে দৃঢ়, অনঢ়,
তোমার শাপমুক্তির প্রত্যাশায়,
প্রার্থনা করি বাবা তোমার আত্মা
শান্তি যেন পায়।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments