নিশিরাত প্রতিরাত

নাটক:- নিশিরাত প্রতিরাত 
নাট্যকার :- সুপ্রদীপ দত্তরায়
চরিত্র :-
শ্যামা , কাশী ,কালু, চম্পা, পটকা ও দুই সাগরেদ ।

ঘোষক :- যে নাটকটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন হতে চলেছে তার নাম "নিশিরাত প্রতিরাত "।  নাটকটির মূল চরিত্র যিনি, তিনি একজন নারী;  হ্যাঁ একজন নারী । অন্তত আমরাতো তাই মনে করি । যদিও সমাজ তা স্বীকার করে না । সমাজের চোখে সে পাগলী, শ্যামা পাগলী । এই নামেই সে পরিচিত । ঘর বাড়ি চালচুলোহীন একটা মেয়ে, যার বর্তমান ঠিকানা, জগৎ কুটিরের বারান্দা । বাস থেকে নেমে শহরের মাঝ বরাবর পেট কেটে যে রাস্তাটি দক্ষিণ দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তায় দুতিনটে মোড় এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে বিগবাজার । এবারে বিগবাজারকে হাতের বাঁপাশে রেখে মিটার পঞ্চাশ এগিয়ে গেলে যে পুরোনো বাড়িটা চোখে পড়বে আপনার, সেই বাড়িটিই জগৎ কুটির । একসময়ে এই বাড়িটির ছিল প্রচন্ড নামডাক । খোলা অলিন্দে বহু বছর অনেক নাটক গান বাজনা হয়েছে এখানে । শহরের বহু নামিদামী শিল্পীরা পূজার মরসুমে এখানে এসে নাটক করেছেন , বিতরণ করা হয়েছে শাড়ী কম্বল কত কি । এখন সেই রামও নেই, নেই সেই অযোধ্যা । তবে বাড়িটি এখনো আছে অক্ষত।  পুরোনো সব স্মৃতি বুকে আঁকড়ে নিয়ে এখনো সে  দাঁড়িয়ে শহরের বুকে । সেই বাড়িটিরই ঢোকার মুখে রাস্তার পাশে শ্যামা পাগলীর বাস। সেই সময় হলে হয়তো জায়গাই পেতো না, কিন্তু শরিকী বাড়ি তো, তাই এখনো টিকে আছে । চলতি পথে রাস্তার পাশে আর দশটা লাইট পোস্ট , বিজ্ঞাপনের বোর্ড বা বারোয়ারী জলকলের মত শ্যামা নিজেও একটা বস্তু । যার আলাদা করে কোন অস্তিত্ব নেই । শ্যামা সেই বাড়িটির কোণায় বসে বসে গান গায়, কারো সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলে নাকো । কখনো গান শেষে একা একা হাসে, আবার কখনো কখনও আপন খেয়ালে তার দুচোখ জুড়ে ঝরে জল । পথচলা লোকের অবশ্য এই নিয়ে মাথাব্যথা নেই, সে কখন খায়, কখন ঘুমোয় এই নিয়ে শিক্ষিত সমাজের কিছু যায় আসে না । শুধু বেশি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে আশেপাশের লোকেরা ধমকে ওঠেন, তাতেই পাগলী চুপ করে যায় । তবে ওর গানের গলাটি ভারী মিষ্টি, যখন আপন মনে গান ধরে, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় । এমনটাই তার সুর । চলুন আমরা সবাই মিলে নাট্যকার সুপ্রদীপ দত্তরায়ের হাত ধরে  একটা রাত কাটাই শ্যামার সাথে ।
( মিউজিক ছাড়া মহিলা কন্ঠে গান ভেসে আসে " হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে ....") 
ওই যে, ওই, শুনতে পাচ্ছেন ? আরে ওইতো .... শুনতে পাচ্ছেন  ? কি সুন্দর গাইছে বলুন ? তারপরও কি ওকে পাগলী বলা যায়?  আপনারাই বলুন  ?
গান :- হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো পার করো আমারে ...
( গান চলাকালীন কাশীর প্রবেশ । হঠাৎই কাশীকে লক্ষ্য করে )
শ্যামা :- কাশীদা,  ওই কাশীদা  --।
কাশী :- বল্ ---।
শ্যামা :- একটা বিড়ি দিবায় ? গা'টা একটু গরম করি ।
কাশী :- চুপ কর্ মুখপুড়ী,  লাজ লইজ্জার মাথা খাইছস । মাইয়া মানুষ হইয়া বিড়ি চাস লইজ্জা করে না  ?
শ্যামা :- (হাসি ) যাক একজন তো অন্তত স্বীকার করলায় যে আমি মাইয়া মানুষ ।
কাশী :- মাইয়া মানুষ তো মাইয়া মানুষই হয় । এতে স্বীকার করনের কি আছে ।
শ্যামা :- ওই কথাই কইতেছি না দাদা, ইখানো থাকতে থাকতে আমি নিজেই ভুইল্যা গেছি যে আমিও একটা মানুষ । আমারও সুখ আছে, স্বপ্ন আছে। আমি ভুইলাই গেছি  আমার ভিতরেও একটা নরম মাইয়া মানুষ আছিলো । আমি সব ভুইল্যা গেছি । আর তুমিও তো দাদা মাইয়া মানুষ কইয়া একটা দিনও নরম হইয়া কথা কইছো না । কও?  কইসো ? 
কাশী :- চুপ কর্, বুড়ীর সখ দেখো , তিনকাল কাইট্যা শেষ কালে ঠেকছে, অখন আমি বুড়ীর সাথে সোহাগের কথা পাতুম । অঅঃ,  জ্বালা । স্বামীটারে খাইছস, খা , এখন আমার মাথাডা খাইস না । নে, বিড়ি নে, আর ভাগ্।
শ্যামা :- আঃ দাদা রাগ করো কেনে । বিড়ি হইতেছে গিয়া নেশার জিনিস, কাউকে খাইতে দেখলে খাইতে ইচ্ছা করে 
কাশী:- নে, ধর্, আগুন নে ।
শ্যামা :- আহা, সত্যি দাদা, বিড়িডা যে কে বানাইছিল!  নিজে জ্বইল্যে যায় কিন্তু  কইলজাটারে ঠান্ডা কইরা দেয় ।
কাশী  :- হ,  ঠিক কইছস বইন, বিড়িডা যে বড় যবরদস্ত বস্তু ।মাথাডা হালকা কইরা দেয় । ( একটু থেমে - আনমনা ) জানিস, মাইয়াডা যখন গলায় দড়ি দিল, আমার তো আর কিস্যু রইল না । কি লইয়া বাঁচমু ক? কত বুঝাইছি মাইয়াডারে, শুনলে না ।
শ্যামা:-  দাদা মন খারাপ করো কেনে ।
কাশী :- মন খারাপ করি না রে বোন, নিজের ভাইগ্যরে শুধু গালি পাড়ি । বলি চেষ্টার ত কুনু ত্রুটি করি নাই , কত কইছি যাইস নারে মা যাইস না, ছেলেডা ভালো না, শুনলে কই?  নিজের পছন্দেই বিয়া করলো, তাও ঠিক আছিল । যদি শ্বশুরবাড়িতে বনিবনা না হয়, চইল্যা আইতি। তোর বাপের কি সেই সাধ্য নাই যে তার একটা মাত্র মাইয়া রে খাওয়াইবো?  কিন্তু আইলে না ।
শ্যামা :- সব ভাইগ্যর খেলা দাদা, মন খারাপ কইরা কি করবায় ?
কাশী :- মন খারাপ করি না রে বোন, মনতো নিজের মতোই খারাপ হইয়া যায় । যখন আমি নিজে জানতে পারি, ততক্ষণে  সব শেষ । আমারে শেষবারের মত মাইডার মুখটাও দেখতে দিলে না বদমাইশেরা । সব পাষাণ, সওব সওব,  । এক একসময়ে ভাবি, ভালোই কইরছে, ওই মিষ্টি মুখের মেয়েডারে তখন নাকি খুব --- খুব বিভৎস --- । (কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে )
শ্যামা :- কাইন্দ না দাদা, কাইন্দ না । মন শক্ত করো । নাও একটা বিড়ি ধরাও।
কাশী :- হ দেও দেখি একটা । ( একটু সময় নিয়ে বিড়িটা জ্বালিয়ে ) বুঝলা, পেরথম পেরথম কিস্যু ভালো লাগতো না । অক্করে চুপ মাইরা থাকতাম,  কিসব ভাবতাম আর বেবাক কান্দতাম । একদিন আমার বউ এক পেকেট বিড়ি দিয়া কইলো, নাও এইটা খাও । সেই পেরথম ।এখনতো এই বিড়িটাই সম্বল,  আমারে বাঁচাইয়া রাখছে।
শ্যামা :- ইটারে তুমি  বাঁচা কও দাদা ? ইভাবে প্রত্যেকদিন ঠোক্কর খাইতে খাইতে বাঁচারে তুমি বাঁচা কও?  এই যে শহরটা দিনের বেলা এক রাত্রে আরেক --- যেন মুখোশ পিন্দিয়া  আছে, তোমার ভয় করে না দাদা?  
কাশী :- ঠিক কইছস, চোক্খের সামনে চেনা শহরটা ফুত কইরা কেমন যেন অচেনা হইয়ে গেল । যারা দেইখে নি তারা জানে না, সাঝের বাতি জ্বলবার সাথে সাথে শহরডা কেমন যেন পাইল্টে যেতে থাকে । কার যে কহন  সব্বোশান্তি নাশ হয়, কেউ কইতে পারবা না ।
শ্যামা :- হয় , একটা একটা কইরা দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয় -- একটা একটা কইরা নিভতে থাকে বাতি, আর সেই অন্ধকার থেইক্যা  বাইর হইয়া  আসতে থাকে ভদ্রবাবুদের আসল চেহারা । 
কাশী :- সাপ যেমন খোলসা ছাড়ে তেমনি রাত্তির আইন্ধার হওনের সাথে সাথে দিনের বেলার ভদ্রবাবুরাও খোলসা ছাইড়তে থাকে । (হঠাৎ পাশের ঝোপে কিসের শব্দ )  কে ?  কে ওহানে?  আন্ধাইরের মইধ্যে কে  লুকাইয়া আছ, আওয়াজ দাও , নইলে শেষমেশ  ভালো হইবো না কই  দিসি ।
চম্পা :- (চাপা স্বরে )  আমি গো, আমি চম্পা ।
কাশী :- কে ? ওঃ চম্পা  তুই ? আমিও ভাবি এই আইন্ধাইরে আবর্জনার মইধ্যে কে হইতে পারে?  তা ওইহানো কি করতেছস্ ? কিছু পাইছস না সবডাই আবর্জনা ।
চম্পা :- চুপ,  চুপ কাশীদা, ওই দ্যাখো বদমাইশটা  আসতেছে ।
( বুটের আওয়াজ তুলে অল্পক্ষণের মধ্যে একটা কালুর প্রবেশ )
কালু :- এই পাগলী এদিক দিয়ে কাউকে যেতে দেখেছিস? 
শ্যামা :- নাহ্ , কাউরে দেখছিন নাতো ?
কালু :- শালীটা গেলো কোথায় ? শোন্ , লাইনের কোন মেয়েছেলে দেখলে বলবি পার্টি অফিসে গিয়ে পুজোটা সেরে আসতে ।
শ্যামা :- পার্টি অফিসে কার পুজা লাগে গো দাদা ? তুমার না তুমারার দাদার?
কালু :- সে খবরে তোর কিরে ? তোকে যা করতে বলেছি তাই কর্ । বেশি প্যানপ্যান করিস না ।
শ্যামা :- বেশ ঠিক আছে । কিন্তু দাদা কাজটা কিতা মাগনা করাইবায় নি, দশটা টেকা দেওনা । কিচ্ছু  কিন্যা খাই ।
কালু :- এত ক্ষিদে কিসের রে তোদের ? সারাদিন এটা খাব ওটা খাব, এটা চাই ওটা চাই ।
শ্যামা :- (খিলখিল করে হেসে ) আমরার খিদা তো পেটে গো দাদাবাবু, তোমারার খিদাটা যে সারা শরীরে !
কালু :- মস্করা  করছিস  ? 
শ্যামা :- ছিঃ , আমি তো শুধু ভিক্ষা চাইলাম, মস্করা কই দেখলায় গো দাদাবাবু ।
কালু :- আমরা ওসব ভিক্ষা টিক্কা দিই না । পার্টির নিয়ম আছে,  কাজ করে খা ।
শ্যামা :- (আবার হাসি) ইটা  আমি খুব ভালো কইরা জানি ।তুমরা শুধু নিতে জানো ----।
কালু :- এই পাগলী বেশি বাড় বাড়িস না, একদম ডানা ছেটে রেখে দেবো বলেদিলাম।
শ্যামা :- আহা, এত রাগ কররায় কেনে গো । কাউরে না পাইলে আমি কিতা নিজেই আই যাইতাম নি দাদাবাবু  ?
কালু :- ইস্ , পাগলীর সখ কত ? তোর এই নোংরা শরীরে পুজো নিলে এই শীতের রাতে আমায় আবার চান করতে হবে । সেটা বুঝতে পারছিস ?
শ্যামা :- বেশি ফুটানি দেখাইও না গো দাদাবাবু,  আমি ইখানো নতুন আইছি না । আমি তোমারার ঘটও দেখছি, পটও দেখছি, আর কিতা কয় যে, ওই যে গো হইরকম  বিসর্জনও দেখছি।
কালু :- তোর সাহস দেখছি দিনদিন বেড়েই চলেছে, দাঁড়া খুব শিগগিরই তোর একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি । ( কিছু  আওয়াজ ) ওখানে কেরে?  কে ওখানে আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে আছে ? বেড়িয়ে আয় । (ছোটাছুটির শব্দ ) ধর, ধর ওটাকে । শালী, পালাবি কোথায় ? এই এই একদম জোর করবি না, হাত ভেঙে দেবো ।
চম্পা :- হাত ছাড়ো ।
কালু :- চুপ কর্ হারামজাদী, আগে পার্টি অফিসে চল, তারপর অন্য কথা।
চম্পা :- না , আমি যাবো না ।
কালু :- যাবি না মানে? তোর বাপ যাবে, তোর চোদ্দ গুষ্টি যাবে ।
চম্পা :- না, আমি যাবো না ।
কালু :- আলবত যাবি । ওহ্  যাবে নাঃ ।
চম্পা :-  না যাবো না, হাত ছাড়ো ।
কালু :- ইস্, ইনি সতী স্বাধ্ধী, ন্যাকা । বলি যাবি না কেন? কেন  যাবি না বল? 
চম্পা :- তোমরা কাজ করে পয়সা দাও না ।
কালু :- পয়সা দেইনা মানে? 
চম্পা :- কোথায় দাও ? জোর খাটিয়ে ফূর্তি লুটো তোমরা ।
কালু :- এই বেশি কথা বলিস না, ব্যাবসা করবি টেক্স দিবি না? এই, এই তোর লাইসেন্স আছে ? 
চম্পা :- কিসের লাইসেন্স? 
কালু :- বাঃ , এই যে শরীর বেঁচে খাচ্ছিস, তার কোন কাগজ থাকবে না ?
চম্পা :- ওমন কোন কাগজ আছে বলে আমি জানি না ।
কালু :- শুনিসনি ! ওমা একি কথা ! চল তোকে দেখিয়ে দিচ্ছি কি করে কাগজ করতে হয় ।
চম্পা :- নাহ্, আমি যাবো না ।তোমাদের এতলোকের ধকল আমার একার পক্ষে কষ্ট হয়। আমি যাবো না ।
কালু  :- চল শালী --
চম্পা :- নাঃ আমি যাবো না, তোমার পায়ে পড়ি, আমাকে ছেড়ে দাও । (মিউজিক ) এই,  এই খবরদার, গায়ে হাত দিও না বলছি,--, তোমাদের লজ্জা করে না , রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব করছো?  বাড়িতে মা বোন নেই ? খবরদার, আমি চিৎকার করবো বলে দিচ্ছি ।
কালু :- কর, কর, চিৎকার কর । চিৎকার করে সবাইকে বল, সবাই এসে দেখে যাও, কানকাটা কালু রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমায় সোহাগ করছে । কর চিৎকার কর, দেখি তোর কোন বাপ তোকে বাঁচাতে আসে । শালী ! --- চল ।
চম্পা :- ছাড়ো,  ছাড়ো বলছি । ও কাশীদা, ও শ্যামাদি তোমরা কে কোথায় আছো?  আমাকে বাঁচাও ----।
শ্যামা :- ও দাদাবাবু, ছাড়ি দাও না গো  মেয়েটারে ।বেচারীর শরীরটা ভালা না ,  অনেকদিন ধইরা অসুস্থ । আজকে মাত্র লাইনো নামছে ----।  তাইর যাত্রাটা নষ্ট কইরো না।
কালু  :- আআহ, তোদের ও আবার যাত্রা আছে নাকি? শালী নটির কত নাটক দেখো , সহ্য হয় না । বেশ তোকে আর পার্টি অফিসে যেতে হবে না, চল ওদিকটাতে, তোর বেশি সময় নেব না । চল --
চম্পা :- ও শ্যামাদি আমাকে বাঁচাও --'।
শ্যামা :- এই কালু মাইয়াটারে ছাড়ি দে । হাত ছাড়, ছাড় কইছি --।
কালু :- না ছাড়বো না । তুই কে রে আমাদের দুজনের মধ্যে আসার ? কাজটা ভালো করছিস না ।
শ্যামা :- ভালো মন্দ পরে বিচার হইবো, শেষবারের মত কইতেছি  হাত ছাড়ি দে ।
কালু :- না ছাড়বো না, তুই কি করবি ?
শ্যামা :- দেখতে ? দেখতে আমি কিতা করি ? তাইলে দাঁড়া , দেখ, আমি কিতা করতে পারি ।এই  এই যে দেখতেছস দাটা, এইটা তোর গলার মইধ্যে বসাই দিমু।
কালু :- এই এই দাটা নামা  বলছি। নামা  --। লেগে যেতে পারে বুঝতে পারছিস না । নামা  ---- ।
শ্যামা :- নামাইমু,  আগে হাতটা ছাড়ি দে  ---।
কালু :- (ভয়ে হাতটা ছেড়ে দেয়) কাজটা ভালো করলি না পাগলী, ঠিক আছে তোকেও দেখে নেবো ।
কাশী :- এই, এই শ্যামা কি হইতাছে  ? পাগল হইয়া গেছস নাকি ?
কালু :- এই কাশী, ওই পাগলী কে বলে দে, কাজটা ভালো করে নি । রক্ত গঙ্গা বইয়ে ছাড়বো, মিলিয়ে নিস কথাগুলো । চলি, খুব শিগগিরই দেখা হবে । (কালু চম্পাকে ছেড়ে চলে যায়) 
কাশী :- কাজটা ভালো করলি না বোন, চট কইরা ইমন মাথা গরম কইরতে নাই।
শ্যামা :- কিতা করতাম,  একটা মাইয়ার লগে ইরকম অসভ্যতা করতেছে, মাইয়া হইয়া কি রকম চুপ করিয়া থাকতাম কও।
কাশী :- কিন্তু হেগোরা আবার আইবো , আমার তো হেইডাই ভয় ।
শ্যামা :- ঠিক কইছ , এই চম্পা তুই যা ইখান থেইকা । কয়েকদিন ইদিকে আইস না । ভাগ ---। 
চম্পা :- কিন্তু তোমরা ?
শ্যামা :- আমরার লেইগ্যা চিন্তা করিস না, আমরার কিচ্ছু হইতো না । তুই যা ---।
কাশী :- হ, চম্পা, তুই পালা ।আমি  কই কি শ্যামা তুইও পালা । দুই চারটা দিন ইদিক ওদিক থাক , সব ঠিক হওনের পরে আইবা নে । আমার তো তোমারে লইয়াই বেশি চিন্তা ।
শ্যামা :- আমার লেইগ্যা চিন্তা করিও নাতো । আমার কিচ্ছু হইতো না ।
কাশী :- হ, চিন্তা তো আর সাধে করি না বইন, চিন্তা হইয়া যায়। এই যে এই ছানিপরা চোখ দুটাতো কম কিছু দেখে নায় । চোকখের সামনে সব কিছু কেমন যেন পালটাই গেল, আমি শুুুধু দেইখ্যা গেলাম আর বয়স গুইন্যাই গেলাম। মাঝে মাঝে ভাবি অনেক হইছে, আর না ।
শ্যামা :- কেনে দাদা, ভালাইতো কাজ কররায়, ছাড়তায় কেনে ?
কাশী :- আইজকাল আর কাজো মন বয় না । শরীলটাও যে আইজকাল কি হইছে ---।
শ্যামা :- শরীরে না চাইলে কাজ কইরো না । ছাড়ি দাও ।
কাশী :- ( বিষন্ন হাসি ) ছায়রা দিমু কইলেই তো ছাড়ন যায় না বইন , ছাইড়াইবা করুমটা কি? সীতার মা তো মইরা বাঁচলো, আমার কি হইব? 
শ্যামা :- চিন্তা কইরো না দাদা , সব ঠিক হই যাইবো।
কাশী :- হাসাইলিরে বইন। যার তিনকালে কিচ্ছু হইলো না, অহনে শেষকালে তার সব ঠিক হইবো?  মস্করা করস? 
শ্যামা :- (আনমনে গান ধরে) 
ও আমার পরাণের বন্ধুরে 
কুনবা দিশায় বাইলায় রে নাওখান 
কুনবা দিশায় যায় ।
আমি যে বাজুবায় চাইগো ফিরি আমি 
পারের কুনু পাত্তা নাই।।
(একটু থেমে ) দাদা একটা বিড়ি দেও ---।
কাশী :- লও ---
শ্যামা :- আইচ্ছা দাদা, ওই পাড়ার জয়বাবু শুনছি আইজকাল বৌটার সঙ্গে থাকে না ? 
কাশী :-ইগুলা কথা আমি জানি না, আমার কুনু ইনটেস (ইন্টারেস্ট ) নাই ।
শ্যামা :- আইচ্ছা, মিতালি বৌদিরে তুমি চিনো ?
কাশী :- কুন মিতালি? আমি কোন মিতালিরে চিনি না ।
শ্যামা :- খুব চিনো দাদা, ভেলকি কইরো না । ওই যে গান বাজনা করে, প্রায় দিন রাত্রে কইরা জয়বাবুর লগে বাড়ি ফিরে,  চিনো না ? ওই যে গো , হইদিনও গাড়িত থেইকা নাইম্যা অত রাত্রে রাস্তার উফরে -- ওই যে গো --, তুমি না পারতে বাঁশিত ফুঁ দিলায় ---।
কাশী :- ইসব খবর তুমারে কে দিসে কওতো ? 
শ্যামা :- ইতা দিয়া তুমি কিতা করতায়?  তুমি তো পইসা পাও, একশ টাকা দুইশো টাকা তুমার ত মুখ বন্ধ ---।
কাশী :- বাজে পেচাল পারিস না ।
শ্যামা :- বাজে পেচাল না দাদা, যা কইতেছি সব সত্যি ।ম
কাশী :- না সত্যি না। 
শ্যামা :- তুমি তুমার মেয়ের দিব্বি দিয়া কও?  (কাশী উঠে দাঁড়ায়) কিতা হইলো উঠি গেলায় যে?  রাগ করছো ? আরে কিচ্ছু কইয়া যাও --।
কাশী :- কিচ্ছু না, অহনে আমার যাওন লাগবো, একটা চক্কর কাইট্যা আসি । (শ্যামা শব্দ করে হাসে )
শ্যামা :- (আনমনে একটা গান )
পিরীতি পিরীতির বিছা সর্ব অঙ্গ জ্বইল্যা যায় 
মন মইজাসে তন মইজাসে  প্রাণ ভাইসাছে দিল দরিয়ার।
(একটা দুটো গাড়ির আওয়াজ,  গান গাইতে গাইতে শ্যামা ঘুমিয়ে পড়ে )
কাশী :- শ্যামা, হেই শ্যামা,  ঘুমাইয়া পড়ছস? 
শ্যামা :- নাঃ , এই একটু চোউখটা লাগছিল খালি । কয়টা বাজে দাদা? 
কাশী :- অহনে একটা বাইজ্যা চল্লিশ মিনিট ।
শ্যামা :- একটু ঘুমাও দাদা ---।
কাশী :- নারে মনডাত শান্তি নাই । একটা কথা কমু ফালাইবি না ক।
শ্যামা :- কিতা কও --।
কাশী :- আজকের রাইতটা তোর ইহানে থাকনের কাম নাই । আমার কিন্তু গতিক সুবিধা ঠেকছে না ।
শ্যামা :- কেনে কিতা হইছে?  ওউ কালুর লেগিয়া নি । আরে না দাদা তার রকমসকমই ওই রকম, যতখান গর্জায় ততখান বর্ষায় না । ভালা কথা চম্পারে দেখছোনি ?
কাশী :- হ দেখলাম তো, কার বাইকে চইড়া যেন যাইতে আছে । কথা হয় নাই । আচ্ছা, অহনে আমার কথাডা শুন । ওগো লোক ভালো না ।
শ্যামা :-দাদা তুমি খামকা ভয় পাইরায় ।হেরা আমার কিচ্ছু করতে পারতো না । তাছাড়া তুমি যেতা ডরাইরায় হেই বয়সটা আমি কবে পার হইয়া আইছি । অখন আর আমার শরীরো কুনু মজা নাই ।তুমি খামকা ডড়াইও না। আর বড় কথা হইছে, আমি হইলাম পাগলী, পেরৎ । আমার গাত এমনেও কেউ ঘিন্নায় হাত দিত না ।
কাশী :- কিন্তু ---
শ্যামা :- কুনু কিন্তু না, আমার কিচ্ছু হইতো না, তুমি ঘুমাও ।
(হঠাৎই দুরে আওয়াজ )
কাশী :- এই শ্যামা, কিছু শুনতে পাইতেছ? 
শ্যামা :- অয়, এরা কিতা ইদিকে আর নি? 
কাশী :- হ, আমি কই নাই তোরে, ওরা আইবো ।তুই পালা, বাঁচনের হইলে পালা ।
শ্যামা :- না দাদা, আমার কিচ্ছু হইতো না । তুমি সরি যাও ।
কাশী :- হেইডা কি কইলি । তোরে ইহানে বাঘের মুখে রাইখ্যা পালাই যামু । তুই হেই কথাডা কইতে পারলি ।
( নেপথ্যে, ওই যে ওই দিকে-- ওই দেখ পাগলীটা বসে আছে-, সাথে ওটা কেরে -- বয়ফ্রেন্ড -- আরে না না ওটা কৃষ্ণলীলা চলছে )
শ্যামা :- কাশীদা দোহাই তুমি যাও---।
কাশী :- না আমি যামু না ।
কালু :- এই যে খুড়ো, শালা এত রাতে এখানে কি করছিস বে ---।
কাশী :- ভদ্রভাবে কথা কন ।
কালু :- চোপ শালা, এই মালটার সাথে এত রাতে কি করছিস বে ?
শ্যামা :- মুখ সামলে কথা বল তোরা --।
কালু :- চুপ বে,  একদম আওয়াজ দিবি না । আগে তোর নাগরটার একটা ব্যবস্থা নিই , তোর জন্যে তো আমি রইলাম ।
কাশী :- এই যে দাদারা  শুনেন, দোহাই আপনাগো এই পাগলীটা রে কিচ্ছু কইরেন না । ওরে দয়া কইরা ছাইরা দেইন । দয়া কইরেন ।
কালু  :- দয়া করতেই তো আমাদের আসা বে শালা । আমরা হচ্ছি গে দয়ার সাগর, প্রেমের সাগর ,  নেমাই ঠাকুর । সারারাত ধরে ঘুরে ঘুরে প্রেম বিলাই । আর যারা কাঁইকুই করে তাদের পেটে জোর করে  প্রেমের বাচ্চা পয়দা করি ।
কাশী :- দাদা গো দোহাই আপনাগো এইবারটি  মাফ কইরে দিন ।
শ্যামা :- কাশীদা, কাশীদা তুমি যাও তো , এরা ভালা মানুষ না ।
কালু :- ঠিক বলেছিস, আমরা ভালো লোক নই । তাই ফুট শালা এখান থেকে ।
কাশী :- না আমি যামু না ।
কালু :- শালা যাবি না মানে? তোর বাপ যাবে ।
কাশী :- না আমি যামু না ।
কালু  :- তাই ? যাবি না  ?
কাশী :- নাঃ ---।
কালু  :- ( চেপে ধরে ) বল এবার যাবি, বল ।
কাশী :- না --
শ্যামা :- কাশীদা আমার কথা শুনো, তুমি ইখান থেইকা যাও, এরা তুমারে মারি ফালাই দিব ।
কাশী :- না শ্যামা, আমার ধর্মে সইবো না। তুমারে এই অবস্থায় রাইখ্যা আমি যাইতে পারুম না ।
শ্যামা :- এই কালু কাশীদারে ছাড়, গলা থেইকা চাক্কুটা সরা । তোর দুশমনি আমার লগে,  কাশীদারে ছাড়ি দে -- না --- ভালা হইতো না -- (কাশী চাকুর আঘাতে চিৎকার করে লুটিয়ে পড়ে ) কাশীদা ----।
কালু  :- আহা, কি স্বর্গীয় প্রেম । একেবারে রসে ভরা রসকলি । শালা কেষ্ট ঠাকুরকে যা দিয়েছি তাতে দিন পনেরো ভালো করে বসতে পারবে না । এই যে, এবারে তুমি এদিকে এসো তো সুন্দরী । ভয় নেই আমি রোজ আসবো , এসে রোজ কৃষ্ণলীলা সেরে যাবো । তোমার কোন ভয় নেই। আমি থাকতে কেউ তোমার কিচ্ছু করতে পারবে না ।
শ্যামা :- আমার দিকে একপাও বারাইবে না কালু, ভালা হইতো নায় কইরাম।
কালু  :- আহা আমি কেন আসতে যাবো, তুই আসবি সুন্দরী ।তুই আসবি আমার বুকে, আমাকে সুড়সুড়ি দিবি, আহা । একটু কষ্ট করে আয় ।
শ্যামা :- মুখ সামলাইয়া কথা ক কালু ---। আইজ অব্দি এই শ্যামার গায়ে হাত দিতে কেউ সাহস করছে না ।
কালু :- আরে ব্যাস, শালী পাগলীর তো ভীষণ তেজ ! আমার না আবার তেজী ঘোড়া না হলে ভালোই লাগে না । লাইনের মেয়ে গুলো যেন কেমন কাঠ কাঠ , ঠিক মজা আসে না । তোর এই তেজটা তো আগে দেখিনি, দারুণ মাইরি ।
শ্যামা :- মুখ সামলাইয়া কথা কইস , হেই দিনের ছোকরা । তোর থেইকা বয়সে আমি কত বড় জানস ।
কালু :- তাতে কি?   কোথায় লেখা আছে, বয়সে বড় কারো সাথে ফুর্তি করতে নেই ? কোথাও আছে?  এই তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? শালীটাকে টেনে নিয়ে আয়, তোরা জানিস না, ফুলশয্যাতে কালুর আবার তর সয় না ।
শ্যামা :- এই খবরদার কইলাম, এই দাও এর এক কুপে লাশ ফালাইদিমু । একটা পা  আওগাইবে তো খবর আছে ।
কালু :- তোরা আবার দাঁড়িয়ে গেলি কেন?  যা ধরে নিয়ে আয় ।
শ্যামা :- ভালা চাস তো ভাগ, আবারো কইরাম ভালা হইতো না ।
কালু :- তোরা এই পাগলী কে ভয় পাচ্ছিস ?
পটকা :- পাগলী বলেই তো ভয় পাচ্ছি গুরু, রিক্স আছে ।
কালু  :- শালা, খানকির বাচ্চারা, আমার সাগরেদ হয়ে এই সাহসী হলি?  প্রেস্টিজটা একদম পাংচার হয়ে গেল । আয় আমার সঙ্গে ।
শ্যামা :- খবরদার কইলাম, ভালা হইতো না কিন্তু ।
কালু  :- এই তুই ওইদিকে যা,  পটকা তুই ওই দিকে, আর তুই পিছন থেকে ধরবি । আমি আছি সামনে, যা--।
(কিছু সময় ধস্তাধস্তির পর এক সময়ে মঞ্চের পিছনে বা কোন সেটের আড়ালে ধরে ফেলার আওয়াজ । মঞ্চে মিউজিক আর হামিং )
কালু :- (পৈশাচিক হাসি ) ( একে একে সার্ট, গেঞ্জি খুলতে খুলতে মঞ্চের বাইরে বাকিদের উদ্দেশ্যে) আহা শক্ত করে চেপে ধর -- হ্যাঁ ওগুলো খুলে ফেল ---, হ্যাঁ ওগুলোও । (ভেতর থেকে কেউ -- খুলতে দিচ্ছে না গুরু ) ছিড়ে ফেল । শালা বুঝতে পারছিস না আমার যে আর তর সইছে নারে । ( উইংসের বা সেটের কাছে দাঁড়িয়ে  ) আহা ওইটাও খোল, দেখেছিস না কি নোংরা ---, বাহ্ কি টলটলে শরীর ! --- এই পটকা তোরা শক্ত  করে হাতটা চেপে রাখিস, আর তোরাও পা দুটো চেপে ধর -- দেখছিস কেমন ছটফট করছে --এই যে আমি এসে গেছি । (কালু মঞ্চের ভিতরে চলে যায় । বাকিরা একে একে মঞ্চে চলে আসে । সবার লোলুপ দৃষ্টি ওইদিকে। ভেতর থেকে নানা শব্দ আসতে থাকে। সাথে শ্যামার প্রতিবাদ আর যন্ত্রণার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । পুরো বিষয়টি শেডোতে দেখানো যেতে পারে । কিংবা কোন সেটের আড়াল নেওয়া যেতে পারে ।  ক্লান্ত কালু ভিতর থেকে বেরিয়ে কাছাকাছি কোথাও বসে যায়  )
কালু :- (তৃপ্তির হাসি ) কানকাটা কালুকে চেলেঞ্জ । দেখলি তো কি করে ফুলশয্যা করতে হয় । এবারে কে কে  কেস করবি যা চটপট যা ।
(পটকা ভিতরে যাই আবার ফিরে আসে )
পটকা  :- ওস্তাদ মালটা বোধহয় সটকে গেছে ।
কালু :- যাঃ বাবা, আমার উচ্ছিষ্ট ভগবান খেয়ে নিল ! তাহলে তো ল্যাটাই চুকে গেছে । সরি ভাই, চল তোদের জন্য অন্তত একটা ফুলশয্যার ব্যবস্থা করি। (হঠাৎই পিছন থেকে )
শ্যামা :- জীবনের লেইগ্যা তোর ফুলশয্যা শেষ রে শয়তান ( শ্যামা চুল খোলা অনেকটা মাকালির মত দা হাতে কালুর গায়ে একের পর এক কোপ বসাতে বসাতে চিৎকার করতে থাকে । সঙ্গের লোকেরা শ্যামাকে এইরূপে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায় । কালু মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করে ।)
শ্যামা :- আয় , আয় শয়তান, ফুলশয্যা করতেনি?  আয়। খালি তুই কেনে, তোর লগে আর কারা কারা আছে ডাক। আয় ফুলশয্যা করি । মনে রাখিস আইজ থেইকা কুনু দয়া না, ভিক্ষা না, তোরার বিচার আমরা মেয়েরাই করমু। এমন শিক্ষা দিমু যে কুনু মেয়ের দিকে মুখ তুইল্যা চাইতে না শয়তান । শালার ফুলশয্যা !!!

Comments