সাধ্বী


বড় অবাক লাগে
একজন অবলা, অসহায় এক নারী
পাজ্ঞাব যার জন্মস্থান
হরিয়ানায় এক ছোট্ট শহর সিরসা
সেখানে যে ডেরা সাচ্চা সৌদা
সেথায় সে সাধ্বী পাঁচ বছর ।
তার বাবা একজন সৎ শিক্ষক
মা ধর্মপ্রাণা নারী।
দেব দ্বিজে তাদের অঘাধ বিশ্বাস
সেখানে যত ধর্মীয় সভা
তার মা সেখানে প্রথম সারি।
প্রতি রবিবার বাবা শ্রম দেন
গুরমীত সিংহের ডেরায়
যাকে আপনারা বাবা বলেন
লোকে বলে মহারাজ, মহারাজ রাম রহিম ।
মহারাজাই বটে, যেমনটি তার অর্থ
তেমনই তার প্রতাপ। দুর্দন্ড অসীম ।
কি নেই তার ? বহুতল বাড়ি
বিলাস বহুল গাড়ি
অস্ত্র আর সেবাদল
যারা প্রয়োজনে কুরুক্ষেত্রে মাতে
বাজায় কৌরবের জয়ঢোল।
বড় অবাক লাগে ।

সত্যি অবাক লাগে
মেয়েটি শিক্ষিত স্নাতক,
মহাবিদ্যালয় থেকে
তবু তার দেব দ্বিজে নিখাদ বিশ্বাস
এটাই এদেশে রীতি, এটাই শিক্ষা ।
আসনে দেবতা আছেন, পাথর প্রতিমা
জীবন্ত দেবতা তিনি গুরমীত বাবা ;
অপূর্ব মিষ্টভাষী, তিনি দয়ার সাগর
ভাষণে অমৃত ধারা ঝরে বরাবর ।
জন্ম জন্মান্তরে সে তার দাস অনুদাস ,
এতদিন এটা ছিল তাঁদের বিশ্বাস ।
স্বপ্ন ছিল না কোন ভালো চাকরির,
না ভালো গাড়ি কিংবা বাংলা বাড়ির
একটাই ছিল সাধ, "সাধ্বী হব আমি;
স্বেতসুভ্র বসনে , ঘোমটা টেনে নেব
চরণেতে স্থান দিবেন গুরমীত স্বামী।"
সত্যি অবাক লাগে , এও স্বপ্ন হয়।
একবিংশ শতাব্দীতে সম্ভব হয়!

হে ভারত , সাধ্বী সে হয়েছিল
আরো অনেকের সাথে । সোঁপেছিল
প্রাণ মন , এই কুমারী শরীর; ঈশ্বর চরণে।
সেই ঈশ্বর, স্বাস্বত যিনি
মন মন্দিরে যার চির অধিষ্ঠান ।
যার তরে কাঁদে সদা মীরা অভিরাম
সেই দেবতারে , ঠিক সেই দেবতারে
সোঁপেছিল সে, তনু প্রাণ মন।
মনেতে বাসনা ছিল , সাধনার বলে
হয়তো বা পেতে পারে দেব দরশন ।
ডেরা সাচ্চা সৌদা, যার অসীম সুনাম
সেথায় সাধনস্থল , মহাতীর্থস্থান।
কি অদ্ভুত চিন্তা, তাই না ---

ভক্তজনে প্রণাম করে , দেবীজ্ঞানে জানে
যা কিছু বাণী দেয় সে গুরুর নির্দেশে।
দুর হতে পুরুষেরার যদি বা শুধায়
নীরবে প্রত্যাখান করে , পাছে মরে দোষে।
হায়, ঈশ্বর । তখন জানেনা সে
করেছে কি ভুল । সাধ্বী সেজেছে সে
রক্ষিতাই মূল । সাধ্বী সেতো ভক্তজনে,
আসলে শয্যা সঙ্গিনী সে এই ভদ্রাসনে ।
সত্যি অবাক লাগে তাই না---
ভারতবর্ষ এক মহান ধর্মের দেশ
এক পবিত্র ঐতিহ্য আর মানবতার দেশ
একবিংশ শতাব্দীতে ডিজিটাল ভারতবর্ষে
কি অদ্ভুত পরিবেশ ।
সত্যি অবাক লাগে ----।

প্রথম সে রাত্রি, যেদিন কালরাত্রি হায়
সে ডেরাতে আছে, দুবছর প্রায়।
সাধ্বী এল তাঁর কাছে গুরুজি ডেকেছেন
ভাবে জীবন সার্থক হলো গুরু চেয়েছেন ।
সারাদিন উপোস থেকে পূজাথালি পরে
ধূপ , দীপ পুষ্পাদি নানা সমারোহে
সাজিয়ে আরতি থালি চলেছে পূজিতে ।
দুই পাশে দুই সাধ্বী মধ্যখানে তিনি
চলেছে পূজার স্থলে , গুরু গুরমীত স্বামী ।
সিঁড়ি পরে সিঁড়ি, সে চলেছে ভবনে
মনেতে পুলক জাগে, অজানা সাধনে ।
ধন্য প্রভু , ধন্য তুমি , ধন্য তব লীলা
ধন্য অভাগীর নাথ, কৃপা দরশিলা ।
হঠাৎ বিশাল কক্ষ মুখে, থমকি দাঁড়াই
চমকি উঠে সে, একি ? একি দরশাই?

প্রকান্ড সোফাতে বসা গুরু মহারাজ
হাতেতে মদিরা পাত্র , আলুথালু সাজ ;
সম্মুখ দেওয়ালে টিভি, তাতেতে সিনেমা
রতিক্রিয়া রত কিছু কামুক ললনা।
যত না শিৎকার উঠে পর্দাতে ভাসি
গুরুজি উন্মাদ তত, প্রচন্ড আগ্রাসী ।
সহসা সম্বোধন করেন, "এস এস প্রিয়জন,
বেলা যে বয়ে যায়, করি পূজা আয়োজন ।"
চমকি উঠে সে ভাবে , এই তার গুরু ?
ইহারে বন্দনা করি, দিন করি শুরু ?
এই ব্যাক্তি দিবালোকে ধর্ম কথা কয়?
লোকেরে শাস্ত্র শিখায়, মুক্তি দরশায় ?
হাত তার কেঁপে উঠে, টলমল হায়
ভয়েতে পূজার থালি ধূলিতে লুটায়।
গুরু তারে আজ্ঞা দেন, " বিলম্ব কেন?
ধৈর্যচ্যুতি ঘটে যদি শাস্তি পাবে যেন ।
ভয় নাই, ভয় নাই এসো হে কন্যা
তোমার যৌবনে হোক এ রাত্রি ধন্যা।"
মনে মনে স্থির করে, আজি এ বিপদে
প্রতিবাদ করবই, কুটিল শ্বাপদে ।
স্থির থাকি দরজায়, ভ্রম গেছে কেটে
কি করে মুক্তি পাবে এ ঘোর সংকটে।
গুরু হাঁকেন কর্কশে, " কে আছিস আয়
এখনো দাঁড়িয়ে 'লৌন্ভি', টেনে নিয়ে আয়।
আমি তোরে কৃপা করি, কোথা হবি খুশ
আমারে অবজ্ঞা করিস, এতই সাহস?
কে আছিস, ত্বরা কর। শয্যাটা তোল
'লৌন্ডিকে' টেনে আন, বসনটা খোল।"
আশে পাশে যত ছিল সাধ্বী রমনী
তাহারে বিবসনা করে নিঠুর কামিনী ।
হায় ঈশ্বর, হায় পিতা , এই ছিল কপালে
নারীর যোগেতে তিনি নারীত্ব খোয়ালে ।
বিবস্ত্র শয্যায় সে যত চিৎকার করে
ততোধিক উল্লাসে তারে মন্থন করে
ক্ষত বিক্ষত হয় এই দৈত্য দানবে।
তার বুকে , পিঠে, গ্রীবায়, জানুতে;
অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন, দানব আঘাতে।
আহা অসহায়, অতি ক্লান্ত অচেতন
তাহারে ঘিরে সাধ্বী ছিল যতজন
অশ্লীল আসরে তাদের, নীরব নিরক্ষণ ।
তারপর----- কত রাত ---
কত রাত এমনি জীবন
জীবন নয়তো সেটা , নরক ভ্রমণ ।

খেলা শেষ, ক্লান্ত গুরু, বলেন তারে ডেকে
"তোমার মত তেজী লৌন্ডি বড় ভালো লাগে ।
আবার আসবি, ডাকবো যখন আমার লক্ষ্মী মেয়ে
আর শোন, বলতে যেও না আজকের কথা
লজ্জার মাথা খেয়ে । অবশ্য ক্ষতি নেই
আমার তাতে, কিবা আসে যায় বলো
লোকে তোমাকেই পাগল বলবে
মিছেই মাখবে ধুলো।
পুলিশ, আমলা, মন্ত্রী আর যত বিজনেস টাইকুন
আমার কেনা 'কুত্তা' ওরা , গায় আমারই ধুন।
তাও যদি কেউ বিশ্বাস করে শেষ দিন তার জেনো
যতটা আমি আলো ছড়াই ততটাই কিন্তু কালো।

পাঠক বন্ধু, এই কাহিনী সাধ্বীর,
শুধু সাধ্বীর নয়,
এই লজ্জা আমার আপনার সবার
ভারতবর্ষের হয়।
সাধ্বী সে তো অবলা নারী
বিশ্বাস জন্মগত,
তিলে তিলে গড়া সংস্কার তার
ভক্তি মজ্জাগত ।

শুভবুদ্ধির বন্ধু আমার,
কি চাও বিচার, কিসের বিচার
বিচার তো তার হয়নি
বিচারক ? তারও গন্ডি আছে
অগাধ ক্ষমতা পায় নি।
ধর্ষণ কি তার শরীরে হয়েছে
বিশ্বাসে তে হয়নি
তার চিন্তা, ভাবাবেগ, আর যত জ্ঞান
ধর্ষণ কি তাতে হয়নি ?
কোথায় বিচার --- ?

অবাক লাগে ---
একজন ধর্ষিতা তার বিচার চায়
অন্যায় কি সেই বিচার চাওয়া
সেই বিচারের বিচার পেতে
পনের বছর হাওয়া
এই লজ্জা কার ?
যে ধর্ষক, সে পায় রাষ্ট্রীয় সম্মান
নিরাপত্তা বেষ্টনী, আর সরকারি অনুদান
এ দায়িত্ব কার ?
কেন ধর্মের নামে আজ ট্যাক্স লাগে না
কালো টাকার পাহাড় জুড়ে কেন
অগাধ বেলাল্লিপনা
কেন ধর্মের ব্যাপারী, কোন আইন মানে না
গুন্ডারাজ আর অরাজকতার নতুন সংস্করণ
এই ব্যর্থতা কার?
এমনি অনেক প্রশ্ন জেনো অনুচ্চারিত রবে
কিছু তার উত্তর পাবে, বাকি চাপা পরে যাবে।

পাঠক বন্ধুরা, অবাক হয়ো না
এ দায়, এই লজ্জা, এই ব্যর্থতা
আমার আপনার সবার ।
আমাদের জন্যে আজ সাধ্বী ধর্ষিতা
এমন অন্যায় অবিচার ।
আমরা করেছি তৈরি আশারাম
রামরহিম আর কত শত ধাম
গুড্ডি নিখোঁজ আমাদের জন্যে
আমরা দুর্বল তাই বারবার
ঘটেছে এই ব্যাভিচার।

বন্ধু তুমি জেনে রাখো নিশ্চয়
যতদিন এই ভারতবর্ষেতে ধর্মীয় উন্মাদনা রবে
ততদিন হায় ভারতমাতা প্রতিপদে পদে ধর্ষিতা হবে।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments