ছেঁড়া পাতা


লিখতে মন বসছিল না । অজস্র মুখ চারপাশে আমাকে ঘিরে বসা। কেউ কেউ উজ্জ্বল, কেউবা নিতান্তই ঝাপসা । কেউ প্রচন্ড ভাবে সরব, কেউ নিশ্চুপ । কেউ মিটিমিটি হাসছেন, ভাবখানা কিহে আমাকে চিনতে পারছেন, আবার কেউ প্রচন্ড অভিমানী । আমি তাদের দেখতে পাই, কথা বলতে পারি, সঙ্গে নিয়ে চলতে পারি, কিন্তু ধরে রাখতে পারি না । আপন খেয়ালে তারা আমার সাথে লুকোচুরি খেলা খেলে । ইচ্ছে হলে ধরা দেয় নয়তো ----- ।

সে অনেকদিন আগের কথা, আমারা দুই ভাই তখন অনেক ছোট ।বয়স তখন কত হবে, বড় জোর ৪ কিংবা ৫ বছর । আমাদের ঘুম ভাঙ্গতো এক বৈষ্ণবের প্রভাতী গানে। সাদা ধবধবে ধুতিকে লুঙ্গির মত কোমরে ফেরানো তার উপর তেমনই সাদা হাফ হাতা ফতুয়া, কাঁধে একটা কাপড়ের থলি । দুই হাতে নিরন্তর করতাল বাজিয়ে উনি এবাড়ি থেকে ওবাড়ি গান গেয়ে গেয়ে ভিক্ষা করতেন। প্রতি দিন নতুন নতুন গান। কোন দিন "প্রভাত সময় কালে, শচীর আঙিনা মাঝে কার গৌর নাচিয়া বেড়ায় রে..." কোনদিন , "ভোর হইল জগত জাগিল, কেতনে জাগিল নারী নর...." এমনি আরো কত । বড় সুমিষ্ট ছিল উনার গলার আওয়াজ । দূর থেকে শোনা যেত করতাল ধ্বনি । আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যেত সেই গানে। উঠোনে পা রেখেই উনি হাঁক দিতেন, " কই গো আমার গোপাল ঠাকুর উঠে পড় , বেলা যে বয়ে যায়" । আমরা সেই ডাকের অপেক্ষায় থাকতাম, কখন উনি আসবেন, আমাদের আদর করে ডাকবেন। উঠোনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনি আমাদের গান শোনাতেন । তারপর ভিক্ষা নিয়ে পাশের বাড়ি থেকে পাশের বাড়ি হয়ে অজানা পথে পাড়ি দিতেন । আমাদের বাবা মা যদি কোনদিন ভিক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছেন তাহলে তিনি অত্যন্ত কুন্ঠা সহকারে জিজ্ঞেস করতেন, "আমার গোপালের কি শরীর ভাল নেই?" রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে উনি প্রতিদিন সকালে এসে হাজির ।ঘড়ির কাঁটার মত ছিল উনার চলা। আমরা দুই ভাই উনাকে দাদাঠাকুর ডাকতাম । আমাদের সাথে ক্ষানিক গল্প করে, আদর দিয়ে উনি চলে যেতেন । যদি আমরা জিজ্ঞেস করতাম, " দাদাঠাকুর তোমার বাড়ি কোথায়?" উনি হেসে আমাদের বুকে আঙুল ছুঁয়ে বলতেন, "এইখানে ।" আমরা দুই ভাই খুব হাসতাম, বলতাম, " তুমি কিচ্ছু জানো না, মানুষের বুকের ভেতর মানুষ থাকতে পারে নাকি ?" উনিও হাসতেন, বলতেন, "পারে বৈকি গোপাল, অবশ্যই পারে । সে এক কঠিন সাধনা, চেষ্টা করে দ্যাখো তোমরাও পারবে ।"
হঠাৎই একদিন উনি আর এলেন না । আমরা দুই ভাই ঘুম ভেঙে বিছানায় শুয়ে আছি, কখন দাদাঠাকুর আসবেন । সময় বয়ে যায়, দাদাঠাকুর আর আসেন না । কান পেতে শোনার চেষ্টা করি সেই করতালের আওয়াজ, সেই সুরেলা স্বর । বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকি সেই স্নেহের স্পর্শের জন্য, কিন্তু বেলা বয়ে যায় দাদাঠাকুর আর আসে না। অভিমান হয়েছিল খুব অভিমান হয়েছিল , বুঝি আমাদের সাথে দেখা না করেই দাদাঠাকুর ভিক্ষা নিয়ে চলে গেছেন । পরদিনও উনি এলেন না ।আমরা অপেক্ষায় রইলাম কিন্তু এলেন না । আমাদের হতাশ করে আর কোনদিনই এলেন না দাদাঠাকুর। সেই সাথে আমাদের গোপাল নামটাও চিরতরে হারিয়ে গেল । কষ্ট হয়েছিল । অনাত্মীয় ওই লোকটার জন্য বিনা কারণে খুব কেঁদেছিলাম সেদিন ।

তখন আমি সিক্স কিংবা সেভেনে পড়ি। আমাদের বাড়ি সেই পুরনো দিনের তৈরি । চারপাশে ঘর, মধ্যখানে উঠোন, তারই মধ্যে বেড়ে উঠা একান্নবর্তী পরিবার । আমাদের বাড়িগুলির নাম ছিল তার অবস্থান দিয়ে, কোনটি উত্তরের ঘর তো কোনটা দক্ষিণের ঘর । মধ্যের উঠোনে বিভিন্ন মরসুমে গ্রামের বাড়ি থেকে আসা ধান শুকানো হতো । আর কোন এক বারান্দায় বাবা জ্যেঠারা বসে আলোচনা করতেন নানা প্রসঙ্গে । আমরা দুই ভাই পশ্চিমের ঘরের জানালার পাশে বসে পড়াশোনা করতাম। এরই ফাঁকে আনমনে বারবার চোখ চলে যেত সামনের এক চাঁপা গাছে । প্রায় সারা বছর ধরেই কিছু না কিছু ফুল ফোটতো এই চাঁপা গাছে । আর তারই গন্ধে সমস্ত উঠোন সুবাসিত হয়ে থাকতো। একটি হলুদ রঙের ছোট্ট পাখি রোজ সকালে এসে বসত এই চাঁপা গাছের ডালে । কিছু সময় চাঁপা গাছের এডাল ওডাল ঘুরে একসময় উঠোনে ছড়িয়ে দেওয়া খাবার খুঁটে খুঁটে খেয়ে আবার ফুরুৎ করে উড়ে যেতে অন্য ঠিকানায়। যখন ধান শুকনো হতো না সেইসব দিন আমার মা কিছু চাল ছড়িয়ে দিতেন পাখিটির জন্য ।এটাই ছিল রোজকার রুটিন । একদিন সকালে সেই হলুদ পাখিটি তার মিষ্টি সুরে ডাকতে ডাকতে এডাল থেকে ঐ ডাল উড়ে বেড়াচ্ছে । এমনি সময় কোথা থেকে এক শিকারী বাজপাখি এসে হাজির ।চোখের পলকে সে হলুদ পাখিটিকে ঠোঁটে চেপে দূরের ঐ জাম গাছের ডালে গিয়ে বসলে । বিপন্ন হলুদ পাখিটি নিজের প্রাণ বাঁচাতে বুক ফাটা চিৎকার করে ছটফট করতে লাগল । বাজপাখির আচমকা আক্রমণে আমাদের বিমুঢ়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না । আমি চিৎকার শুনে বাইরে এসে হতবাক হয়ে গেলাম । কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । এদিকে দুপায়ে হলুদ পাখিটিকে গাছের ডালের সাথে চেপে ধরে ঠোঁট দিয়ে সেই বাজপাখিটি তখন হলুদপাখির মাংস তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাবার তোড়জোড় করছে । অন্য দিকে অর্ধমৃত হলুদ পাখিটির তখন সেকি ছটফটানি আর করুণ আর্তনাদ । আমরা প্রতিটি লোক হায় হায় করে উঠলাম, নিমেষে বাতাস ভারী হয়ে গেল, নিজেকে বড় অসহায় লাগছিল । কেউ কেউ বোঝালেন এটাই প্রকৃতির নিয়ম, আমি মানতে পারছিলাম না । মনে মনে সেই অদৃষ্টের কারিগরকে বলেছিলাম , " হে ঈশ্বর, তোমার বিচার সঠিক নয়, একটি প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখতে তুমি অন্য প্রাণীদের আঘাত হানো, তুমি তো নিষ্ঠুর নির্মম ।" চোখ ছলছল করে উঠলো সবার অলক্ষ্যে, বড় অসহায় আমরা । হঠাৎই আমার ছোটভাই বুদ্ধি করে একটা ঢিল ছুঁড়ে দিল পাখিটিকে লক্ষ্য করে । আচমকা এই ঢিলে বাজপাখিটি ভয় পেয়ে হলুদ পাখিকে ছেড়ে শুন্যে গেল । আর হলুদ পাখিটি পুনর্জন্ম পেয়ে সেই যে গেল আর ফিরে এলো না ।

তখন আমি কলেজে পড়ি, ঠোঁটের উপরে হালকা কালো দাগ । সবে স্কুলের গন্ডি ছাড়িয়ে কলেজের খাতায় নাম লিখিয়েছি । একগাদা বই নিয়ে এখন আর ছুটতে হয় না । পকেটে একটা পাতলা খাতা থাকে । যখন তখন ক্লাসে যাওয়া যায় আবার ফাঁকি দেওয়াও চলে বৈকি । সকাল থেকেই কাঠালতলা চুম্বকের মত টানে। কো এডুকেশন এর ফলে অনেক মেয়ে বন্ধু ।ওদের সাথে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে চুটিয়ে আড্ডা হয় । আর তারই মধ্যে যদি কেউ মনে ধরে গেল তবে আর চিন্তা নাই, হয়ে গেলাম বিনোদ খান্না নয়তো বিরহী রাজেশ খান্না, এইতো ছিল জীবন । এই সময়টাতে সব কিছুতেই যেন একটু প্রেমিক প্রেমিক ভাব। আকাশের মেঘে বর্ষাতে বসন্তের স্পর্শ, ঘাসফুলকে হঠাৎই খুব সুন্দর মনে হয়, পাশে বসা কোঁকড়ানো চুলের মেয়েটি বিনা কারণে সমস্ত মন আলো করে বসে । খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করে ।মা সরস্বতীর ক্ষণস্থায়ী আশীর্বাদে তখন, যখন তখন বিদ্যুৎ এর মত চমকে উঠতো কবিতা বা গান । তারই পাশাপাশি ছিল নিমেষে পৃথিবীকে পাল্টে দেওয়ার নিষ্ফল আস্ফালন । আসলে মূলত নিজেকে সকলের সম্মুখে আকর্ষণীয় করার এ এক ক্লান্তিহীন আপ্রাণ প্রচেষ্টা । এমনি কোন এক সময়ে কোন এক অনুষ্ঠানে ওর সাথে আমার পরিচয় । ছোট খাট দেখতে , ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকতে পছন্দ করত ও। অপূর্ব সুন্দরী নয় যদিও , তবু কিছু একটা আছে যা ওকে সবার চেয়ে আলাদা করে রাখে। প্রথম যেদিন ওকে দেখি আমি, সেদিন ছিল মহিলা নাটকের মহরা । আর দশটা মেয়ের সাথে নাটক করতে এসেছিল সে । সেখানেই আলাপ বা পরিচয়। বারবার ফিরে ফিরে ওকে দেখছিলাম, নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলাম না ।ক্রমে ক্রমে সে আলাপ রূপ নেয় বন্ধুত্বে। প্রায়ই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আমরা চলে যেতাম মোনালিসা রেস্তোরাঁ, অন্নপূর্ণা ঘাটে কিংবা দেবদূত সিনেমায় । দিনগুলো কর্পূরের মত উড়ে যাচ্ছিল । খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা । দুজনেই একই স্ট্রীমে থাকায় ওকে গাইড করতে কোন অসুবিধা ছিল না আমার । গ্রেজুয়েশন নিয়ে আমি চলে গেলাম পুনে, আরও পড়ার উদ্দেশ্যে । যাবার আগে সেদিন আমরা ডলুর লেকে বেড়াতে গেছি, দুজনেই চুপচাপ । নিঃশব্দ লেকে শুধু পাতা ঝরার শব্দ আর দুরের জলে খেলায় মত্ত একদল হাঁসের ডাক ছাড়া কোনও শব্দ নেই । আমরাও নিশ্চুপ, কোন কথা নেই । আমি লক্ষ্য করেছিলাম ওর চোখে মুক্তোর দানা । আমি নীরবে ওর হাতটা আমার হাতে নিয়ে আলতো একটা চাপ দিলাম । ও আপত্তি করল না । চোখের কোণায় হালকা রুমাল ছুঁয়ে বললে, " একটা কথা রাখবে ?"
-- "বলো..."
--- "আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চল .."
--- " কেন বলতো ?"
--- " আমার ভীষণ ভয় করছে ।"
--- " কিসের ভয় ?" আমি বললাম ।
--- "তুমি যদি ফিরে না আসো ।"
--- "পাগল নাকি ? আমাকে তো এখানে ফিরে আসতেই হবে । আমার সবকিছু যে এই শহরেই রইলো ।"
--- " থাক, তবুও...."
--- " থাক তবুও কি ? আমাকে তোমার বিশ্বাস হয় না ? " ও কোন উত্তর দেয় না । আমি আবারও বলি, "আমার উপর তোমার বিশ্বাস নেই ?"
--- " জানি না...."
দুজন সেদিন সেখানে দীর্ঘ সময় ছিলাম । প্রতিশ্রুতির পাহাড় গড়ে বাড়ি ফিরে কিছুই ভালো লাগছিল না । বুঝতে পারছিলাম না পুনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক হলো কিনা । সেই থেকেই আমি প্রতিদিন নিয়ম করে ফোন করি। প্রতিদিন ঐ একটা সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। তারপর কথা শেষে আবার অপেক্ষার পালা পরের দিনের জন্য । এইভাবেই একটি একটি করে দিন কাটছিল, ভালোই কাটছিল । ধীরে ধীরে কাজের ব্যস্ততায় ওকে আর সবসময় ফোনে পাওয়া কষ্ট হয়ে গেল । প্রায়শই ফোন কেটে একটা মেসেজ আসতে লাগলো, " ক্লাসে আছি, পরে ফোন করবো " কিংবা " টিউশনে আছি" । আমি বুঝতাম ওর উপরের চাপটা। যেদিন পরীক্ষা শেষ হলো, ঠিক করলাম সবাইকে একটা সারপ্রাইজ দিতে হবে । কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি অভিমুখে রওয়ানা দিলাম ।কতদিন আমাদের দেখা হয়নি । কতদিন আমি বাড়ি ছাড়া । মনে মনে ওর হাসি খুশি চেহারা কল্পনা করে একধরনের স্বর্গীয় সুখ অনুভব করছিলাম । বাড়ি পৌঁছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি হয়ে ওর সাথে দেখা করতে বেড়িয়ে পড়লাম । বুঝতে পারছিলাম না এতদিন পর ওকে কি উপহার দেওয়া যায় । আমাকে দেখে ও নিশ্চয়ই অবাক হয়ে যাবে। কলেজে গিয়ে এই মুহূর্তে ওকে কোথায় পাবো এই ভাবনার মধ্যেই ওকে খুঁজে পেলাম সেই কাঁঠাল গাছের তলায় । কাঁঠাল গাছের নীচে বেদীর ও আর একটা ছেলে গল্প করছে । একবার ভাবলাম ছুটে যাই, ছুটে গিয়ে বলি, এই দ্যাখো আমি এসে গেছি । তারপরই ভাবলাম একটু রহস্য করা যাক। আমি দুর থেকে একটা ফোন করলাম । দু চারটা রিং করার পর আমি দেখতে পেলাম ও ফোনটা কেটে দিল । বুঝলাম ও আমাকে দেখতে পেয়েছে । বুকের মধ্যে একটা উত্তেজনা, একটা অদ্ভুত আবেগ নিয়ে ওর অপেক্ষা করতে লাগলাম । কিন্তু না, আমাকে অবাক করে মেসেজ এলো, " ক্লাসে আছি, পরে ফোন করো ।" আশ্চর্য, তার মানে ও আমাকে দেখতে পায় নি । তাহলে ? তাহলে এটা কি হলো ? আমি আবারও ফোন করলাম ওকে । এবারও ফোনটা কেটে মেসেজ এলো, "ক্লাসে আছি " । নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল । কি করব বুঝতে পারছিলাম না । এই মুহূর্তে আমার এখানে থাকা উচিত কিনা বুঝতে পারছিলাম না । হঠাৎ পিছন থেকে একটি মেয়ের আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখি শ্রীপর্না । --- "দাদা তুমি কবে এলে ?" কি উত্তর দেব ভাবছি, তারই মধ্যে সে আবারো বললো, "খবর পেয়েছ নিশ্চয়ই ?" --- "কি ?"
--- " সামনের মাসে ওর বিয়ে ।" শ্রীপর্ণার ইঙ্গিত কার উদ্দেশ্যে আমার বুঝতে অসুবিধা হল না। পা থেকে ধীরে ধীরে সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে । অতি কষ্টে জিজ্ঞেস করলাম, " কার সাথে ?"
--- "ওই তো পাশে বসা ছেলেটির সাথে ।"
আমার পায়ের নীচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে । বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আমার ভুল হয়ে গেল । কি এমন হল যে আমাদের এত সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট হতে পারে । নাকি মানুষে মানুষে সম্পর্কটাই এরকম । কাঁচের চেয়েও হালকা, বালির বাঁধের চেয়েও ঠুনকো, সব সময় ভাঙ্গার প্রতীক্ষায় । সারারাত জেগে ঘরময় পায়চারি করে কাটিয়েছি । ঘুম আসছিল না । মানুষের উপর বিশ্বাস নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । বেঁচে থাকার ক্ষুধা হারিয়ে ফেলেছিলাম । আর কোনদিন ওর সাথে আমার কথা হয় নি ।

আজ বুঝতে পারছি দাদাঠাকুর তুমিই সঠিক ছিলে, মানুষের বুকের ভেতরই মানুষের মনের মানুষের বাস । কিন্তু তা সত্ত্বেও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি কোনদিনই ক্ষমা করতে পারব না । তুমিই প্রথম আমার মনের কোটরা খালি করে নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দিয়েছিলে। সেই থেকে একে একে হলুদ পাখি, সেই মেয়েটি, আরো অনেক অনেকে সবাই নিষ্ঠুর ভাবে আমার মনকোটরা শূন্য রেখে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । যাবার আগে শেষবারের মত বিদায় নেবার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করেনি কেউ । এখন সে কোটরাগুলো অনাদরে অযতনে ধুলায় ধূসরিত। শুধু অনাকাঙ্খিত আবর্জনায় ঠাসা। উপলব্ধি করতে পারছি দাদাঠাকুর, তুমি হলুদ পাখি কিংবা সেই মেয়েটি কেউ আমার আজীবনের চলার সাথি নও । একমাত্র আমি নিজে ছাড়া ।বাকি সব জীবনের পথচলায় এক একটা মাইলস্টোন, পথের বাকেঁ হারিয়ে যাও স্মৃতির গহ্বরে ।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments