তর্কে বহুদূর


লোকে বলে 'বিশ্বাসে মিলে কেষ্ট, তর্কে বহুদূর'। আমি কোন তর্কে যাচ্ছি না, শুধু এটুকু বলতে পারি যে বিশ্বাস আমার আগেও ছিল না এখনো নেই ।তবু বেশ কয়েকবার সৌভাগ্যবশতঃ কিংবা দুর্ভাগ্যজনিত কারণে আমার 'কেষ্ট' দর্শন হয়েছে । তাই কিভাবে এর ব্যাখ্যা দেব বুঝে উঠতে পারছি না ।
তাহলে বিষয়টা খুলেই বলি । বছর দুয়েক আগের কথা, আমি উদারবন্দ থেকে ফিরছিলাম । হরিহর চক্রবর্তীকে তো আপনারা সবাই চেনেন, উনার বাড়িতে কালীপূজা ছিল । আর সবার সাথে আমিও নিমন্ত্রিত ছিলাম । শিলচর থেকে আমি আর রংপুরের সুজিত দাস একসাথে গিয়েছি। আমরা দুজনেই শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণের আশ্রিত, সেই সুবাদেই পরিচয় ।
বিশাল আয়োজন, অনেক লোক নিমন্ত্রিত । পূজা শেষে প্রসাদ নিতে নিতে অনেক রাত্রি হয়ে যায়। হরিহর বাবু খুব অনুরোধ করেছিলেন থেকে যাওয়ার জন্যে । আমারও খুব একটা আপত্তি ছিল না, কিন্তু সুজিত বললে, - 'দাদা কালকে সকালও আমারে গৌয়াটি যাইতে লাগবো, তুমি থাকি যাও, আমারে থাকতে কইও না।'
- 'ধুর তা হয় নাকি, একসাথে এসেছি, একইসাথে ফিরবো।' - আমি বাধা দিয়ে বললাম । 'একা আর বোকা সমান।'
এট্ লাস্ট আমরা দুজনে রওয়ানা হলাম ‌। সুজিতের স্কুটি , ওই চালাচ্ছিল। আমিও চালাতে পারি, ইচ্ছে করছিল না । একে অমাবস্যা রাত, তার উপর ঘড়িতে তখন রাত একটা । রাস্তা ফাঁকা, অল্প আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে, আবারো হবে নিশ্চিত । আকাশে বাতাসে তারই পূর্বাভাস । আমরা লাঠিগ্রাম হয়ে মহাসড়কে পৌঁছলাম । পুরোনো রাস্তায় সুজিতের মৃদু আপত্তি আছে । ওর আবার ভয় ডর একটু বেশি ।মুখে কখনো স্বীকার করে না ।আমি পুরোনো রাস্তায় যেতে চাইলে, সুজিত আপত্তি জানিয়ে বললো, - 'ওই রাস্তা ভালা না দাদা, আমরা লাঠিগ্রাম হইয়া যাইমু।'
রাস্তা খারাপ মানে ভাঙা রাস্তা নাকি অন্য কোন কিছু ওই প্রসঙ্গ দুজনেই এড়িয়ে গেলাম । ফাঁকা রাস্তা তাই খুব বেশি সময় লাগলো না। কদমতলায় এসে সুজিত বলল, - 'দাদা একটা কাজ করলে কি হয় ।'
-'কি? '- আমি জিজ্ঞেস করলাম ।
-' ' আকাশের যে অবস্থা, যে কুনু সময় বিষ্টি ‌, আ‌ইতে পারে । আপনারে পৌঁছাইয়া আইতে আইতে অনেক সময় লাগবো, ইদিকে আবার কালকে আমারে গৌয়াটি যাইতে লাগবো। তার চাইতে আমি যদি বাড়িত নামি যাই আর আপনে আমার স্কুটি লই যাইন তাইলে কিরকম হইব।''
"হ্যাঁ তা অবশ্য পারি।" - আমি বললাম ।
"পরে নাইলে কুনু সময় আমি গিয়া লই আইমুনে।" - সুজিত সংযোজন করলে।
প্রস্তাবটি মন্দ নয়। ওকে আর কষ্ট করে যেতে হবে না, সময়টা বাচবে । সেইমত সুজিতকে বাড়িতে ছেড়ে আমি ওরই স্কুটি নিয়ে রওয়ানা দিলাম । দিনের বেলা ভিড়ে আমার টু হুইলার চালাতে ভয় হয়, রাত্রিতে সে সমস্যা নেই । মনে মনে মায়ের নাম স্মরণ করে রওয়ানা দিলাম । পুরো রাস্তায় আমি একা। জনমানবের চিহ্ন কোথাও নেই । একা একা মাঝারি গতিতে চলছি । বেশি জোরে চালাতে ভয় হয় ।যখন বি বি এন্ড সন্স পেট্রোল পাম্প এর সামনে এসেছি তখন দেখলাম করাতীগ্রামের রাস্তা থেকে বাইক জাতীয় কিছু ব্রীজের উপরে উঠছে । একটা কুকুর ভয় পেয়ে গোঙাতে গোঙাতে পালিয়ে গেল । মনে মনে হাসলাম, আমার মত বাউণ্ডুলে তাহলে আরো অনেক আছে । আমি আমার আপন মনেই যাচ্ছি । ব্রীজের মাঝামাঝি এসে একটা মেয়েলি গলায় হালকা আর্তনাদ শুনে চমকে উঠলাম । দেখি আমার অল্প আগে দেখা স্কুটিটি মাটিতে পড়ে আছে । পাশেই একটা মেয়ে মাটিতে আধশোয়া । মেয়েটির একটি পা তখনও স্কুটির নীচে ।ইঞ্জিন বন্ধ হয়নি, পেছনের চাকাটা বনবন করে ঘুরছে । আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার টু হুইলারটি পার্ক করে মেয়েটির দিকে ছুটে গেলাম । ইঞ্জিন বন্ধ করে স্কুটিটি স্যান্ড করে দেখি মেয়েটি তখনও মাটিতে বসে আছে । আমি মৃদু স্বরে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, "খুব লাগলো?"
- "নাঃ, তেমন কিছু না ।" - বেশ কষ্ট করেই মেয়েটি উত্তর দিল। খুব বেশি বয়স হবে না মেয়েটির, ২৩ থেকে ২৪। খোলা চুল, পড়নে চুড়িদার। আধো ‌আলো, আধো অন্ধকারে মেয়েটিকে সুন্দরীই মনে হল। মুখে অস্বীকার করলেও চোট যে ভালোই লেগেছে তা বেশ বুঝতে পারছিলাম ।
- "দাঁড়াও, এখনই উঠতে যেও না ।" ‌আমি মেয়েটিকে সাবধান করলাম । - "আগে একটি একটি করে পা নাড়িয়ে দেখো, কোথাও লেগেছে কিনা, তারপর উঠে দাঁডিও।" মেয়েটি বাধ্য মেয়ের মতো একটা একটা করে পা নাড়িয়ে দেখলো ।
- "কোথাও লাগলো?"
- "না বেশি লাগেনি।" বুঝলাম সহ্যের মধ্যে আছে ।আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম । মেয়েটি আমার হাত ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল ।
- "পারবেতো স্কুটি চালিয়ে যেতে?" মেয়েটি ম্লান হেসে ঘাড় কাত করে সম্মতি জানালো । আমি মেয়েটির হাত ধরে স্কুটিতে বসতে সাহায্য করলাম । ও ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে আমি পিছন ফিরে আমার স্কুটির দিকে এগিয়ে গেলাম । মনে মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। নির্জন রাস্তা, গভীর রাত, আমার হাতে এক অল্প বয়সী যুবতীর হাত। না না ওসব কিছু ভাবার কারণ নেই, তবে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলেও আমার মতো নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতেন ।
মেয়েটি স্টার্ট দিতেই আমিও পিছন ফিরে আমার স্কুটির দিকে রওয়ানা দিলাম । হঠাৎ কি মনে হতে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, মেয়েটি স্কুটি স্যান্ড করে এদিক ওদিক কি যেন খুঁজছে।
- "কি হলো, কি খুঁজছো?"
- "আমার মোবাইলটা পাচ্ছি না ।" মেয়েটি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল । আমি আবার ঘুরে মেয়েটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম ।
- "অনেক দামী মোবাইল দাদা, এই কিছুদিন আগে কিনেছি ।" - আপন মনে মেয়েটি বিড়বিড় করতে লাগল ।আমি আমার মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে এদিকে ওদিকে ‌, খুঁজলাম, কিন্তু পেলাম না ।
-- "দাদা আপনি আপনার মোবাইল থেকে একটা রিং করুন না প্লিজ ।"
গুড আইডিয়া, আমি সাথে সাথেই তার মোবাইলে ফোন করলাম । সঙ্গে সঙ্গে ওর মোবাইল বেজে উঠলো । স্বভাবতই খুশিতে মন ভরে গেল । আমরা আওয়াজ লক্ষ্য করে খুজতে খুজতে তাকিয়ে দেখি মেয়েটির কপাল খুব ভালো ।মোবাইলটি মাটিতে পড়ে ছিটকে গিয়েও নদীতে পড়ে নি। মেরামতির জন্য ব্রীজের নীচে ও বাইরের দিকে যে কাঠের ফ্রেম বানানো হয়েছে, সেখানে আটকে আছে ।
এখন দেখা দিল নতুন সমস্যা । রেলিং এর ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়েও কিছুতেই মোবাইলটি ছোঁয়া যাচ্ছে না । এদিকে কোন বড় গাড়ি ব্রীজে উঠলে মোবাইলটি যে সেই অবস্থায় থাকবে তারও কোন গ্যারান্টি নেই । প্রথমে মেয়েটি পরে আমি নিজেও রেলিং এর ফাঁকে যতটা সম্ভব শরীর ঢুকিয়ে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে দেখলাম, কিন্তু কিছুতেই মোবাইল পর্যন্ত পৌঁছতে পারছি না । অগত্যা আমি হাল ছেড়ে বললাম, "এখন বাড়ি যান, ভোর বেলা আসবেন আমিও আসব, দেখি কি করা যায় ।"
--"কিন্তু সারারাত কি মোবাইলটি ওই জায়গায় থাকবে দাদা, একটা বড় গাড়ি গেলেই তো সব শেষ ।"
--"কিন্তু এ ছাড়া তো কোন উপায় নেই ।"
--"আছে, আপনি যদি রেলিং এর বাইরে দিকে গিয়ে ঝুকে একটু চেষ্টা করেন, তবেই হবে ।"
--"মাথা খারাপ? আমি সাঁতার জানি না, যদি পরে যাই।" -- আমি আঁতকে উঠলাম ।
--- "না না পড়ে যাবেন কেন? আপনিতো একহাতে রেলিং আঁকড়ে থাকবেন ।" - - মেয়েটি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল ।
-- "অসম্ভব আমার দ্বারা হবে না ।" আমি বললাম ।
-- "প্লিজ দাদা, একবার আমার জন্য চেষ্টা করুন ।" মেয়েটির অনুরোধে কেমন যেন একটা মায়া, একটা সম্মোহনী, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না । ওর অনুরোধ ফেরানো খুব কঠিন । তবু মনের সকল দন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে অনেক কষ্টে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমার দ্বারা এর বেশি সাহায্য করা সম্ভব নয় । আমার স্থির সিদ্ধান্তে মেয়েটি খুব ‌, আহত হল। কষ্ট যে আমারও হচ্ছিল না তা নয় ।কিন্তু এতে ঝুকি অনেক বেশি ।আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না আমার এই মুহূর্তে কি করা উচিত । মেয়েটিকে এই গভীর রাতে একা ছেড়ে চলে যাবো, বিবেকে মানছিল না ।আবার থেকেই বা কি করব । আমার পা দুটো কোনো ভারী চুম্বকের টানে ওখান থেকে ফিরে আসতে চাইছিল না । এদিকে আমার সাহায্য না পেয়ে মেয়েটি ধীরে ধীরে রেলিং এর দিকে এগিয়ে গিয়ে দু দিকে দু পা দিয়ে নিজেই রেলিং এ চেপে বসলো । আমি আঁতকে উঠলাম, যদি মেয়েটা পরে যায় ।
--"দাঁড়াও আমি আসছি ।" আমি সম্মোহিতের মত রেলিং এর দিকে এগিয়ে গেলাম । মেয়েটি মিষ্টি করে হেসে রেলিং থেকে নেমে এল ।আমি চটি খুলে রেলিং এ চেপে বসলাম । ধীরে ধীরে ডান পা আর ডান হাত দিয়ে রেলিং এর উপরের বীমটা শক্ত করে আঁকড়ে বা পা টি বাইরের দিক থেকে ব্রীজের কোনোয় রাখলাম ।মনে ভীষণ ভয় যদি পড়ে যাই। মেয়েটি আমার পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দিতে লাগলো । মনে মনে সাহস সঞ্চয় করলাম । এবারে আস্তে আস্তে ডান পা ও হাতটা শক্ত করে রেলিং এ আঁকড়ে সমস্ত শরীরটা শুন্যে ঝুলিয়ে বা হাতটা মোবাইলের দিকে বাড়িয়ে দিলাম ।নীচে ঘন অন্ধকার, সমস্ত শরীর এক উত্তেজনায় শিরশির করছে । একটা পেঁচা কোথায় যেন কর্কশ স্বরে ডেকে উঠলো । লোকে বলে পেঁচার ডাক নাকি শুভ নয। হোক, তবু আমাকে মোবাইলটি তুলে আনতে হবে ।ধীরে ধীরে আমার কোমর বুক রেলিং থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছে । ডান হাত প্রায় টানটান সোজা ।মেয়েটি পাশে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত সাহস যুগিয়ে যাচ্ছে । আরও একটু ঝুঁকে গেলেই আমি মোবাইলটা ধরে ফেলতে পারবো। মনের ভয় অনেকখানি কেটে গেছে । ক্রমে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে ।
--- "দাদা আপনি পারবেন ।"
হ্যাঁ আমি পারবো, আলবৎ পারবো। আমাকে পারতে হবে ।এইতো মোবাইলটা আমি ছুয়ে ফেলেছি । ঠিক এমনিসময় কে যেন শক্ত হাতে আমাকে এক হেঁচকায় শুন্যে তুলে ব্রীজের ওপর ছুড়ে ফেলে দিল। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশের পোশাক পরা লোকটা আমার কলার টেনে উঠিয়ে গালে কষে একটা চড় মেরে বসল । মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে গেছে । এভাবে পট পরিবর্তনের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না ।
--"এতক্ষণ ধরে লক্ষ করছি একা একা বারবার রেলিং এর আশেপাশে ঘুরঘুর করছিস, তখনই বুঝতে পারছিলাম তোর মতলবটি সুবিধার না ।" - - সঙ্গের পুলিশটি বললো।
-- "মরতেই যখন যাচ্ছিলি তখন রেলিং এ ঝুলে এত সার্কাস দেখাচ্ছিলি কেন?" --- আরেকটা পুলিশ বলে উঠলো । প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন ।
-- "কে মরতে যাচ্ছে? আমি তো মোবাইল তুলতে যাচ্ছিলাম ।"
-- "মোবাইল?" কার মোবাইল? "
--" কেন, ওইতো ওই ভদ্রমহিলার - " বলে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি নেই । এপাশ ওপাশ খুজে দেখলাম, কোথাও নেই মেয়েটি । ওমা ওর স্কুটিটিও নেই । আমি হতভম্ব, এ কি করে সম্ভব ।
--" এই ওকে গাড়িতে তোল, ওর মেডিক্যাল করিয়ে লকআপে ছেড়ে আসতে হবে । পিঠে দু এক ঘা পরলেই আত্মহত্যার ভুত এমনিতেই পালিয়ে যাবে।" সাব ইন্সপেক্টরটি হুকুম দিলেন । আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন আমি আত্মহত্যা করতে যাবো। ওদের মধ্যে একটি পুলিশ একটু নরম মনের মনে হচ্ছে । আমাকে জিজ্ঞেস করলো, " আপনি সত্যি করে বলুন তো কেন আপনি সুইসাইড করতে যাচ্ছিলেন ।
--" আমি তো কখনোই সুইসাইড করতে যাইনি ।" আমি আবারও প্রতিবাদ করলাম।
-- "তবে?"
আমি ধীরে ধীরে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম ।আমার বাড়ি কোথায়, কি করি, কোথা থেকে আসছিলাম, সঙ্গে কে কে ছিল, এখানে এসে কি দেখলাম, সব, সব বললাম । ওরা শুনলো, মন দিয়ে সব শুনলো। আমার কাছ থেকে হরিহর চক্রবর্তী ও সুজিতের ফোন নাম্বার নিয়ে কি সব কথা বার্তা হলো । শুধু মেয়েটির ফোন নাম্বার আমার কল লিস্টে কোথাও খুঁজে পেলাম না । আমি অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছি ।
অল্প পরে সাব ইন্সপেক্টরটি আমাকে বললো, " এভাবে এত রাতে কখনো একা চলা ফেরা করবেন না, দিনকাল ঠিক নেই । চলুন আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসি ।"
আমাকে নিয়ে সাব ইন্সপেক্টরটি জীপে চাপলো । বুঝলাম যে ওরা বুঝতে পেরেছে আমি আত্মহত্যা করতে চাই নি।পেছনের সিটে আমি আর সেই নরম মনের পুলিশটি বসলাম । একটা পুলিশ আমার স্কুটিটি স্টার্ট দিল। আমি চুপচাপ । পাশের পুলিশটি ফিসফিস করে বলল, " জায়গাটি ভালো নয়, এভাবে এত রাতে কখনো একা চলাফেরা করবেন না । কপাল ভালো আমরা ঠিক সময়ে এসে গেছিলাম । মা কালীর কৃপায় আপনি বেঁচে গেলেন । আমি চুপ করে রইলাম, উত্তর দিয়ে লাভ নেই । অল্প থেমে পুলিশটি আবার বললো, " মালুগ্রামের সেনগুপ্ত বাবুকে চেনেন, ব্যাঙ্কে কাজ করেন ।"
বললাম, " চিনি-"
-- "গত সপ্তাহে এই রাস্তায় বাড়ি ফিরছিলেন। রাত প্রায় বারোটায়, নিজে গাড়ি চালিয়ে । সঙ্গে ওনার স্ত্রী । ঠিক এই জায়গাতে এসে দেখেন আপনার মেয়েটার মত একটা মেয়ে ওর দিকে হাত নাড়তে নাড়তে স্কুটি করে চলে যাচ্ছে । আর সেনগুপ্তবাবু সেই মেয়েটিকে দেখতে গিয়ে ঠিক আপনার এই জায়গাতেই এক্সিডেন্ট করে বসেন। গাড়ি এখনও ওয়ার্কসোপে ।
গত সপ্তাহে শান্তনুর এক্সিডেন্টের খবর আমি জানি, কিন্তু এই গল্পটা জানতাম না । আমি এবারেও চুপ থাকলাম ।
বাড়ি ফিরে বিছানায় শুয়ে আছি, মেয়েটির চেহারাটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল । শান্তনুর গল্প শোনার পরেও আমি কিছুতেই মেয়েটিকে একটি রক্ত মাংসের মেয়ে ছাড়া কিছুই কল্পনা করতে পারছিলাম না । ওর চেহারা, ওর কথাগুলো, ওর শরীরের স্পর্শ আমি বারবার অনুভব করতে পারছিলাম । অথচ এক নিমিষে মেয়েটি স্কুটি সহ কি করে হাড়িয়ে গেল তার কোন যুক্তি আমার কাছে নেই ।
শুনলে আশ্চর্য হবেন, এরপরও আমি পার্থ শীলকে নিয়ে বেশ কয়েকবার মাঝ রাতে এই রাস্তায় মেয়েটিকে খুজে ফিরেছি, কিন্তু পাইনি ।আজও কোন এক নিস্পলক নিঝুম রাতে নিঃসঙ্গতা কাটাতে যখন স্মৃতির রোমন্থন করি, তখনই সেই স্কুটি চালানো মেয়েটি আমার সামনে এসে কাতর স্বরে বলে, " প্লিজ দাদা একবার আমার জন্যে চেষ্টা করুন, প্লিজ ।"

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments