বুলেট


--- "এই যে শুনছো, সকালে প্রেশারের ঔষধ নিয়েছিলে? কি ভাবছো ? কিছুই আমার নজরে আসে না । কত বার বলেছি রোজ সকালবেলায় নিজের ঔষধ নিজে মনে করে খাবে। কোন কথাই গায়ে লাগে না তোমার, তাই না । আচ্ছা তুমি কিগো ? "
কি উত্তর দেবেন শশাংকবাবু । সত্যি ভূল হয়ে গেছে । তাই নিরুত্তর রইলেন শশাংক শেখর বোস।
--- "কি করে খাবে ঔষধ তুমি, তোমারতো ঔষধ গতকালই শেষ হয়ে গেছে । ছেলেকে বলোনি কেন? ওতো অফিস ফেরত তোমার ঔষধ নিয়ে আসতে পারতো। সত্যি তোমাকে নিয়ে আর পারি না ।তোমার নিজের ঔষধ শেষ হয়ে যায় তোমার মনে থাকে না। তুমি কেমন মানুষ বলোতো ।
---" আহা সকালবেলায় এত রাগ করছো কেন বলতো? বললামতো আজকেই নিয়ে আসবো।"
--- "রাগ কি আর সাধে করি। প্রেশারের ঔষধ রোজ খেতে হয় ।আচ্ছা তুমি গতকাল সকালে ঔষধ নিয়েছিলে তো।
-- " নিয়েছি"
-- "মিথ্যা কথা, একদম মিথ্যা কথা । আচ্ছা তোমার লজ্জা করে না মিথ্যা কথা বলতে । বুড়ো হয়ে গেছে তবু স্বভাব পাল্টাতে পারলে না । তাও যদি মিথ্যা কথাটা ঠিক করে বলতে পারতে । আচ্ছা তুমি কি কিছু বোঝ নাগো । তোমার যদি কিছু হয় তবে কে দেখবে তোমাকে বলতো।
--" কেন তুমি? তুমি আছো কি করতে?
---" ন্যাকামো করো না, আমি কি সারাজীবন তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব?
--- " তবে কি?"
---" শখ কত--"
-- " কোথায় চললে?"
---" কোথায় আবার, তোমার ঔষধ আনতে ।"
শশাংকবাবু বারান্দায় চেয়ারে বসা । এই জায়গাটা উনার খুব প্রিয়, এখানে বসেই ওরা স্বামী স্ত্রী দুজনে সকালের চা খেতে ভালোবাসেন । আজ ঔষধ খাওয়া হয়নি ।

--- "বাবা বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে থাকবেন না, ঠান্ডা লেগে যাবে । ভেতরে যান, আপনার চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ।" বৌমার ডাকে শশাংকবাবুর আনমনা ভাব কেটে যায় ।
---" হ্যাঁ যাই--- । আচ্ছা তুমি কি কোথাও যাচ্ছো বৌমা? "
---" হ্যাঁ বাবা । কিছু চাই আপনার? "
---" হ্যাঁ মা আমার ঔষধ ----। না থাক, ও কিছু নয় । তুমি বরং ফেরার পথে কিছু রজ - - - - না থাক আমি নিজেই আনবো ।"
-- "তাই হবে বাবা ।"

-- " কি হলো, তাকিয়ে দেখছো কি? এত ঔষধ খেয়ে কার জন্যে বেঁচে থাকবো বলতে পারো? ওসব খেতে আর ভালো লাগে না, মনেও থাকে না । আমাকে একা ছেড়ে তুমি ভালো আছো তো ?" পাঞ্জাবীর কোনা দিয়ে ফটোটি আলতো করে মুছে দিলেন শশাংকবাবু । একটা দীর্ঘশ্বাসে সকালের নির্মল বাতাস ভারী হয়ে গেল । চশমার ফাঁকে নিজেকে লুকিয়ে আরও একবার নিজের চোখের কোণে হাত বুলিয়ে নিলেন তিনি । কেউ দেখতে পায় নি তো ।

Comments