রবি ঠাকুর


ফটো সংগ্রহীত

রবি ঠাকুর, আজ তোর পূজা
সকাল থেইকে কেবল ছুটছি
আর ছুটছি । তোর পূজা বইলে কতা
কত লোক আসবেক, গায়ের মাথা,
ঐ মোড়ল বেটা, হারু মাহাতো,
হেড মাস্টর, কালেক্টর আর কত কত ।
গুটেক গায়ের যত বৌ বেটি আছে
চুঙা ফুঁকে ফুঁকে নিমন্ত্রণ গেছে সব্বার কাছে
আইসতে হবেক, সব্বাইকে আইসতে হবেক
আজ রবি ঠাকুরের পূজা বইলে কতা ।

হামদের ইস্কুলে, সেইই আগে থেকে
প্রতি বছর দুট্টা পূজা হয়
এটা স্বরস্বতী মাই, আর একটা তোর
ফুল মালা, ধূপ দীপ যা প্রেজন
সব আইনেছি, তোর পূজার কারণ
শুধু দেইখলাম পূজারী আসে লাই
হেড মাস্টার বইলে, "লাগবেক লাই।
হি হিন্দুর ঘরে জন্মিছে বটেক
কিন্তুক তার কোনো জাতি লাই, ধর্ম লাই
কোন মূর্তি লাই, কোন মন্ত্র লাই
যে তার পূজাটো করবেক
তার পৈতেটা পর্যন্ত লাগবেক লাই।"
অবাক কতা, সত্যি অবাক বটেক
শুধু একটা ফটু, তায় একটা মালা
সামনে কিছু ফুল, সাথে ধুপটো জ্বালা,
বড় অদ্ভুত তোর পূজা বটেক
গান হয়, কবিতা হয় কিন্তুক মন্ত্র লয়
ভাষণ, নাচ, নাটক কত কিছু হয়
কিন্তুক প্রসাদ লয় । হেড স্যার বইলে
ই পূজায় এটাই রীতি। মানতি হবে,
তোকে বাপ মানতি হবে।

সক্কাল থেইকে তোর পূজার কারণ
শুধু ছুট্টেই চলেছি, যখন তখন ।
মাইক লাগায়েছি, মঞ্চ সাজায়েছি
একটা বেদী করে তোর ফুটু বসায়়েছি
হেড স্যার বইলে, "লোকটা কে জানিস?"
মুই বইল্লু," হবেক কোন ঠাকুর দেবতা
মোদের হিন্দুদের তো কোটি দেবতা হয়,
সে হবেক বা তার কোন একটা ।"
স্যার বইল্লে, " দুর বোকা হি সে ঠাকুর লয়,
তোদের পাঠ্য বইয়ে যি প্রার্থনা কবিতাটো আছে
সক্কাল বেলা যি গানটো গেয়ে স্কুল শুরু হয়
সব কেইটা লিখা এই রবি ঠাকুরের হয় ।"
মাইনতে হবে বাপ, তোকে মাইনতে হবে লিশ্চয় ।

সক্কাল থেইকে গায়ের যত বুড়া, বেটি আছে
সব আইসে জমা হলে ইশকুলের মাঠে
গান হলে, কবিতা হলে, কাশীখুড়ার বেটিটা
নাইচে দিলে গানের সাথে, কি ছিল যেন কথাটা ।
মুই থায় বইসে রইলো, অবাক লাগি যায়
এমন সুন্দর কথা, সিও লিখা যায় ।
হেডস্যার বইলে, "ই বুড়ো বহুত বড় বেটা
বহুত বই, বহুত গান বহুত কবিতা
পইড়তে হলে, একটা জীবন লাইগবে গোটা ।"
মুই অবাক হয়ে ভাবি, হি কেমনতর বেটা
হবে বা তার বয়স অনেক, গালে ভর্তি দাড়ি
কেমন করে লিখলে খুড়ো, এত কাড়ি কাড়ি।
হবে বা সাধু মানুষ, অনেক তুকতাক জানে
নইলে কোন বাপের বেটার সাধ্যি আছে
এত কথা লিখে । মাইনতে হবে, বাপ
মাইনতে হবে তার কলম ঘেঁষার জোর
যিমন সুন্দর কথা তায় এমন সুন্দর সুর।
মনার মাটো ঠিকই বইলছে, সত্যি কতা বটে
ই মানুষটার কথার জোরে দশটা জিন খাটে।
কতাটো যে মোটেও ফেইলে দেওয়ার লয়
ই মানুষটার মুঠির মধ্যে জিন আছে লিশ্চয় ।
ই বেটাকে যদি একবার কষে ধরা যায়
একটা দুটা বর যদি চেয়ে লেওয়া যায়
জীবনটা ঘুইরে যাবে, পাইল্টে যাবে সব
গায়ের মানুষ মান্যি করবে, সেলাম কইরবে সব।
ধরতে হবে, শক্ত করে পা দুটো চাইপতে হবে
বলতে হবে, শুনো, শুনো সাধু বাপ ঠাকুর
তোমার অনেক এলেম আছে, আছে মন্ত্রের জোর
দেইখছো লিশ্চয়, তোমার জন্যে অনেক কইরেছি
সেই সক্কাল থেইকে গায়ে গতরে ব্যাথা তুইলেছি
যদি তুমি সত্যিকারের সাধুর চেলা হও
যদি তুমি সত্যি সত্যি ঠাকুর বেটা হও
তবে বাপ, দোহাই তোমার আমার দিকে চাও
যাবার আগে দয়া করে বরটা দিয়ে যাও।
ভাত চাই না, ঘর চাই না, ইসব কেনা যায়
তোর মত মুর কলম যেন, ছোটে ছোটে যায় ।
তোর মত মুর কলমে যেন সাত সুরেরা খেলে
স্বরস্বতীর হুকুম লিয়ে মুর কলমটি চলে।

কি করে যে সময় গেল, কাইটে গেল বেলা
হেডস্যার বইল্লে, এইবারেতে শেষ হবে এ সভা।
ফুল রাখেছি ফটুর পাশে, নিও একএকমুঠা
যাতি সময় ফটুর পায়ে দিও সেই গোটা ।
হাত জোরলাম, শক্ত কইরে পা দুখানা চাইপে ধরলাম,
মনে মনে ঘুইরে ঘুইরে বইল্লাম সব কতা
তার সাথেতে বইল্লাম তারে, যদি পারিস লাই
আশীষ করিস তোর লেখাটো পড়তে যেন পাই ।
তোর লেখাটো বুঝতে পারি, তোরই মত ভাবতে পারি
ভুবনটারে তোর ভাবনায় দেইখে যেতে চাই ।
সাধুবাবা, আশীষ কর,
ভুবনটারে তোর ভাবনায় দেইখে যেতে চাই ।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments