কবিগুরু


ফটো সংগ্রহীত

হাল আমলে এক ফ্যাশন শুরু হয়েছে
যা ঘটেছে তাকে ভুল বলতে হবে
যা ভুল তা নিয়ে স্বপ্ন সাজানো যাবে।
যে মানী তার মান হরণ করো
যার মান হরণ হয়েছে তার তোরন তৈরি করো
যা সুন্দর তার খুত বলতে হবে
যা খুতে ভরা তার রূপ খুলতে হবে ।
যা মনে আছে তা মুখে বলা যাবে না
যা মুখে বলা হবে তা মেনে নেওয়া যায় না ।
তাই হে বন্ধু, আজ মান্যবর কেউ বলতেই পারেন

এই যে রবিদা, হ্যাপি বার্থ ডে
জন্মদিনে তোমার জন্যে
অনেক অনেক শুভেচ্ছা
ভালো থেকো, সুস্থ থেকো
আর আমাদেরকে বাঁচিয়ে রেখো ।

বেশতো আছো গুরু, আরাম কেদারায়
এসি হলের মঞ্চে, গলায় মালা দোহারা
এক গাল দাড়ি সহ লালটু মার্কা চেহারা
বসে আছো যেন কিচ্ছুটি জানো না,
আর আমরা গুরু দরজায় দরজায় ঘুরছি
কি না তোমার জন্মদিন পালন করছি।
মাইরি গুরু, বেশ আছো মামার বাড়ি
কোনদিন খাইয়েছ রসমালাই এক হাঁড়ি
একটা ক্যাডবেরী সেলিব্রেশন
নিদেনপক্ষে এই গরমে লস্যি কিংবা তাঁড়ি ।
একবার ভেবে দেখেছো কেমন কপালটি তোমার
তোমার জায়গায় আমি হলে হতাম পগার পার।
আমাদের জন্মদিনটা একদিনেতে হয়
তোমার গুরু সেই একদিনটা মাস ভরা রয়।
আজকে যদি বঙ্গভবন কালকে লাইব্রেরি
পরশু দেখবো পাত পেতেছো উপাধ্যক্ষের বাড়ি ।
গাদা ফুলের মালার সাথে রজনীগন্ধা স্টিক
কেমন গুরু দাঁড়িয়ে আছো, যেন হকি স্টিক
এই গরমে আলখাল্লা, তায় মুখে হিরো মার্কা হাসি
বোঝার কোন উপায় নেই, ফ্রেশ নাকি বাসি।
আচ্ছা খুড়ো তোমার কি এসব ভালো লাগে বল
আদ্যিকালের নাচ, তাতে হাত ধরে ঘুরপাক
সঙ্গে তাধিনা তাধিনা বাজিয়ে গান একসাথে
বোরিং, তিনটে শুনলে ঘুম এসে যায় চোখে ।
তুমি গুরু বেশ মজার মানুষ আছো
এই কচি কচি বাচ্চা মেয়েরা নাচছে
তুমি বসে তাই দেখছো আর হাসছো
ভাবছো কেমন জব্দ করেছো আমাদের
যে নাচটি আমাদের দেখার কথা
তুমি বসে মজা লুটছো তাদের ।
আর আমরা তখন পায়ের ঘাম মাথায় তুলে শুধু
আর্টিস্টদের মন রাখতে ঘুরছি পিছু পিছু
কেউ চাইছে আগে গাইতে, কারো চাই টাকা
ডাইরীটি ভুলে গেছি, হোটেলেতে রাখা ।
কেউ বলছে চা হবে, গলাটা যে ধরেছে
এই মেয়েটা নাচবে কি? কি ড্রেস পড়েছে!
L শালা কত শত ঝক্কি, সাথে নানা ঝামেলা
তুমি বেটা সাধু পুরুষ পড়েছো আলখাল্লা ।
কিনা লিখেছ বাপ, ছাই পাশ কবিতা
তাই নিয়ে বাপরে , কত না আদিখ্যেতা
তাও লিখেছ কবে, না শতবর্ষ পূর্বে
পেনপেনে সব কবিতা তাও নানা পর্বে।

বন্ধ কর, স্তব্ধ কর, রুদ্ধ কর স্বর
সময় এসেছে এবার, হতে সোচ্চার
নিজেরে করিতে প্রকাশ কে করিছে ছল
অন্যায় অবিচারে গড়িয়াছে দল
করিতে নিজেরে শ্রেয়, কারে তুমি কর হেয়
কারে কাড়ি কার গলে দাও বরহার ।
কার গায়ে কালি দাও,তার সম আগে হও।
বিকৃতিরে বর্জন করি কর প্রতিকার ।
পুরাতে অভিলাষ
মানীরে আনিছ টানি, কর মান নাশ।
যে জন আসনে সাজে
তারে টেনে পথ মাঝে কর সর্বনাশ ।
বন্ধ কর, স্তব্ধ কর, রুদ্ধ কর স্বর,
সময় এসেছে এবার হও সোচ্চার ।

হে গুরুদেব, হে বিশ্বকবি
নিও নাকো অপরাধ মোর।
এযাবৎ যাহা কিছু শুনিয়াছি ,
যাহা কিছু জানিয়াছি
মিথ্যা, সবই মিথ্যা, মিথ্যা অতিঘোর।
তোমারে কেন্দ্রে রাখি যতদূর যাই
তোমার ব্যাপ্তি মাঝে নিজেরে হারাই,
অপার বিস্ময় ভান্ডার, ব্রহ্মাণ্ড সম
আমারে দিও ঠাঁই হে বান্ধব মম।
আমার ভাবনায় যাহা কিছু আসে
তবে পুস্তকে তাহা ছবি হয়ে ভাসে।
কত আধুনিক তুমি, দুর অতিদুর দ্রষ্টা
ক্ষমিও মোরে, হে কবি, হে অপরূপ স্রষ্টা ।
জীবনের প্রতি ধাপ, আনন্দ অনুতাপ
আশা নিরাশার মাঝে প্রেম প্রীতি সন্তাপ
প্রতিপদে প্রতিক্ষণে যাহা কিছু জানি
সকলি তোমারই দান , তোমাকেই মানি
মনে যত গান আছে যত আশা ভালবাসা
যখনই প্রকাশিছে তা, সে তোমারই ভাষা
তোমাতে দেখেছি স্বপ্ন, বেঁধেছি যে ঘর
বিরহে কেঁদেছি যখন সেও তব স্বর
যখন একেলা আমি অন্ধকার পথে
সুর হয়ে জাগো তুমি অসুরেরে হরে
আজই এ ব্রাহ্মক্ষণে হে প্রভু মম
যাহা কিছু মম আছে তোমাতে সপিনু
আশীষ করো হে নাথ, হে বিশ্বপিতা
তব পদে আজীবন নত থাকে মাথা।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments