রাত বারোটায় থমকে গেল ঘড়ি ।
কাঁটাগুলো ক্লান্ত ছিল,
অনেক দিনের পুরনো তো,
সময় সময় পিছিয়ে যেত ;
আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো, করুণ দৃষ্টিতে -
আমি তখন মিষ্টি হেসে ভরসা দিতাম
অল্প সল্প ঠেলে দিতাম, দোস্তি ছিল,
অনেক কথা গল্প হতো,
বলতো, "মনের জোরে চলছি দাদা
এভাবে আর পারি না,
এবার বোধহয় থামতে হবে শেষে ।"
ঠিক বারোটায়, থামলো অবশেষে !
আমার যেদিন বিয়ে, সিঁথির সাথে -
বারোই অক্টোবর, সুদীপ দিয়েছিল ।
কালো ডায়েল, ওভাল সেপ -
কাঁটাগুলো ফসফরাসে ঠাসা,
অন্ধকারে জ্বলতো যেন সাহস দিত আমায়,
পেন্ডুলামে ছোট্ট পাখির বাসা,
ছ'টা বাজতেই ঘুম ভাঙ্গাতো পাখি ।
সিঁথি যেদিন চলে গেল, ভোরের দিকে
শীতের সকাল, আঠারো জানুয়ারী,
ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে ছয় -
সেই প্রথম বিপর্যয়, আওয়াজ গেল থেমে ।
সিঁথির ভীষণ প্রিয় ছিল আওয়াজ
আমি আর চেষ্টা করিনি, ঠিক-ঠিক-ঠিক -
যেমন চলে, চলতে দিলেম তাকে,
আমায় বললে, এ আওয়াজ আর এই ঘরে কি সাজে ?
সেও প্রায় বছর সাতেক আগে !
সেবার মায়ের যেদিন গঙ্গা প্রাপ্তি হলো,
সাতই জুলাই, দুপুর বেলা, ভীষণ গরম
আলমারিটা সরিয়ে দিতে গিয়ে,
হঠাৎ যেন ধাক্কা খেয়ে দেওয়াল থেকে খসে !
গ্লাসটা গেল, ফ্রেমের গায়ে ছোট্ট করে ফাটল -
সন্ধ্যা তখনও হয়নি, ঘুচলো মায়ের আঁচল !
তখনও তার চলার গতি নিখুঁত ফ্রেমে ধরা !
যেদিন আমার রিটায়ারমেন্ট, বাড়ি ফিরে দেখি,
পনেরো মিনিট পিছিয়ে গেছে, ধুঁকছে চলার গতি।
আমি সেদিন ঠেলে দিয়ে মুচকি হেসে বলি,
এখনি কি থামলে চলে, অনেক পথ যে বাকি !
সেই ঘড়িটাই থেমে গেল, আমায় দিল ফাঁকি !
আমি এখন ক্লান্ত ভীষণ, বন্ধু বিহীন জীবন -
এবার বোধহয় আমার থামার পালা -
চোখ খুলে চাই, ভীষণ গরম, ভিড় ঠাসা ঘর -
শুয়ে আমি, নিথর দেহ, ঝাপসা ঘড়ির কাঁটা -
মুচকি হেসে বলি, "একটু দাঁড়া, একসাথে যাই চলে !"
Comments
Post a Comment