পুরো দেওয়াল জুড়ে একটা দরজা। দরজার ওপাশে একটা ঘর । ঘরে নীল আলো ।
যখন বাড়িটা বুকিং করা হয়েছিল, তখন নীলাঞ্জনা নিজেও জানত না, কালে কালে প্রকাশ হচ্ছে সব । হয়তো প্রোমোটার নিজেও জানতো না তাই এই রুমের জন্যে প্রোমোটার অতিরিক্ত কোন টাকা চায়নি কখনো ।
ঘরের লোকেশন, পজিশন সব বাস্তু মেনেই করা । শোবার ঘরে পায়ের দিকে দেওয়াল জুড়ে প্লাস্টার অব পেরিসের থ্রি ডি ওয়াল আর্ট - একটা তেজী ঘোড়া বীর বিক্রমে ছুটছে । চোখ ধাঁধানো কাজ ।
রাত গভীর হলে ওখানেই একটা দরজা সৃষ্টি হয়।
ভেতর থেকে নীল আলো গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে নীলাঞ্জনাকে টানে।
আলো চোখ ছুঁতেই বন্ধ চোখ পলকে খুলে যায়।
ভেতর থেকে কেউ নীল আলোর সিঁড়ি বেয়ে কাছে টানে তাকে।
প্রথম প্রথম একা ঘরে ভয় হতো খুব । কেউ একজন কুঁকড়ে যাওয়া ভেতর থেকে নিষেধ করত যেতে । আজকাল অনেকটাই ভয় কেটে গেছে। এখন শুধু অবাক হবার পালা।
কদিন ধরে শরীর নিয়ন্ত্রণে নেই । উপসর্গে ছয়ালাপ। তবু নীলাঞ্জনা প্রস্তুত ।
চোখে নীল আলোর ছোঁয়া লাগতেই চোখ খুলে যায়।
আজ দরজার কপাট সম্পূর্ণ খোলা।
ভেতরে মায়াবী আলো— খানিকটা সম্মোহক, খানিকটা ভীতিকর।
নীলাঞ্জনা বিছানায় উঠে বসে। ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
ভেতর থেকে ভেসে আসে এক মিষ্টি গন্ধ।
দরজায় পা দিতেই চমকে ওঠে সে—
— “তুমি?” নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
ভেতর থেকে নীলাঞ্জনা মৃদু হেসে জবাব দেয়, “তুমি জানো না বুঝি?”
— “এখানে কী করছিলে?”
— “আমি এখানে বসেই আগামীকাল লিখে রাখি।”
— “সত্যি, আমার জানা ছিল না।”
— “তুমি জানো, কিন্তু তোমার ভাবনায় ছিল না।"
--- 'আমায় কেন ডেকে এনেছো এখানে ?
— “তোমার জন্য লিখবো, তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।”
— “তার মানে?”
— “তোমার দিন যে শেষ।”
— “প্লিজ, অমনটি করো না! আমার এখনও অনেকদিন থাকতে ইচ্ছে করে!”
নীলাঞ্জনা চিৎকার করে ওঠে।
ভেতর থেকে নীলাঞ্জনা করুন হেসে বলে,
“এই জন্মটা শুধু আমার আমার করে গেল, তোমার জন্য আমার সঞ্চয় শূন্য, ভাবতে করুণা হয়।”
নীলাঞ্জনার পাগল পাগল অবস্থা।
হাতের গায়ের গয়না, হাতের নাগালে যা পায় ছুঁড়ে ছুঁড়ে চিৎকার করে বলতে থাকে—
“আমার যা স্থাবর অস্থাবর সব তোমার,
আমাকে শুধু আরও কয়েকটি দিন —”
ভেতর থেকে নীলাঞ্জনা চেয়ার ছেড়ে দরজার দিকে এগিয়ে আসে।
দু’হাতে নীলাঞ্জনার হাত শক্ত করে ধরে।
নীলাঞ্জনা ছটফট করে ওঠে।
একটা ছোট্ট আলো ধীরে ধীরে নীলাঞ্জনা থেকে নীলাঞ্জনায় মিলিয়ে যায়।
লক্ষ ক্রোশ দূরে কোন এক নার্সিংহোমে সিমন্তিনী কঁকিয়ে উঠে প্রসব যন্ত্রণায়।
Comments
Post a Comment