দীর্ঘশ্বাস


মা মরা মেয়েটা
কোলেপিঠে বড় করেছি
         সেই তিন বছর থেকে,
লোকে বলে মানুষ করিনি ।
আমি জানি না মানুষ কারে কয় !

মায়ের নাম মেনকা
তাই  মেয়ের নাম তার ইচ্ছেতেই দূর্গা রেখেছি ।
লোকে তাকে অনেক কিছুই বলে
আমি বলি দূর্গাইতো,
যেদিন বাস এক্সিডেন্টে পা দুটো হারিয়েছি,
ওর তখন বয়স কত ? বছর তেরো ।
সেকি যমে মানুষে যুদ্ধ !
ছোট্ট বুকের সেই মেয়েটি কী অসীম যুদ্ধ
লড়েছিল আমার জন্য --
সেই থেকে শুরু ।

যখন ওর বয়েস হলো ষোল, একদিন সকালে
ছোট্ট একটি চিরকূট,
"আমাকে খুঁজতে যেও না বাবা-
আমি আছি মানুষের জঞ্জালে " ।
তারপর -- প্রতি মাসে টাকা আসে খামে,
প্রতি মাস ।

ওখানকার ঘরগুলো পায়রার খোপ,
তাও বলেছিলাম, চল একসাথে থাকি ।
আমি তখন‌ও জানতুম না - সঠিক ঠিকানা,
মেয়ে আমার শোনে খুব হাসে ।
রাত জেগে কাজ চলে রাতভোর
       সাহেবের মন রেখে চলা !
আমাকে জায়গা দেয়
         সেই জায়গা কোথায় !

এই বছর প্রথম মেয়ে ফিরছে বাড়ি
আশ্বিনের শারদ প্রাতে ।
আনন্দ নয় আতঙ্কে গুনছি দিন --
খদ্দের নেই দীর্ঘদিন --
রাতের পর রাত কাটে উৎকন্ঠায়,
কি এক রোগ এসেছে শহরে --
মানুষকেই মানুষের ভীষণ রকম ভয় !
যে খোপগুলো রঙিন ছিল
                      রাত্রি গভীর হতেই,
আজ সেখানে অন্য দীর্ঘশ্বাস !
আমার মেয়ে - চাঁপাডালির দূর্গা প্রতিমা ।


Comments