তোমাদের হালখাতা মতে বলি
ভালো আছি।
অবশ্যই ভালো আছি আমি ।
গাড়ী, বাড়ি, ধনী শ্বশুর, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স
আর পেট মোটা বউ নিয়ে
আমিতো বেশ ।
অন্ততঃ যতটুকু চোখে দেখা যায়।
ভোরের সূর্য, সাগরের ঢেউ আর
গায়ে মেখে নারীর ঘাম
আমার রক্ত এখন নীল।
শুধু আয়নায় যখনই দাঁড়াই
একান্তে, নিরালায় --
সারা গায়ে শুধু ঘা আর গ্যাংরিন।
ভয়ঙ্কর, বিভৎস --
খালি চোখে দেখা যায় না ।
ছোটবেলায় রকমারি টিফিন
যত্ন করে সাজিয়ে দিতেন আমার মা ।
মুখটা বন্ধ করে হাতে দিয়ে বলতেন,
"খেয়ো সবটুকু, ভাগ করে নয় কিন্তু ।"
মার ভারী ভাবনা ছিল আমাকে নিয়ে
আমি হাসতাম। মা জানতেনই না
আমার কোনকালে কোন বন্ধু ছিল না ।
প্রতিদিন টিফিনে, জোর করে খেয়ে নিত
কিছু রকবাজ ছেলে
কাউকেই কিছু বলতে পারতাম না ভয়ে ।
অফিসের ঠিক উল্টো দিকে
একটা ভিখারি ভিক্ষা চাইতো বসে ।
আপনারাও দেখেছেন নিশ্চয়ই,
একটু বয়স্ক, কাঁচা পাকা দাড়ি
উরুর নিচ থেকে দু'টো পা'ই নেই ।
পাশ দিয়ে যাবার সময় দুবেলাই
আঁকড়ে ধরতো পা, কিছু একটা চাই ।
এক ঝটকায় সরিয়ে নিতাম পা
বলতাম, যাঃ জাহান্নামে যা ।
সে তখন চিৎকার করে গালি দিত আমাকে
রোজ, রোজ । আমি হাসতাম।
জানতাম, কিছুই হবে না,
শকুনের শাপেতে গরু মরে না কখনো ।
দেশ বাড়িতে যে জমিটি ছিল
তার আয় থেকে পেট চলতো অনেকগুলো পেটের।
নিজেরও যা আয় হতো, মন্দ তা নয়
তবু রাখিনি জমিটি, বেঁচে দিয়েছিলাম ।
ওরা দলে দলে এসেছিল,
হাতে পায়ে ধরে কেঁদে ছিল খুব।
আমি কিন্তু শুনিনি।
শুনিনি ইচ্ছে করেই ।
ততদিনে আমার নীল রঙের ছোঁয়া ।
কিছুটা লাল রক্তের ছিঁটা লেগেছিল গায়ে,
গায়ে মাখিনি ।
আমার অফিসেই পিএ, আমার আন্ডারে,
একটা ছেলে নিয়ে ডিভোর্সি ছিল।
প্রতিদিন কাজ শেষে চলে যেতে চাইতো,
আমি তাকে আটকে রেখে সুযোগ নিতাম ।
আমার বসটাও ছিল ঠিক তেমনি হারামি
মাঝে মাঝেই এসে যেত, সুদ চেয়ে নিতে।
ও কাঁদতো, খুব । আমি হাসতাম।
জানতাম, চাকরিটা যে ছেড়ে দেবে
সেই অবস্থাতে নেই । তাই হাসতাম।
জীবনের সায়াহ্নেতে এখনো আমি
অবসর জীবন, বিলাস আর বৈভবে --
দিনভর গান শুনি -- কবিতা লিখি --
সঙ্গ দেই অসুস্থ স্ত্রীকে আর
রাত্রি ঘন হলে সিঁড়ি ঘরে গিয়ে
জোৎস্নার সাথে মাতি নিষিদ্ধ আনন্দে।
আমি জানি সেও ভারী ভারী অসহায়।
আসলে পৃথিবীটাই বীরভোগ্যা !
কিছুটা নির্মম,
কিছুটা লোভী,
ক্ষমতালিপ্সু, স্বার্থপর
আর ভেতরে ভেতরে থাকা চাই
প্রচন্ড জিঘাংসা,
নইলে জীবনে উন্নতি করা যায় না !
Comments
Post a Comment