বেশ্যা

আমাদের কপালটাই এমনি
দিন নেই, "মাদান" নেই
ইচ্ছে অনিচ্ছের বালাই নেই
সকাল সন্ধ্যা যখন তখন
শরীর নিয়ে খেলা --
এক চিমটি পয়সার বিনিময়ে,
বাধ্য হ‌ই মেনে নিতে।
তোমাদের গরম শ্বাস, জিহ্বা, ঠোঁট -, 
ধারালো দাঁত -, আমার গলা চুঁইয়ে
বুকের চূড়া, তলপেট, জানুসন্ধিতে
রক্তাক্ত করে তবু
দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করি,
কারণ, আমরা বেশ্যা।

ছিল ব্রিটিশ, কিংবা তারও আগে
শক, হুন, পাঠানের দল -
তোমরাই শোনালে গাল ভরা গল্প,
আর মুখরোচক কিস্যা।
রাতের অন্ধকারে, দিনের আলোতে,
বক্তৃতা, লিফলেট আর ক্রমাগত আঘাতে
জাগিয়ে তুললে ভিতরের সিংহটাকে।
জান দিলাম, জবান দিলাম,
গুলি নিলাম বুকে, পিঠে চাবুকের ঘা,
হাত পা শিকলে বাঁধা।
স্বাধীনতার অজুহাতে টুকরো করলে দেশ,
রক্তাক্ত করলে বুক আর
ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে
অনিশ্চিত করে দিলে আমাদের।
কেনা বাঁদির মতো
কখনো উপুড়, কখনো চিৎ হয়ে শুয়ে
তোমাদের খিদে মেটালাম।
রাতের পর রাত  হাঁটলাম
বুকে আঁকড়ে প্রতিষ্ঠিত শালগ্রাম শিলা
কিংবা পবিত্র কোরআন শরীফ।
শিয়াল, শকুন আর হায়েনারা
সময়ের চমৎকার সুযোগ নিল।
স্বার্থের দ্বন্দ্বে আর পৈশাচিক লিপ্সায়
আবারো জন্ম নিলাম নতুন করে --
উদ্বাস্তু, তোমাদের "জারজ" সন্তান।

ভেবেছিলাম পাল্টে দেব পাশা,
শরীরে, মনে শক্তি সঞ্চয় করে
শেষ একবার কঠিন ধাক্কা দিই জোরে - ।
সত্তর দশক পেরিয়েও কী আশ্চর্য !
এখনো সেই জরাজীর্ণ তোষক
তেল চিটে বালিশ আর --
আমার বিষাক্ত শরীর।
মালিকানাই পাল্টে গেছে শুধু
এখনো সেই বস্তি, সেই অন্ধকার কোঠা আর --।






Comments