সকাল সকাল একগুচ্ছ কাশফুলের ছবি
ওয়াটসআপে পাঠিয়েছিলে তুমি,
আধঘুমে চোখের তারায় ঝিলিক দিয়ে গেল,
তোমার মুখটা ভেসে উঠলো মনে।
আমার মতো তোমারও যে বন্দিদশা চলছে।
দেখতে দেখতে বছর গেল ঘুরে,
কাশবনেতে ফুটলো ফুল, শিশির চুমলো শিউলি,
শরৎ যে এসে গেছে বুঝতে পারছিলাম
তবু মনের মধ্যে শরৎ এলো কই ?
কাশফুলেদের পাগড়িগুলোয় জাদুর ছড়ি আছে,
যখনই ফোঁটে মনের মধ্যে ঢাকের বাদ্যি বাজে।
কেমন যেন পূজো পূজো ভাব,
মনে হয় আর দেরি নেই মা আসছেন ঘরে।
মনের মধ্যে আনন্দেতে কে যেন গায়,
" বাজলো তোমার আলোর বেণু"।
তোমার পাঠানো ফুলগুলো দুর্গা প্রতিমা যেন।
সপরিবারে দাঁড়িয়ে আছেন পূজার অপেক্ষায়।
অবাক হয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম -
কী অপরূপ রূপ আমার দুর্গতিনাশিনী মায়ের !
সন্তানেরে অভয় দিচ্ছেন, স্বয়ং অভয়া,
আমি আছি, আমি থাকতে ভয় পাবি না তোরা।
আমি জানো সব শুনতে পাই, বুঝতে পারি মনে,
তবু মনের ভয়টা কাটতে চায় না আমার।
অদ্ভুত একটা বিষাদ, শরীর আর মনে।
আচ্ছা মান্নাদা, আজকাল কাজে অকাজে
তোমাকে ওরা বেরোতে দেয় তো ?
সন্ধ্যাবেলার আড্ডাগুলোয় যাও না নিশ্চয়ই।
আমারও মনের মধ্যে আতঙ্ক ,
এমন ভাবে প্রচার হয়েছে সব --
মনের জোরটা কাঁচের মত ভেঙ্গে চুরমার।
নিজেকে বোঝাই, ভেঙ্গে পড়লে চলবে কেন ?
বই পড়ি, মনে সাহস আনি বিবেকানন্দ পড়ে,
তারপরেই এমন একটা খবর আসে উড়ে,
মুহূর্তেই সবকিছু মাটি হয়ে যায়।
চাকরিটা ছেড়েছিলাম যখন, মনে অনেক স্বপ্ন,
জীবনটাতে ঝিলিক এনে বাঁচতে চেয়েছিলাম ।
এমন একটি পরিস্থিতি এলো
আমার সাথে স্বপ্নগুলোর ঘরবন্দি জীবন।
আমি জানো এমনটি ভাবিনি কখনো।
তুমি ভাবছো কথাগুলো অবসাদে বলছি,
না মান্নাদা, অবসাদ অপদার্থের জন্য,
যা করেছি ঠিক করেছি ভুল করিনি আমি,
সময়টা যে নিষ্ঠুর হবে, কে জানতো বলো ?
এবার ভেবেছি পুজোর জন্যে স্পেশাল
কিছু করবো না।
কেনাকাটা মোটেই না, পুজোয় চাঁদাও দিচ্ছি না,
এবার তো কুমোর, ঢাকিরা গামছা বেঁধেছে পেটে,
শুনেছি আইন করে এবছর প্রসাদ বিলি বন্ধ।
পুজোর ক'দিন হাভাতেরা পেটপুরে যে খাবে,
'বাবু'দের সদিচ্ছায় সেই গুড়েতেও বালি।
ভাবছি সেই টাকায় এইক'টা দিন
খাইয়ে দেব ওদের।
নিজে তো ভুল করেও বাইরে বেরোই না,
এনজিও রা আছে, ওরাই করবে সব,
মনে মনে শান্তি পাবো খুব,
হয়তো তখনই, একটু হলেও পুজো কাটবে আনন্দে।
Comments
Post a Comment