আমি আর সেই আমি-টি নই
কি চাও তুমি ? মুখে একগাল হাসি টেনে
শতাব্দী প্রাচীন শ্যাওলা মাখা শব্দ ক'খানি
বারবার জাবর কাটার মতো বলতে থাকি,
"ভালো আছি ভাই" ! -- পারবো না ।
আমার ঘেন্না লাগে বলতে।
মিথ্যে বলতে বলতে পচন ধরেছে মুখে
সত্যিটা পঁচা ঢ়েকুরের মতো আটকে আছে গলায়,
আমি আর পারছি না কিছুতেই।
তুমি তো জানো সব, তবু কি শুনতে চাইছো ?
কেমন আছি ?
মুখ থেকে মুখোশ সরিয়ে,
সমস্ত চাপের উর্ধ্বে উঠে বলতে বাধ্য হচ্ছি,
ভালো নেই আমি। এভাবে ভালো থাকা যায় না।
কেউ হেসে এগিয়ে এলে, জানো,
ছিটকে সরে যাই দূরে ,
বুকে টেনে নেওয়া --, বহু, বহুদূর ।
তোমাকেই তো দেখিনি আজ কতদিন, তবু ---।
আজকাল ছেলে ভোলানো লাইভ অনুষ্ঠানগুলো
আর মন ভোলাতে পারছে কই ।
বুকে কষ্ট চেপে যে মেয়েটি আজ গাইলো,
তার ক্ষতের খবর ক'জনার ডাইরীতে নোট করা?
পেটে সর্বনাশা ক্ষুধা নিয়ে আর যাই চলুক,
নৌকা বিহার চলে না।
তোমাদের মাস্কগুলো, মুখে সেঁটে সেঁটে,
এখন আমার বুক ভর্তি কার্বনডাই অক্সাইড,
অক্সিজেনের অভাবে আমার শ্বাসকষ্ট হয়,
এলকোহলে স্কীনে ভীষণ সমস্যা --,
তবু প্রাণটাকে বাঁচিয়ে রাখতে
আমি প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছি,
কারগিলের সেই সেনাটির মতো।
মনে হয়, যেন কুমীর ডাঙা খেলছি আর খেলছি,
জলে নামছি, আবার ছুটে ডাঙা ---,
যে কোন সময়েই আমাকে ছুঁয়ে দিলে
আমিও শাপগ্রস্ত হতে পারি আর দশজনের মতো।
এক একটা টেলিফোন আসে
যেন এক একটা মৃত্যু দূত।
ভালো খবরের জন্ম হয় না আজকাল।
যদি বা হয়, আঁতুড়ঘরে তার শেষ জানাজা ওঠে।
কাদের বদান্যতায় ? আমি সঠিক জানি না।
প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকতে থাকতে
আমি এখন আতঙ্কগ্রস্ত জড় পদার্থ,
আমার বিবেক, বিচার, বুদ্ধি, লোপ পেয়েছে,
প্রচার আর অপপ্রচারে বিভ্রান্ত প্রায়,
সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হয়, কে খাঁটি আর কে নয়।
তারপরও জানতে চাও কেমন আছি আমি ?
তুমিই বলো, কি উত্তর দিই তোমাকে ।
এভাবে বেঁচে থাকাকে তুমি কি বলবে ?
বিশ্বাস করো, আমি যে আর পারছি না।
আজ পাপলুর বোন এসেছিল
ওদেরই একটা ব্যক্তিগত কাজে
দরজাতে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি অনেকক্ষণ,
বসতে বলিনি আমি ।
লজ্জার মাথা খেয়ে সৌজন্যতা বোধটুকু হারিয়েছি,
প্রথমবারের মতো কাউকে ঘরে আসতে বলিনি।
আমি যে বেঁচে থাকতে চাই।
শুধুমাত্র বেঁচে থাকতে চাই তাই
আমার শিক্ষা, দীক্ষা, আচার
আমার সৌজন্যতাবোধ, আমার সমস্ত কিছু
আমি উৎসর্গ করতে প্রস্তুত যে কোন মূল্যে।
পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাক
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক পৃথিবী থেকে গোটা মানবজাতি,
আমি তবু বেঁচে থাকতে চাই,
ইট কাঠ আর সিমেন্টের জঞ্জালে
আরো একটা জড় পদার্থের মতো।
আমি বাঁচতে চা -----ই।
আজ সারা বিকেলটা
আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম একা
গোটা শরীরটাতে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি আমাকে,
দিনের শেষ আলো থাকা অবধি ক্রমাগত ।
দেখলাম,আকৃতিটাই বারবার ভেসে আসছিল চোখে
আমার সেই চেনা "আমি"টা এখন আর নেই।
জানি লজ্জার, তবু বলতে দ্বিধা নেই
আমি আর সেই আমিটি নই এখন।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment