আমি কথা রাখতে চাই
কে কি কথা রেখেছে জানি না
আমি কিন্তু কথা রেখেছি দেবাশীষ !
জীবনের দীর্ঘ পাঁচ শতক পেরিয়ে
এখনও আমি কথা রাখতে চাই।
ছোটবেলায় কণামাসী আমায় বলতেন,
কথা দিয়ে যে কথা রাখে না
পরজন্ম নাকি তার "কালীঘাটে কুত্তা"।
কণামাসী, তুমি কতটা সত্যি জানো
আমি সত্যিই জানি না,
তবু জীবনের দীর্ঘ পথ আমার
আতংকে কেটে গেল
প্রতি মুহূর্তে একটা ভয় কাজ করতো ভিতরে
কি জানি কথার খেলাপ কি-না হয়।
ক্লাস সিক্সে পড়ি, অঙ্কে পেয়েছিলাম সাইত্রিশ।
বাবা প্রচন্ড হতাশায় বললেন,
কিচ্ছু হবে না এই ছেলের।
অঙ্ক যে ভালো বুঝতে পারে না
জীবনের জ্যামিতিক অঙ্ক সে কি করে বুঝবে ?
শক্ত আতার ডাল থেকে নিজেকে আড়াল করতে
পা ছুঁয়ে কথা দিয়েছিলাম
অঙ্কেতে সেবারই আমি আশী নম্বর পাবো।
তারপর প্রতিদিন প্রতিমূহুর্ত
আমাকে তাড়া করতো
বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আর কণামাসীর বিশ্বাস।
জীবনের সঠিক অঙ্কটা বুঝে নিতে
আমি রাতের পর রাত জেগে জেগে
একটার পর একটা অঙ্ক কষেছি ,
রাতের ঝিঁঝিঁ পোকারা যখন ডেকে ডেকে
ক্লান্ত হয়ে যেত, আমি তখনও জাগা।
দুপুরে খেলতাম না,
শিবু, কানু ওরা আমাকে ডাকতে এলে
পেট ব্যাথার ভান করে শুয়ে থাকতাম বিছানায়,
কি জানি অঙ্ক বুঝি বাকি থেকে যায়।
অঙ্কেতে হেসে খেলে লেটার পেয়েছিলাম সত্যি,
জীবনের অঙ্ক যে আজো মেলেনি বাবা !
অরিন্দমকে কথা দিয়েছিলাম তাই,
ওর বোনের অপারেশনে
পিএফের সবকটা টাকা আমি তুলে দিয়েছিলাম,
কিস্তিতে ফিরাবে এই ভরসায়।
শ্যামলের শত নিষেধ সত্ত্বেও
কথা রেখেছিলাম,
অরিন্দম ফেরায়নি টাকা, তার অভাবটা সত্যি,
আমি কিন্তু নিগ্রিমস যাইনি তাই বাবার শেষ সময়ে
শুধু টাকার অভাবে।
পিয়ালির হাতে হাত রেখে পিয়াল গাছ তলায়
কথা দিয়েছিলাম,
"জীবনের জন্য এই হাত বাড়িয়ে দিলাম।"
পিয়াল পাতা হয়তো ঝরে যাবে কোনদিন,
ডলুর রাস্তায় পড়বে নতুন পীচের প্রলেপ,
আমি তবু অপেক্ষায় থাকবো কথা দিয়েছিলাম।
তারপর কত হাত বদল হতে হতে পিয়ালি এখন
প্রিয়তোষের সহধর্মিণী।
তিন সন্তানের দুজন ডাক্তার, একজন
ইঞ্জিনিয়ার।
আমি শুধু থেকে গেলাম সমাজে অকৃতদার।
তবু কথা রেখেছিলাম আমি।
কে কি কথা রাখে আমি জানি না দেবাশীষ
আমি কিন্তু এখনো কথা রাখতে চাই।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment