নিজস্ব দুপুর
একটা দুপুর ছিল কর্মমুখর,
ফাইল - মোবাইল - ইন্টারেকশন -
সহকর্মী, সহযোদ্ধা নিয়ে
ত্রস্ত, ব্যস্ত দিন।
নিজের মধ্যে নিজেই কখন
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতো --
খবর নিতাম না।
দিনের শেষে অন্ধকারে
ক্লান্ত পায়ে খুঁজে নিতাম
তার ফেলে যাওয়া টুকরো টুকরো স্মৃতি।
সেও এক দুপুর ছিল আমার।
একটা দুপুর ছিল তারও আগে
বাউন্ডুলে জীবন।
স্কুল কলেজ আর বিপ্লবেতে ভরা।
হাতের এক ঘুষি আমার ছিটকে দিত
নাপসন্দ সরকারকে, অবহেলায়,
অনেকটাই তোমার ছলকে ওঠা চায়ের মতো ।
তাতে রাস্ট্রের কি হতো জানি না,
টেবিলটা নোংরা হতো আর ---
আর দুপুরটা কেটে যেত চারমিনারের ধোঁয়ায়।
সেও আমার এক দুপুর ছিল।
তেমনি কোন একটা দুপুরবেলায়
একটি মেয়ে এসেছিল, অলসবেলায়
জীবন বলবো না -
জীবন কি আর হাতে মাপা দুপুরটুকু হয় ?
একটা আস্ত গোটা দিন।
সেই মেয়েটি, এসেছিল, যেন আলাদীন।
হাতে ছিল আশ্চর্য সেই জাদু প্রদীপ,
ভাললাগাকে ভালোবাসায় পাল্টে দিত
তার প্রদীপের ছোঁয়ায় , এমনই তার গুণ।
সে ছিল প্রজাপতি কিংবা পাহাড়ি ঝর্ণা
আমাকে সে চমকে দিয়ে, থমকে দিয়ে,
মেঘ পরীদের গান শুনিয়ে,
স্বপ্নভেলায় গা ভাসিয়ে
দুরন্ত সে, থামলে নাকো, চলে গিয়েছিল।
যখন সে চলে গেল, আমি তখন ঝরা কাক
নদীর চরে মরা লাশ
তার চলে যাওয়া, আমার ঝড়ের যবানিকা।
সেও আমার ভালবাসার দুপুর।
এখন আবার আরো একটা দুপুর কাটাই ঘরে,
বন্ধ ঘরে, লকডাউনের বিশাল দুপুর
ছন্দহীন,গন্ধহীন, বর্ণহীন।
আতংক আর সব হারানোর দিন।
সমস্যা পাহাড় পরিমাণ, অগুন্তি।
লকডাউন কি বাইরে শুধু ?
মনের মধ্যে, মগজ জুড়ে,
ভাবনাগুলো শুঁটকি যেন, বস্তা বন্দী।
ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি,
তাকিয়ে দেখি ভয়ে,
মা যেন সেই চৌরাস্তায় নিলাম হচ্ছে,
শকুন,শেয়াল আর নেকড়ে কিছু
কাড়ি কাড়ি মুদ্রা নিয়ে হাতে,
দেবদাসী কিনতে ওরা চায়।
সেও আমার বর্তমানে একান্তই নিজস্ব দুপুর।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment