না বলা কথা

না বলা কথা

তোকে  একটা কথা বলা হয়নি আমার --,
ওর সাথে দেখা হয়েছিল আবার ।
দেখা হয়েছিল, তবে কথা হয়নি, 
কাউকেই খবরটা দিতে পারিনি আজও , 
ও এসেছিল, আমারই চেম্বারে ।
আমি তখন ডিউটিতে, দু’ঘণ্টার সিফ্ট ।
ও নিজেও জানতো না ইনফেক্ট ।
আমিও জানতাম না, তবে আমার কি, 
হারাবার যা কিছু সব কবেই হারিয়েছি।

দরজাতে নক, ভেতরে আসতেই 
বাইরেতে লক । এটাই নিয়ম ।
ভেতরে এলো সে খুব রিলাক্স মুডে,
সেই আগের মতো, রাজকীয় ঢঙে।
আমি দেখছিলাম । মুখোমুখি হতেই 
বিশ্বাস কর্ , ও চমকে গেল। 
যেন ভুত এসে সামনে তার দাঁড়িয়ে গেল ।
ভেতরের খুশিটাকে নিংড়ে এনে
এসিডে মুখটা কেউ চুবিয়ে দিয়েছে । 
আমি দেখছিলাম, ও ঘাবড়ে গেছে । 
চোখে চোখ রাখতেই অনেক কথা, 
অনেক স্মৃতি, অনেক গল্প অনেক ব্যাথা ---
জলন্ত ঘায়েতে কেউ স্পর্শ দিল।
জোরে করে একটা স্মাইল, সেও এক ঝলক, 
তারপরই ফিনিশ ।আমি দেখছিলাম, 
সর্ব অঙ্গে তার শঙ্খচূঁড়ের বিষ ।
যে বিষটা সে পুঁতে দিয়েছিল আমার শরীরে 
আজ তার পাঁচ বছর প্রায়। আমার  স্নেহাশিস।

ঠিক দু’ঘণ্টা বসেছিল এখানে 
খাটের কোনায়, যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত । 
মাথাটা নামানো, শিরদাঁড়া ভাঙা । 
কিছু একটা বলেছিল বোধহয়,
গোঙানি আওয়াজে, আওয়াজ  আসেনি । 
দরজাটা বন্ধ তাই পালাতে পারেনি । 

তারপর সেইক্ষণ, দরজাটা খুলতেই 
ব্যাগ থেকে তুলে নিল বেশ কিছু টাকা, 
কার্ডেতে খশখশ, ছোট্ট কথা -- স্যরি ।
কার্ড আর টাকাটা বিছানাতে রেখে 
ধীরে ধীরে চলে গেল দরজার দিকে ।
এতক্ষণ ছিলাম চুপ, শুধু দেখছিলাম।
মনে মনে চাইছিলাম, সে আসুক কাছে , 
সমস্ত শরীর দিয়ে সেই সম্মোহনী দিক্
দু’ঘণ্টা আমি যে তার রক্ত মাংসের পুতুল ।
হঠাৎই মাথার মধ্যে জ্বলে উঠলো আগুন 
ছুটে গিয়ে কলারটা শক্তে চেপে
টাকাগুলো পকেটেতে দিলাম ঠেসে ।
তারপর একদলা থুথু ছুড়ে দিয়ে , বললাম,
"ভিক্ষাবৃত্তি আমি ছেড়ে দিয়েছি ।
মনে রেখো, কথাটা জানিয়ে দিলাম ।"

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments