ঈদ
সেলাম আলেকুম চাচু, ঈদ মোবারক ---
হ বাপজান, ঈদ মোবারক, কইথে আইলা ?
মজিদ গেছিলা বুঝি ? নামাজ হইছে ?
আহারে, পারা মানুষ হইছে নিশ্চয় ?
না ---, হি তো মৌলভী কইছিল
"আওনের কাম নাই,পরবটা ঘরেই করেন -- ।"
মন কি মানে কও ? একটা নিয়ম আছে না ?
পরাণটা অক্করে ফাইট্টা যায় ।
পুলাডায় যে যাওনের দেয় না গো ।
কয়, আব্বু যাইয়েন না, আপনার সইব না।
বাইচ্চা থাইকলে আরো ঈদ পাইবেন,
এইবারটা বাদ দেন আব্বাজান।
পুলা অহনে মুরব্বি হইছে,
তারা কথা কি ফালান যায় কও,
কিন্তু ভিতরে যে একটা কষ্ট, বুঝান যায় না।
জ্ঞান হইছে অবধি এমন কুনু দিন আছে ,
পরবে, পার্বনে মজিদ গিয়া নামাজ পড়ি নাই ?
আছে ইমন কুনু দিন ?
এই প্রেত্থম, এই প্রেত্থমবার জানো
আল্লাহতালার দুয়ারে যাইবার পারি নাই
আল্লাহ তার বান্দারে সুযোগ দেন নাই।
আল্লাহ, তোমার মর্জি হো আল্লাহ !
তবে হ, রোজা ছাড়ি নাই।
খাঁটি মুসলমান হওয়া কি সুজা ?
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ন লাগব,
দোয়া চাওন লাগব,
নিজে যা খাইবা, বাইট্টা খাওন লাগব,
তবে না খাঁটি মুসলমান হইবা।
আমি করছিও বাপজান, করছি ।
যে আইছে, ফিরাই নাই।
জাত চাই নাই, ধর্ম চাই নাই,
যে চাইছে তারেই দিছি ।
এই দুর্দিনে দুয়ারে আল্লাহ আইছে
ফিরাই কেমনে কও ?
যা পারছি চাউল, ডাইল, চিনি
আর দিমু বা কি, দেওনেরও যে ক্ষমতা চাই ।
ব্যবসাপাতি লাটে উঠেছে , নিজের চলন দায় !
পুলারে কইলাম , বাপজান, চেক লেইখ্যা দিলাম
পরবে কাপড় লও নাই ?
পুলা অহনে সাব্যস্তের হইছে,
কয়, আব্বু আপনার বৌমা কইছে
কাপড় কিননের কাম নাই, চাউল কিন্যা আইনো,
মানুষজন আইয়া চায়, দেওন লাগবো না ?
হায় আল্লাহ ! কি দিন যে আইছে ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বৌমা আমার বাপজান, বড় ভালা হইছে ।
নামাজ সাইরা পুলা আমার বাইরই যায়,
কইলাম বাপজান, পরবের দিন
অল্প হইলেও মাংস আইন্যো।
কয়, আব্বু কাইল খাইয়েন নে।
চাও, পরবের দিন কি কথা কয়। পরে শুনলাম
শ্যামলীর জামাইটা মারা গেছে সহালে,
জ্বর হইছিল, ডাক্তরে কইছে হেইটা না,
তবু কেউ সাহস করে না।
কান্ধা দেওনের মানুষ নাই !
হায় আল্লাহ ! কিবা দিন আনলায়,
মড়া মানুষ কান্ধা দিব চাইরটা বন্ধু নাই ।
আনসার গেছে তার দোস্ত লইয়া
জ্বালাইতে লাগবো তো ?
কইলাম বাপজান, চাইও, পরবের সময়,
এইটা লইয়া আরেক কান্ড না হয় ,
শেষমেষ পরবের আনন্দটাই নষ্ট হইবো।
পুলা হাইস্যা কয়, আব্বু আপনে কন,
মানুষ আগে না তার ধর্ম আগে !
কি কই কও বাপজান, কি কই কও ;
আমি তো বুঝি ,
কিন্তু এমন একটা জায়গায় আছি
মাইনষে তো বুঝে না বাপজান।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment