আজ কোজাগরী পূর্ণিমা রাত

আজ কোজাগরী পূর্ণিমা রাত

পাপ্পু  বাবা সোনা আমার
এইবেলা ওঠ, বেলা যে বয়ে যায় ।
তাঁকিয়ে দেখ বাইরে পরিষ্কার আকাশ
কখন হয়েছে ভোর । পৃথিবীটা আলোকময় ।
চোখ খুলে দেখ, সূর্যের তেজ নেই আজ ,
সমস্ত আকাশটা অদ্ভুত ভাবে রক্তিম ।
লক্ষ্মী সোনা বাবা আমার,  ঘুমাস নে আর
এইবেলা চোখ খোল, আজ যে বিশেষ দিন ,
আজ কোজাগরী পূর্ণিমা রাত ।

এত লোক কেন আমার ঘরে ?
আজ যে লক্ষ্মী পুজো । তুই ডেকেছিস ?
ঘরে ঘরে যাদের পুজোর আয়োজন
দলে দলে তারা এসে তোর দোরগোরায়
চোখগুলো ঝাপসা যেন, বৃষ্টিস্নাত
কি চায় ওরা ? জামাইটাকে দেখছি না যে।
কেমন যেন সবাই আজ নিশ্চুপ , স্লথ,
কিছু যেন চাপা দিতে চায় ,
তোর কোন বাড়াবাড়ি হলো না তো বাবা?
ওদেরকে বসতে বল, ওঠ বাবা
আজ যে কোজাগরী পূর্ণিমা রাত ।

কাল রাতে তোর নাকি শরীর খারাপ ছিল ।
মা যদি আশীর্বাদ দেয়, যমেরও সাধ্যি নেই
কেড়ে নেয় সন্তান । ধ্রুব সত্য জানিস ,
তবু আমাকেতো কেউ কিছু বলে না রে ওরা ।
দোলনটাও আজকাল ভীষণ রকম চাপা ।
সবকিছুতেই আমার সাথে লুকোচুরি খেলা ।
তোরা ভাবিস আমি অবুঝ, অসুস্থ যে, শুয়ে থাকি
মায়ের মন রে, বুঝতে পারি, সব বুঝতে পারি,
শরীরটা তোর ভাল যাচ্ছে না মোটেই ।
ভালো একটা ডাক্তার দেখা,
টাকা না হয় আমিই দেব, সুগারটাতো কমছে না
বিলিরুবিন এত হাই, খাওয়া দাওয়াতে নিয়ম নেই
এমন করলে শরীর থাকে বাবা ?
ওঠ বাবা, অনেক হয়েছে বেলা,
ঠাকুর ঘরে আসনখানা পাত ।
আজ যে কোজাগরী পূর্ণিমা রাত ।

ওমা বৌমা তুমি কখন এলে ?
তাঁকিয়ে দেখো পাপ্পুটাকে,
কেমন যেন মরার মত পরে আছে আজ ।
ওর শরীরটা না ভালো নয় গো জানো,
পুজো আর্চায় মন বেশি তো,
অনিয়মটা হয়েই যায় । বলি তো, শোনে না,
তুমি একটু যত্ন নিও ওর ।
ছেলেটা যে সুখ পেল না গো --।
ওমা করছোটা কি ? কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ওকে ?
এত ফুল কেন সাজিয়ে দিয়েছো শয্যায় ?
কি বললে তুমি ? শেষ দেখা দেখবো আমি ?
কি  নিষ্ঠুর ! এমন কথা বলতে পারলে আমায় ?
ও যে আমার সন্তান গো, দশ মাস দশ দিন
পেটে ধরেছিলাম, বুকের উত্তাপ দিয়ে বড় করছি,
আমি বুঝি কি ভীষণ জ্বালা তার সমস্ত হৃদয়ে,
বড় অভিমানী ছেলে গো, আমি জানি যে ।
অমন কথা বলে না মা, আজ যে শুভদিন,
আজ কোজাগরী পূর্ণিমা রাত ।

তুই তাহলে চলেই গেলি !
সত্যি সত্যি চলে গেলি বাবা ! বললি নাতো ?
তবু ভালো, ভালো থাক বাবা, সুখে থাক ।
আমার জন্যে ---। না থাক, আমি পাষাণী ,
আমার যে শোক করতে নেই বাবা ।
মা, বাবা দেবতা হয়, দেবতারা মানুষ নয়,
ওদের শোক করতে নেই ।
তাই শুভক্ষণে প্রাণভরে আশীর্বাদ করি তোকে
তুই বেঁচে থাক বাবা, বেঁচে থাক হাজার হৃদয়ে,
এ তোর মায়ের আশীর্বাদ ।
আজ যে শুভদিন,
আজ কোজাগরী পূর্ণিমা রাত ।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments