শুভ নববর্ষ, বন্ধুরা
এখানে উপস্থিত সুধীজনেরা, শুভ নববর্ষ ।
আজকের এই শুভ সন্ধ্যায়
সবাইকে নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা
আর অভিনন্দন ।
শুভেচ্ছা এখানে যারা এসেছেন, যারা আসেন নি
আসতে চেয়েও নানা কারণে আসতে পারেন নি
আমার শুভেচ্ছা তাদের সবার জন্য ।
জানেন, আজকের এই সুন্দর কাব্যময় দিনে
কেন যেন বাবাকে আমার খুব মনে পড়ে
আমার বাবা, আমার বন্ধু, আমার প্রথম ভালোবাসা
বাবাকে ঘিরেই জানেন আমার প্রথম চলতে শেখা।
বোশেখের প্রথম দিন, ঘুম থেকে উঠেছি
চোখ খুলে দেখেছি, বাবা ডাকছেন
বলছেন , এই যে খুকি, করছিস কি
পড়াশোনা থাক আজ, চল ঘুরে আসি।
এই যাঃ, পড়াশুনা বন্ধ! কি আনন্দ আমি প্রচন্ড খুশি
দোকান থেকে কিনে কিছু পাউরুটি কলা
আমরা চলে যেতাম সোজা রথতলা ।
সকাল থেকে ওখানে কত ভিখারীর মেলা
কেউ তখন শুইয়ে, কারো হাতে ভিক্ষার থালা
কারো মুখে হাসি, কারো চোখে জল
আমাদের ঘিরে যেন আনন্দের রোল
আমরা সবাই ওখানে একসাথে মিলে
রুটি খেতাম, কলা খেতাম আর অবাক চোখে
পৃথিবীটা কত সুন্দর দেখতে পেতাম ।
আজ আবারও নববর্ষ; শুধু বাবা নেই
সব আছে সেই মতো ,আগের মতোই
রথতলা, ভিখিরির দল, পাউরুটির দোকান সব
শুধু সময়ের ব্যবধানে নেই , বাবা নেই ।
আমাদের অভ্যেসটা সেই এখনো আছে
আমি এখনো যাই ওদের কাছে
এখনো দেখতে পাই ওদের মাঝে
প্রতিবছর বাবা আমার ফিরে ফিরে আসে
পাশে বসে গল্প হয়, হয় কত হাসি, ঠাট্টা, মজা,
শুধু চেহারাটা বাবার এখন পাল্টে গেছে
দুর থেকে আর তারে যায় নাকো বোঝা ।
আরো একজন , আমার কাজের দিদি পুতুমাসী
বড় ভালো ছিল গো মেয়েটি ,কাছেই বস্তীতে বাড়ি
আমার সংসারটা সে নিজেই সামলাতো
সেই সকাল থেকে রাত্
আমিতো শুধুই তদারকি, তাতেই কুপকাত।
ঘর ঝাড়ু, কাপড় কাচা, সুস্বাদু সব খাবার
নানাবিধ খাবারেতে সাজাতো ভাড়ার
যার যা চাই দিত হাসি মুখে রাঁধি
নিজে কিছু নিত না, যকৃতে ব্যাধি ।
মাঝে মাঝে বলতো, বৌদি যদি কিছু হয় ?
মেয়েটি রইল গো , এইটাই ভয়।
তোমরা তো আছো, বল দেখবে না ওকে?
ঘরেতে সোমত্ত মেয়ে, কি জ্বালা যে বুকে।
মেয়েটার যদি কিছু করে যাওয়া যেত,
মরতে তো হবেই বলো, শান্তিতো হতো ।
পুতুমাসী তুমি কোথায়, আমি জানি না
হয়তো এমন জায়গা, দৃষ্টি যেখানে আর পৌঁছোয় না ।
আমি কিন্তু চেয়েছিলাম , মেয়েটিকে রাখতে
তোমার মেয়েটা ---,থাক, থাক ও কথা।
আমি কথা রাখিনি এটাই শেষ কথা ।
ক্ষমা করে দিও পুতুমাসী ।
শুভেচ্ছা তোমাকেও মোড়ের চা ওয়ালা ভাই
সকাল থেকে চা ফেরী দিয়ে বেড়াও
আমরা ফেলি আবর্জনা রাস্তাতে
তুমি ডাস্টবিনে জমাও। তোমাকেও শুভেচ্ছা ।
শুভেচ্ছা তোমাকেও ভোরের বোষ্টমী
কত মিষ্টি গান যে শোনাও।
জেগে থেকে যারা ভাণ করে শুধু
তাদের কি করে জাগাও?
শুভেচ্ছা তোদেরকে , সম্পা, পিয়ালি, সান্তনা
এখানে থেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, ঐইই লাস্ট রো কোণা
আমার ছোটবেলার বন্ধু তোরা
একসাথে কত কি খেলেছি , নন্দাই , কুমীর ডাঙা
কানা মাছি , চোর পুলিশ আর ভর দুপুর বেলা --
সন্তুদের উঠোন থেকে আচার নিয়ে খাওয়া ,
কত খুনসুটি, কানাকানি, একসাথে কাঁদা,
বামুন পুকুরে সাঁতার । আমরা সাঁতার দিতাম ,
আর পাশের আমগাছটার ডালে বসে ওরা --
মনে আছে তোদের , পুরনো সব কথা।
দেবলদা সমীরদা বিজনদা আর উৎপল
উৎপলকে তো সম্পা খুব ভালবাসতো , তাই না
কিন্তু ছেলেটা মোটেই ভালো ছিল না রে,
তোরা তো জানিস উৎপল কারণে অকারণে
প্রায়ই আসতো সে আমাদের ওখানে
একদিন দুপুরে, বাড়িতে কেউ নেই, কি এক কাজে
আমি গেছি ছাদে, তখন অনুমানিক তিনটে বাজে
উৎপল এলো আমাদের বাড়ি, এসে সোজা ছাদে
আমি কিছু একটু কাজে ছিলাম ব্যস্ত । বললে
এই আয় না একটা খেলা খেলি।
আমি তখন ষোড়শী, আধফোঁটা ফুল,
লুকিয়ে দেশ পত্রিকা পড়ি , আর মনে মনে ----।
বললাম, কি। ও বললে আগে চল --
চল ওই চিলেকোঠায় , তারপর বলি।
আমি আর উৎপল, আমি উদগ্রীব ওর উৎকণ্ঠা
ও উন্মাদ, আমি শান্ত; আমার তৃষ্ণায় ও ক্লান্ত
তারপর -- । এভাবেই কেটে গেল প্রায় একঘন্টা
সবশেষে ও বললে, কিরে, আজ তবে এখানেই ছুটি ?
নিষিদ্ধ ফল খেয়ে তখন আমি প্রথম যুবতী ।
তোদের বলিনি কোনদিন, এ আমার একান্ত ছিল
তোরা বিশ্বাস কর, তারপর কত দুপুর, আমি
উৎপলের হাত ধরে যুবতী সেজেছি,
তোদের বলিনি । কাউকে বলিনি কোনদিন ।
বুঝিনি সেদিন , কত লম্পট ছিল ছেলেটি ।
অন্ধ ছিলাম ওর নিত্য খেলার সাথী ।
থাক ওই প্রসঙ্গ, আজ নববর্ষ
শুধু আনন্দ আর হর্ষেতে লীন
ভুলে অভিমান, অব্যক্ত কষ্ট
এ যেন শুভেচ্ছার দিন।
শুভ ইচ্ছার দিন।
তাই প্রার্থনা করি মঙ্গল হোক সবার
বাবার, পুতুমাসী, মোড়ের চা ওয়ালার
ভোরের বোষ্টমী আর সেই বাঁশী ওয়ালার ।
মঙ্গল হোক দেবলদা সমীরদা বিজনদাদের
মঙ্গল হোক উৎপল নামের ওই লম্পটের,
মঙ্গল হোক সেই সব শহীদের পরিবারের
যারা জীবন বিলিয়ে দিল অন্যের তরে
কাশ্মীরের দুর্গম সীমানায় কিংবা মাওবাদী অঞ্চলে ।
প্রার্থনা করি রোহিঙ্গা আর সিরিয়ার শরণার্থী
যেন আশ্রয় ফিরে পায়, শান্তির পারাবত উড়ে ।
প্রার্থনা করি মালিয়া, নির্ভয়ারা হেনস্থা যেন না হয়
ঘরে ঘরে যেন জন্মে গৌরী, লঙ্কেশ পরিচয় ।
যারা তারে মেরেছে তাদের শাস্তি চাই না আমি
গোটা দেশটাই অপরাধী যে আজ, জনতা মৌলবাদী ।
প্রার্থনা করি শুধু শুভ বুদ্ধি হোক আপামর জনতার
শুভ বুদ্ধি হোক তোমার বন্ধু , সরকার সেই জনতার
প্রার্থনা করি আর যেন কেউ অনশনে না যায়, ঘোরে
প্রার্থনা করি আর যেন না মৃত্যু আসে অন্নের হাহাকারে।
Comments
Post a Comment