ক্যান্সার
বসে আছি কোণের ঐ সারবাঁধা কেদারায়
একা -। না , ঠিক সেইভাবে একা নয় ,
আবার একাও বটে। বাবা আছেন পাশে ,
পাশে বসা কারো স্ত্রী, বাবা বা দুহিতা
এক সমুদ্র জনতা , অধীর অপেক্ষায়।
প্রতিটি লোক, কেমন যেন নিস্তেজ, নিশ্চুপ
যেন বিশাল গহ্বরে নিমজ্জিত তারা।
কিংবা নির্দিষ্ট কক্ষে আবদ্ধ যেন
এক একটা তারা, মহাকাশ মধ্যে
প্রাণহীন, স্পন্দনহীন অজানা আশঙ্কায়।
একপাশে পরিবার, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা
অন্যপাশে উজ্জ্বল পৃথিবীর উন্মাদনা
ঠিক মধ্যে ঠায় স্থির বিমূঢ় আমি-রা
প্রতীক্ষারত যমদুতের কঠোর প্রহরায়।
সত্যটা জানা, তাই মৃত্যুর অপেক্ষায় ।
ডাক্তার বসে আছেন গুটি কয়েক কক্ষে
দরজাতে দাঁড়িয়ে একজন সিস্টার,
ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছি দুরুদুরু বক্ষে
রুদ্ধশ্বাসে বেঁচে থাকার তীব্র প্রত্যাশায়
মৃত্যুর অভিমুখে । অনিচ্ছা আর হতাশায়।
এক শরীর ভরা অবর্ণনীয় যন্ত্রণা
ডার্ক লুইস ম্যাথডে টি টুয়েন্টি জীবন,
ক্ষণে ক্ষণে কখনো আগ্রহে শুধাই
"কেমন দেখলেন ডাক্তার ?" " এখন কেমন? "
"বলুন না হবো তো সুস্থ ? আগের মতন ?"
নীরবতা যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় --
কঠিন পরীক্ষায়। উত্তর মেলে, আমরা কে ?
আমরাতো নিমিত্ত মাত্র, সহযোদ্ধা যুদ্ধে
শেষ কথা বলার আমার কি অধিকার?
ক্যান্সার মরণব্যাধি, দুরারোগ্য বটে
সময়ে চিকিৎসা হলে ভয় কি কর্কটে ।
সাহস যত্ন নিষ্ঠা আর পথ্যি যে চাই ।
আমরাতো ডাক্তার মাত্র দেবতা নই।
সত্যি, জন্মের মুহূর্তে জানি মৃত্যু স্থির
তবু বেঁচে থাকার সেকি আগ্রহ অধীর ।
মনে প্রাণে তীব্র ইচ্ছা আর্তি চিৎকার
আরো চাই আরো ভোগ সম্ভোগে অধিকার
সুখের শেষ বিন্দুটি আস্বাদিতে চাই ।
হায় অদৃষ্ট , তোমার নিষ্ঠুর পরিহাস
যে দেহকে এতদিন করেছি বা হেলা
তারই যত্নে ঠায় বসা এই সন্ধ্যাবেলা।
আমি উচ্ছৃঙ্খল বটে, অস্থির জীবন
নিজের ভাগ্যকে নিজে করেছি গঠন ।
আমার এই পরিণতির তবু অর্থ হয়
ঐ যে শিশুটি, মাতৃক্রোড়ে শায়িত রয়
কি অপরাধ তার ? কি দোষে সইছে সে
মরণব্যাধির জ্বালা। এখনো দুগ্ধপোষ্য
মায়ের আঁচল ছাড়া চেনে না কিছু
পৃথিবীর রূপ রস আর যত কিছু
এখনো হয়নি চেনা। ধরার বিষাক্ত বায়ু
এখনো করেনি স্পর্শ যে আঁচল ভেদী
কেন তারে গ্রাস করে দুরারোগ্য ব্যাধি ।
কেন তার হাসিটায় যন্ত্রণা মাখা ?
সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি অকালে শুকায়।
চারপাশে যত দেখি শিহরিয়া উঠি
বাল, বৃদ্ধ, বনিতায় অবাধ গতি
যে স্তন দেয় জীবন, সুস্বাস্থ্য সন্তানে
সে স্তনে জাল ছড়ায় মাকড়সা যতনে
মাঝে মাঝে নির্জনে প্রশ্ন জাগে মনে
কি অসীম শক্তি ধরে বিষাক্ত কর্কট
যত দ্রুত দেহে ছড়ায় ততধিক মনে ।
ক্রমাগত গ্রাস করে মনে নৈরাজ্য ভয়
সাহস আস্থা আর আত্মবিশ্বাসের ক্ষয়।
বারবার চিৎকারি উঠে আমার অন্তরাত্মা
আমি বাঁচতে চাই, আমি যে বাঁচতে চাই
আমি বাঁচতে চাই হে পরমপিতা ।
আমার পরিবার , আমার শিশু কন্যা
আমার আত্মীয় পরিজন সবার সাথে
আমি বাঁচতে চাই এই সুন্দর ভুবনে ।
আশীষ করো হে প্রভু, দাও অসীম সাহস
দাও শক্তি , দাও ধৈর্য্য , বিশ্বাস তোমাতে
যেন সফল হই এই দুর্জয় সাধনে ।
আমি যে বাঁচতে চাই প্রভু সুন্দর ভুবনে ।
সুপ্রদীপ দত্তরায়
Comments
Post a Comment