ডঃ কাফিল

ডঃ কাফিল, কেমন আছো তুমি?
তোমার হাতের ঘা-টা শুকিয়েছে কি
ওই যে সেদিন যে আঘাতটা পেলে
খাবারের লাইনেতে  চলতে গিয়ে
ঠেলাঠেলি ধাক্কায়,পড়ে গিয়ে কোনাটায়
সেকি রক্তারক্তি কান্ডটা ঘটিয়ে দিলে
এখনো কি সেই ঘা-টা আছে ডাক্তার ?
লোকে বলে খুব নাকি লেগেছিল তোমার
আমি বলি ধুরছাই, এ আর কি আবার
যে যন্ত্রণা বুকে তোমার চেপে রেখেছো
আমি জানি কতখানি বিষ টেনে নিয়েছো
ছত্রিশটা মৃত্যুর দায়, কম কথা নয়
তুমি বলেই সম্ভব, তোমারই জয়।

ডাঃ কাফিল, তুমি শুনতে পাচ্ছো ?
সাহেনা কি আসে তোমার কাছে ?
ও কি এখানেই নাকি অন্য কোথাও গেছে?
কতদিন হলো সে আর আসে না ।
হয়তো গেছে বাপের বাড়ি
ছেলের সাথে ওর নানীর বাড়ি
নয়তো নিয়েছে নিরুদ্দেশের ঠিকানা।
হয়তো তুমিও  জানো না ডাক্তার ।
কিন্তু এখানে যে সে থাকতে পারে না
সে আমি জানি ।
এখানে ওরা খুনীর পরিবার
অধিকার নেই সমাজে থাকার
শিক্ষা নেবার, বেঁচে থাকার
ওর বাবা যে ছত্রিশটা শিশুর খুনী।

তাবিরকে কি খুব মনে পড়ছে তোমার ?
তোমার ছেলে, কোথায় আছে কেমন আছে
আজ ছ’মাস কোন খবর নেই তার
দুবেলা খাবার কি তার জোটে?
নাকি --- । ছিঃ বাজে কথা ভাবতে নেই বটে ।

ডাঃ কাফিল, তুমি তো জানো
আমরাও তোমার সন্তান তুল্য ছিলাম
আমাদেরও ইচ্ছে ছিল বেঁচে থাকার
আমরাও কারো না কারো তাবির ছিলাম ।
সেদিনের সেই রাত্রে তুমি যখন ঘুরছিলে
হাসপাতালে হাসপাতালে অক্সিজেন খুঁজছিলে
আমরা তখন অক্সিজেনের অভাবে ধুঁকছিলাম ।
বিশ্বাস কর --- খুব, খুবই কষ্ট পাচ্ছিলাম
শ্বাস কষ্ট যে কি কষ্ট তুমি জানো না ডাক্তার
শুন্যে হাত পা ছুঁড়ে প্রতিবাদ করেছিলাম
যদি বাঁচার মত পরিবেশ দিতে  না পারো
তবে জন্মের আগে মৃত্যু দিলে না কেন?

তোমাকে দোষ দিই না ডাক্তার
তুমি অনেক করেছো
হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল খুঁজে
অক্সিজেন এনেছো
আমাদের মত শিশুদের বাঁচিয়ে রাখতে
তুমি অনেক করেছো ডাক্তার ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য তোমার, তুমি পরিস্থিতির শিকার,
নৈরাজ্যের দেশে তুমি প্রশাসনের শিকার।
তুমি শিখন্ডী আজ, তাই সবার  নিস্তার ।

তবে ভয় পেও না ডাঃ কাফিল
আমরা ছত্রিশটা মড়া শিশু স্বাক্ষী
আর স্বাক্ষী সেই রাতের সমস্ত প্রহর
তুমি যে দোষী নও আমরা জানি
আর জানে আপামর জনসাধারণ ।
তারা জানে এই সরকার স্বপ্ন দেখায়
বিনিময়ে কেড়ে নেয় বাঁচার অধিকার ।

Comments