প্রণাম


ফটো নিজস্ব

হে তাপস, হে সূর্যশ্রেষ্ঠ
তোমায় প্রণাম
জন্মের সেই ব্রাহ্মমুহূর্তে
যখন আমি মাতৃগর্ভ থেকে
আলোর স্পর্শ পাই
স্বপ্নের রাজ্য থেকে উঠি জেগে
আমি আঁতকে উঠেছিলাম
এই নতুন পরিবেশে
ভয়, আতঙ্কে, এক অনিশ্চয়তায়
আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম ।
তুমি পাশে থেকে চুপিচুপি বললে
ভয় কি ? আমিতো আছি।
হে জীবিতেশ, তোমায় প্রণাম ।

হে বিশ্বপতি,
বলতে ক্ষতি কি
আমার বয়স তখন কত
হয়তো তিনের মত
একা ঘরে শুয়ে আছি একা
রাত্রি তখন দ্বিপ্রহর
শুনতে পাচ্ছি পেঁচার পাখা ঝাকা ।
শো শো শব্দে বাতাস, জানলা দুটো খোলা
চাঁদের আলোয় ঐ যে কিসের ছায়া
আমার তখন শুকিয়ে গেছে গলা ;
চোখটি মুজি মুখটি গুঁজি ভয়ে
ঠাকুর দেবতা খুঁজি
কাঁপতে কাঁপতে তোমায় আমি ডাকি
হাত পা গুলো ঠান্ডা আমার
প্রাণটা যাবার বাকি।
হঠাত বুঝি মাথার পাশে তুমি
বলছো তুমি ভয় পাস নে খুকি
আমি তো তোর পাশেই বসে আছি ।
হে নিখিলেশ,
সেদিন তো আর হয়নি করা প্রণাম
তবুও জানি সঙ্গে আছো
আমার নয়নাভিরাম ।

সারাবছর এমনি ঘুরে কাটাই
শুধু পরীক্ষাটা যখন দিতে যাই
সরল মনে তোমায় স্মরণ করি
মুচকি হেসে আমায় বল তুমি
ভয় পাসনে খুকি ,
আমি যে তোর সঙ্গে সঙ্গে আছি।
মার্কসীটটা বাবা হাতে নিয়ে
চেঁচিয়ে বলেন, শুনতে পাচ্ছো
এই না হলো আমার সোনা মেয়ে ।
পিছন ফিরে তাঁকিয়ে দেখি তুমি
মুচকি মুচকি হাসছো নয়নমণি।

যখন আমি প্রথম প্রেমে পড়ি
কতভাবে তোমায় ডেকেছি
'ওকে আমার ভালো লাগে
ওকে আমার চাই -'
'বিকেলবেলা মলে গেলে
ওকে যেন পাই।'
'কোথায় মিলি, কোথায় যাই
বাবা যেন জানতে না পায় --'
'চিঠিখানা পাঠিয়েছি,
সময়মত পৌঁছে যায় -'
অভিমানে যখন আমি
চোখের জলে ভাসাই
মান ভাঙ্গতে তোমার দুয়ারে যাই
তুমি বল এসব আবার
কেমন জ্বালা তোর
দিনে দিনে কাটছে বেলা
কখন কাটবে ঘোর।

বাবার তখন শক্ত অসুখ
হাত তুলেছেন সবাই
কেউ বলছেন আর দুটো মাস
কেউ বলছেন দুর ছাই
এই রোগী যে যখন তখন
নিয়তির পরিহাস ।
আমি শুধু তোমায় জানি
দিবা নিশি মানত মানি
দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা মাগি
যেথায় দেখি আশ
হেথায় ছুটি, হোথায় যাই
কি করে যে শান্তি পাই
কেমন করে ফেরাই বাবার শ্বাস
তুমি তখন হে অমরেশ
দুলিয়ে তোমার কোমল কেশ
আমায় তুমি দাও যে অভয়বাণী ।
বাবা আমার সুস্থ হলেন
পার্কে যান , দাবা খেলেন
আনন্দেতে কাটছে জীবনখানি ।

হে পরমপিতা
শেষ গ্রন্থীতে দাঁড়িয়ে
জীবনের প্রতিটি বাঁকে
যখন ডেকেছি তোমায়
শত কাজ মাঝে
এসেছো হে পাশে
তোমায় করিগো নমস্কার ।
আজ আমি ক্লান্ত শ্রান্ত
কামনা বাসনায় আকন্ঠ নিমজ্জিত
খেয়া ঘাটে তোমা অপেক্ষায়।
যা দিয়েছো, অনেক কিছু
অপূর্ণ যাহা তাহা মোর নয় ।
শুধু মিনতি করি হে নাথ তব শ্রীচরণে
সর্ব পাপ ক্ষমি মোর
শেষবেলা খুলে দোর
বরমাল্য পড়িও গলায়।
এই শুধু মোর প্রভু শেষ অভিপ্রায়।

সুপ্রদীপ দত্তরায়

Comments

Post a Comment