ঠিকানা


গভীর রাতে ঘড়িটা শব্দ করে থেমে গেল।
নিজের সমস্ত শরীর জুড়ে এক অস্বাভাবিক অনুভূতি।
অলস পায়ে আয়নায় নিজেকে ফ্রেমবন্দি করল আনন্দম।
ওখানে প্রতিবিম্বের পরিবর্তে শুধুমাত্র ছায়া।

— “চিনতে পারছো আমায়?”
আনন্দম কখনো নিজেকে চিনতে ভুল করে না। পলকে উত্তর দিল, — “তুমি আমার ব্যর্থতা।”
— “আমি তোমার সাফল্যের সোপান।”
ছায়াটি শব্দ করে হেসে উঠল।
কাছে-পিঠে কোথাও রাতজাগা পেঁচাদের সভা চলছিল। প্রচণ্ড বিরক্তিতে ওরা গালিগালাজ করতে করতে চলে গেল অন্যত্র।

ছায়াটি পিছন ফিরতেই, ওর সারা শরীর জুড়ে চাপচাপ রক্ত।
— “তোমার শরীরে এত রক্ত কেন?”
— “এই রক্ত কার, তুমি জানো না?”
ছায়া কাটা কাটা শব্দে উত্তর দিল।
-- "না, জানি না ।"
--" এই রক্ত তোমার দ্বিচারিতার, এই রক্ত তোমার চারিত্রিক অবমননের, এই রক্ত তোমার বিবেকের ক্ষরণ ।"
— " আমি মানি না, তুমি অসুস্থ।”
— “তাই? তুমি নও বুঝি?”

আনন্দমের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এলো এক শীতল স্রোত।
— “না, নই । তাইতো আমি তোমাকে কবেই ত্যাগ করেছি... তোমার মৃত্যু হয় না কেন?”
— “আমি তো বাঁচতে চাইনি আনন্দম ! তোমার জন্যই এতদিন আটকে ছিল জীবন। তিলে তিলে মৃত্যু-যন্ত্রণায় ভুগছিলাম। তবে এবার বোধহয় যাবার সময় হলো।”

দূরে সাইরেন বাজিয়ে একটা অ্যাম্বুলেন্স ছুটে আসছে। আনন্দম তার গন্তব্য জানে না । বুকে একটা অসহ্য ব্যথা । হার্টের ওষুধ — হ্যাঁ, খেয়েছে, তবু...

ধীরে ধীরে আনন্দমের মুখে প্রশান্তি । অ্যাম্বুলেন্স যথারীতি তার ঠিক ঠিকানায় এসে দাঁড়িয়েছে।

Comments