হোমস্টে

ঘড়িতে তখন তিনটা ছুঁই ছুঁই । গাড়িটা ক্লান্তিহীন গতিতে এগিয়ে চলেছে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে । গন্তব্য টেন্দ্রাবঙ থেকে হোমধারা। পিচ করা পাহাড়ি রাস্তা, খুব বেশি চওড়া নয় তবে আঁকাবাঁকা পথে দুপাশে সারিসারি শাল সেগুন আর মেহগনির বিশাল বিশাল গাছ । যতটা আলো ততটাই আঁধার, যেন হাত ধরাধরি করে অদ্ভুত এক মায়া জাল তৈরি করেছে । মাঝে মাঝেই মেঘেরা রাস্তা জুড়ে দাঁড়ায়, লাওয়ারিশ গরুর মত । ঠেলে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়, আবার কোথাও স্কুল ফেরত বাচ্চা যেন হাত নাড়িয়ে ওরা শুভেচ্ছা জানায় । ওরা মানে মেঘেরা । মন্দ লাগছিল না সুখময়ের ।
সুখময়ের পুরো নাম সুখময় মুখশুদ্ধি, নৈহাটিতে বাড়ি। কাজের কাজ কিছুই করেন না, অনেকটা ভবঘুরে প্রকৃতির লোক। বিয়ে-সাদি করা হয়নি তাই সেই অর্থে কোন বন্ধন নেই। পৈতৃক সম্পত্তিতে কয়েক ঘর ভাড়া দেওয়া আছে, সেই ভাড়াতে চলে যায় ।
গাড়িতে খুব বেশি যাত্রী নেই। তবু রংপো অবধি অবস্থা কিছুটা টাইট ছিল। পাশের মহিলাটি, মহিলা না বলে মেয়ে বলাই ভাল । বার কয়েক বমি করে সুখময়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে । মোশন সিকনেস ছিল বোধহয় ।শুরুতে সংকোচ ছিল, পরে শরীর আর সঙ্গ দিচ্ছে না, শরীরের পুরোটাই ওর উপর ছেড়ে দিয়ে পাক্কা দুঘন্টা ঘুম। সুখময়ের নড়াচড়া করার উপায় নেই, শক্ত হয়ে বসা । গাড়ি রংপোতে থামতেই মেয়েটি দ্রুত নেমে গেল। যাবার আগে ছোট্ট করে হেসে বললে, স্যরি আঙ্কেল। মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে আছে । চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছিল না । সুখময় হালকা হেসে ওকে আশ্বস্ত করল। এতক্ষণের অস্বস্তিবোধ নিমেষে হালকা হয়ে গেছে ।  
গাড়ি চলেছে গড়িয়ে গড়িয়ে । যেহেতু যাত্রী প্রায় নেই বললেই চলে, যেখানেই জনবসতি ওখানেই থামছে যদি একটা দুটো যাত্রী পাওয়া যায় । এদিকে বেলা ক্রমশ বাড়ছেই । সকাল আটটায় গাড়িতে চেপে ছিল, এখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। এতক্ষণে ছয় ছয়টি সিগারেট খাওয়া হয়ে গেছে । কিন্ত পথ যেন শেষ হতে চায় না । গাড়িতে বসে বসে গায়ে হাতে ব্যাথা । শেষ সহযাত্রী লেপচা দম্পতি নেমে যাবার পর গাড়ির ঝাকুনি আরও অনেকটাই বেড়ে গেছে । বর্তমানে গাড়িতে ,শুধুমাত্র সুখময় আর ড্রাইভার। ছেলেটা খুব চটপটে কিন্ত কথা বলে না। আপন মনে গান চালিয়ে গাড়ি চালায় । প্রশ্ন করলে ছোট্ট করে উত্তর দেয় । তাতে সুখময়ের খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা না ।এই আলো ছায়া পথে জঙ্গলের আদিম নিস্তব্ধতার সঙ্গে সে নিজেও যেন একাত্ব হয়ে গেছে। 
ঘোর কাটলো ড্রাইভারের প্রশ্নে । - স্যার আপকো কাঁহা উতরনা হ্যায় ?
-- কিউ হোমধারা !
-- হোমধারা তো আচুকে হ্যায় স্যার। কথা বলতে বলতেই ড্রাইভার ওখানেই গাড়ি থামিয়ে দিল ।
-- হামে অর্কিড হোমস্টে মে বুকিং কিয়া হ্যায় । হিন্দি ভাল বলতে পারে না, কিন্ত ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে কাজ চলে যায় ।
--এয়সা কোই হোমস্টে কে নাম হাম শুনা নেহি স্যার। বুকিং ক্যায়সে কিয়া ?
সুখময় উত্তরদিল, অনলাইন ।
-- এড্রেস ?
-- ওই তো হোমধরা ! সুখময় আবারও উত্তর দিলে। 
-- কোই ফোন নাম্বার ? 
-- হ্যাঁ, হ্যায় --
-- তো ফোন লাগাও না স্যার --
শালা নেটওয়ার্ক ! মাসান্তে টাকাটা ঠিক গুনে গুনে নেয় অথচ যখন প্রয়োজন কিছুতেই লাইন পাওয়া যাবে না । আগে এক সময় ধারনা ছিল সব প্রাইভেট হয়ে গেলে সার্ভিস ভাল হয়ে যাবে । এখন ভাল হওয়া দূর দূরস্ত, অভিযোগটা পর্যন্ত শুনতে চায় না কেউ, বিরক্ত লাগে । বেশ কয়েকবার বিফল হওয়ার পর ড্রাইভারই বুদ্ধি দিলে । বললে, স্যার, আগে টঙ্গি মিলেগা, উহাপে পুছতে হ্যায় স্যার ।
খানিকটা এগিয়ে যেতেই বাসস্ট্যান্ডের মত একটা শেড। একটা বুড়ো নেপালী নির্লিপ্ত হয়ে বিড়ি ফুঁকছে। 
-- অর্কিড হোমস্টে কাঁহাপে হ্যায়, মালুম হ্যায় ?
প্রশ্নটা তখনও শেষ হয়নি, মূহুর্তে বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সটান দাঁড়িয়ে একটা সেলুট ঠুকে বলল, আপ টেন্দ্রাবঙ সে আয়ে হ্যায় না সাব ?
-- হ্যাঁ, কিন্ত তুমি কি করে বললে ? এবার সুখময়ের অবাক হবার পালা ।
-- আপ কে লিয়ে হি বইঠে হ্যায় সাব ।
-- মানে ? কি বলছে লোকটা !
-- আপকো লেট হো রহা থা না সাব, ইসলিয়ে মালিকনে হামে ভেজে হ্যায় ।
-- কে ? মানব স্যার ? তখনও সন্দেহ কাটছে না সুখময়ের।
-- নেহি । সাব তো জোড়থাঙ গিয়া হ্যায় না সাব, ইসলিয়ে মাধবী মেডাম নে ভেজে হ্যায় ।
হতে পারে । যদিও এই মাধবী মেডামের সাথে ওর সরাসরি কোনদিনই কথা হয় নি, তাহলেও হতে পারে । বললে, ঠিক হ্যায়, গাড়িতে বসো ।
-- গাড়ি নেহি চাহিয়ে সাব । ইহা সে পয়দল যানা পড়েগা ।
-- পয়দল ? আরে বাপরে, মানববাবু তো --
-- ক্যায়া সাব, থোরা হ্যায় না সাব, লাও সামান লাও ।
ড্রাইভার সাথে সাথেই সুটকেস নামিয়ে ভাড়া বুঝে নিয়ে হাওয়া । ওকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই, অনেকটা পথ ফিরে যেতে হবে । যাবার আগে সুখময় ওকে বললে, আমার নম্বর আছে তো ? পৌঁছে আমাকে একটা ফোন করে দিও। 
ছেলেটা সত্যিই ভাল। নেপালী বুড়োটা সুটকেস মাথায় নিয়ে একটা ছোট্ট পায়ে হাঁটা পাহাড়ি পথে আগে আগে হাঁটছে, পিছন পিছন সুখময়। ওর বিড়ি খাওয়া দেখে এই মূহুর্তে ওরও একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করছিল। একটা সিগারেট বাড়িয়ে দিয়ে বললে, মাচিস হবে ?
-- হোগা না সাব -
বললে, নাও তুমিও ধর ।
-- নেহি সাব -
-- আহা লজ্জা পাচ্ছ কেন ? আমিই তো দিচ্ছি - । সুখময় ওকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে । 
-- নেহি সাব, হাম সিগারেট নেহি পিতে সাব ।
-- কি আশ্চর্য, এইতো দিব্যি বিড়ি খাচ্ছিলে --
-- হাম সিগারেট নেহি পিতে সাব ।
যাঃ বাবা ! বোঝা গেল তর্ক করে লাভ নেই। 
পাহাড়ি চড়াই হলেও রাস্তাটি ভারি সুন্দর। দুপাশে মর্নিং গ্লোরি, মাধবীলতা, আর মধুমঞ্জরীর গাছ । আর আছে নানা রঙের রঙ্গন সাথে মাল্টি পেটেল এডোনিয়াম। আবার পিছন ফিরে দাঁড়ালে দূরে স্বেতশুভ্র ঝকঝকে হিমালয় । অদ্ভুত সুন্দর, চোখ জুড়িয়ে যায় ।
সুখময় হাঁটছে আর হাঁটছে। মনের মধ্যে ছোট্ট একটা কাঁটা , যখন বুকিং করেছিল তখন মানববাবু বলেছিলেন গাড়ি সরাসরি হোমস্টের দোরগোড়ায় এসে থামে কিন্ত এখানে তো তা ঠিক মিলছে না ।
-- আচ্ছা আমরা কি ঠিক জায়গাতেই যাচ্ছি বাহাদুর ? মনের সন্দেহ দূর করতে নিজে থেকেই প্রশ্ন করল সুখময়। 
-- হ্যাঁ সাব ।
-- লেকিন হামকো তো বলা থা গাড়ি দরজায় এসে দাঁড়াবে !
-- গাড়ি তো গেট পে আকে রোকা হ্যায় সাব ।
-- কি বলছো ?
-- হ্যাঁ সাব । ওহি হামারা গেট হ্যায় ।
-- তাহলে এত ভিতরে কেন থাকার জায়গা করেছো ? সুখময় লক্ষ্য করলে বাঙ্গলায় বলাতে ওদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না ।
-- গেস্ট লোগোকা পসন্দ হ্যায় সাব । 
খুব বেশি পথ নয়, খানিকটা এগিয়ে ইউ টার্ন নিতেই একটানা তিন তিনটে একলা ঘর ।আর তার ঠিক আগেই ঝুপড়ি মতো একটা ছোট্ট কুটির । লোকটা বললে, ইয়ে হামারা ঘর হ্যায় সাব আউর ইয়ে তিনো মে আপকো যো পসন্দ হ্যায় সাব আপ বলো, হাম সুটকেস লাগা দেঙ্গে। 
-- মানে ?
-- আজ আপকে সিবা দুসরা কোই গেস্ট নেহি হ্যায় সাব । তো আপ পসন্দ করো ।
এক এক করে তিন নম্বর ঘরটাই সুখময়ের বেশি পছন্দ হলো । ঘরটা বড় আর পাশে বাইরে খুব সুন্দর একটা বসার জায়গা । সুটকেসটা রুমে রেখে বাইরে সাজানো চেয়ারটিতে শরীর ছড়িয়ে দিল সে। যেদিকে চোখ যায় শান্তি আর শান্তি ।
-- আপ চায়ে লেঙ্গে না সাব ?
-- হ্যাঁ, খুব কড়া করে দিও । সাথে কিছু খাবার থাকলে দিতে পারো । ভীষণ ধকল গেছে রাস্তায় ।
লোকটা সেলুট ঠুকে চলে গেল। অল্প দূরে একটা কামরাঙ্গা গাছে ছোট বড় অসংখ্য টিয়া পাখি । দিনের শেষে তাদের শেষ কথাগুলো সেরে নিতে ব্যস্ত। হয়তো পরিবারের একে অন্যের খোঁজ নিচ্ছে, অন্ধকার নামার আগে সবাই বাড়ি ফিরেছে তো ! দুটো ধনেশ পাখি একটা মরা ডালে বসে ঠোঁট ঘষছে। শুধু সুখময় একা - ঘর ছেড়ে, কর্মক্ষেত্র ছেড়ে দূর পাহাড়ে চলে এসেছি । কেন এসেছে, সে নিজেও জানেনা । যদি অসুস্থ হয়, কাউকে খবর দেবার নেই। ওর জন্যে আজ দীর্ঘ দিন কোন সন্ধ্যাতেই কেউ আর অপেক্ষা করে থাকে না ।
হঠাৎই নজরে এলো কাছেই আরও একটা বাংলো টাইপের বাড়ি । প্রায় দু'শো মিটার দূরত্বে হবে, কিন্ত এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় । দিনের শেষ আলোর রেশে বাড়িটা ঘিরে একটা মায়াবী আকর্ষণ তৈরি হয়েছে ।
নেপালী লোকটা চা নিয়ে আসতেই ওই ঘরটা নিয়ে প্রশ্ন করল সুখময় ।
-- হামারা হ্যায় সাব । কিউ সাব ?
-- ওখানে কারা থাকে ?
-- কোই নেহি সাব ।
-- খালি?
-- হ্যাঁ সাব -
-- তাহলে আমাকে ওখানে থাকতে দিচ্ছ না কেন ?  চা খেতে খেতে প্রশ্ন করল। 
-- দূর হ্যায় সাব ।
-- তাতে কি ? আমি এতো টাকা খরচ করে এখানে থাকতে এসেছি এই আরামটুকু পাবার জন্যই তো না কি ?
-- ওহ বাত নেহি হ্যায় সাব উহাপে কোই রহতা নেহি ।
-- কিউ ? কেন ? বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে ওর ইচ্ছে নেই। প্রতিটি ফুটফরামাইসে তাকে অনেকটা হাঁটতে হবে । সুখময় খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললে, তোমার মেডামের নাম্বার বল । আমি কথা বলে দেখছি ।
মনে হল দাওয়াই কাজে লেগেছে । লোকটা ঘাবড়ে গিয়ে বললে, জরুরি নেহি সাব । হাম খোল রহা হ্যায় । লেকিন রাতমে চিল্লানেসে ভি কোই নেহি আয়েগা, ইয়াদ রাখনা।
-- কিউ ?
--তবিয়ত খারাপ হনে সে ভি আদমি চাইয়ে না সাব ? আওয়াজ হি শুনাই নেহি দেতা সাব ।
-- তাতে কি ? ফোন করব । সুখময় মুখের উপর জবাব দিয়ে দিল। 
ব্যাটা বদমাশ, টাকা পেয়ে এখন যা খুশি একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে ।
নেপালী লোকটা গজগজ করতে করতে সুটকেস নিয়ে হাঁটা দিল । এই কটেজটা সত্যি সেরা । সামনে নিখুঁত একটা বাগান । প্রত্যেকটা গাছের ফুলগুলো এই বিকেলেও ভীষণ ভাবে তরতাজা । আসার আগেই বোধহয় একপশলা বৃষ্টি হয়েছে । 
দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই একটা মিষ্টি গন্ধ। মনে হল কেউ যেন একটু আগেই রুম ফ্রেশনার স্প্রে করে গেছে । টিপ টপ গোছানো রুম, তুলনায় খানিকটা বড় । চারদিকে ঘেরাও বারান্দা । জানলাগুলো বিশাল বড় বড় । সবচেয়ে বড় কথা, হিলটপে হওয়ায় তিনশ ষাট ডিগ্রি ভিই পয়েন্ট। এমন একটা রুমে থাকার জন্যই তো এতটা পথ ছুটে আসা ।
পশ্চিম আকাশে আরও কিছুটা সময় হয়তো সূর্যের আলোর খেলা চলতো কিন্ত তার আগেই হঠাৎ আকাশ কালো হতে শুরু । পাহাড়ে রোদ বৃষ্টির কোন সারেগামা থাকে না। । এখানেও কোন ব্যাতিক্রম নেই ।
নেপালী সেই কেয়ারটেকারটি এসে খাবার জল দিয়ে গেল। অনেকক্ষণ বাইরে বসেছিল সুখময়, ঘরে ঢুকতেই বিরক্তিকর পরিবেশ। দেখে লোকটা প্রত্যেকটি দরজা জানালায় লাল সুতো জাতীয় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিচ্ছে । ওকে দেখেই খুব ঘাবড়ে গেছে মনে হল । জিজ্ঞেস করাতে বললে, কুছ নেহি সাব ।
সুখময় স্পষ্ট বুঝতে পারছে মিথ্যে কথা বলছে লোকটা । একটু ধমক দিতেই বললে, পূজাকে ধাগা সাব, কিসিকা নজর না লগ জায়ে ।
মনে মনে হাসল সে । এই বয়সেও নজর লাগার ভয় ! জিজ্ঞেস করলে, তোমার নাম কি ?
-- ভঞ্জু সাব, ভঞ্জু সোনার। 
-- ঠিক আছে, একটু হাত চালাও। আর দেখোতো একটু পকোড়া, বাদাম বা কাজু কিছু একটা দিতে পার কিনা ।
-- মিলেগা সাব, জরুর মিলেগা । তারপর খানিকটা ইতস্তত করে ব্যাগ থেকে একটা ফটো বের করে বললে, সাব, ইয়ে ফটো দরয়াজাপে লাগা দু সাব ?
-- ফটো ?
-- শেরওয়ালী মা সাব । শুভ শুভ হোতা হ্যায় না সাব !
ঠাকুর দেবতাদের ফটো নিয়ে ওর যেমন আদিখ্যেতা নেই তেমনি এলার্জিও নেই। কারো বিশ্বাসে ঘা দিতে ইচ্ছে করছিল না । বলল, তোমার ইচ্ছে । 
ভঞ্জু চট করে ফটোটা টাঙিয়ে দিয়ে চলে গেল। বাইরে অন্ধকার নামার সাথে সাথেই জোড়ে হাওয়া বইতে শুরু হয়েছে । অল্প সময়ের মধ্যেই অঝোবে বৃষ্টি । গ্লাসের জানলাগুলো টেনে নিয়ে ঘরের আলোটা জ্বালিয়ে দিতে হয়েছে, নইলে অন্ধকার লাগছিল। দার্জিলিং থেকে নিয়ে এসেছিল ভ্যালেন্টাইন্স ফাইনেস্ট ব্লেন্ডেড স্কচ উইস্কির দুটো বোতল, একটা ইতিমধ্যেই শেষ। শেষ বোতলটা থেকে একটা সুন্দর পেগ বানিয়ে এলেক্সাতে রবীন্দ্র সঙ্গীত চালিয়ে দিল সুখময়। মদ আর রবীন্দ্র সঙ্গীত, না মদ বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না । ড্রিঙ্কস আর রবীন্দ্র সঙ্গীত ওর কাছে হরিহর আত্মা । একটা ছাড়া অন্যটি সে ভাবতেই পারে না । একটা দুটো গান শুনেছে , তার বেশি নয়; চোখ লেগে গিয়েছিল। আসলে সারাদিনের ধকলের পরিণাম। ঘুম ভাঙ্গলো দরজায় ঠকঠক শব্দে । বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে । কাঁচের দরজা সত্ত্বেও ভিতর থেকে মানুষ চেনা যায় না । বাহাতে চশমাটা চোখে লাগিয়ে উঠতে যাবে হঠাৎই সশব্দে দরজায় টাঙানো ছবিটা মাটিতে পড়ে গেল । অবাক কান্ড, এতক্ষণ ধরে সোঁ সোঁ শব্দে বৃষ্টি ঝরছে, তাতে কিছু হয়নি অথচ শুধু মাত্র দরজায় ঠোকা মাত্র ফটোটি পড়ে গেল। মনে হলো কারেন্ট চলে গেছে । তন্দ্রার মধ্যেই কখন গেছে বুঝতে পারেনি । সোলারের চার্জে একটা বাতি টিমটিম করে জ্বলছে । ফটোটা তুলে নিয়ে দরজা খুলেছে, মনে হলো কেউ যেন দরজা থেকে ছিটকে সরে গেল। বাইরে কোথাও খুব কাছে বাজ পড়েছে । সেই আলোতে যতটুকু, মনে হল কোন একটি মেয়ে । এই বৃষ্টিতে অবাক লাগল। পরিচয় জিজ্ঞেস করাতে বললে, সাব ম্যায় সুভদ্রা, ভঞ্জু কে ঘরওয়ালী ।
-- দাঁড়াও, টর্চ নিয়ে আসছি ।
ভেতরে গিয়ে ফটোটা টেবিলের উপর রেখে টর্চ হাতে বেরিয়ে এল সুখময়। বাতি জ্বালাতেই ঝলসে যাবার পালা । দরজায় দাঁড়িয়ে একটি বছর তিরিশের অপূর্ব সুন্দরী মহিলা । বৃষ্টিতে কাকভেজা, গা বেয়ে টসটস করে জল পড়ছে । পরনে সালোয়ার কামিজ ভিজে শরীরের সাথে এমন ভাবে সেটে আছে যে শরীরের সমস্ত ভাঁজ সুস্পষ্ট। চোখ সরানো যাচ্ছিল না । ঘোর কাটলো মেয়েটির সম্বোধনে । 
-- সাব, বাতি বুজাইয়ে না সাব ।
লজ্জা পেল। সত্যিই তো, আরও আগেই বন্ধ করা উচিত ছিল ওর। বলল, সরি, ভেতরে এসো ।
-- অভি নেহি সাব বাদ মে ।
বলল, কিন্ত তুমি যে একেবারেই ভিজে গেছ !
কথা শেষ হবার আগেই মেয়েটি সশব্দে হেসে উঠলো । 
কথাটা বলে নিজেকে খুব অপ্রস্তুত লাগছিল সুখময়ের। 
মেয়েটি ওর হাত টেনে নিয়ে একটা ক্যাসারোল ধরিয়ে দিয়ে বললে, আওর কুছ সাব ? তখনও মেয়েটি ওর হাত ধরা ।
বললে, নেহি -
-- কুছভি নেহি ?
সে নীরবে হাসল। ইচ্ছে করছিল অনেক কিছুই চাইতে । নিজেকে সংযত করে বলল, না -
-- চলতি হুঁ সাব । কথা শেষ করেই মেয়েটি বৃষ্টিতে নেমে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। 
কিছুক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল সুখময়। তারপর বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগতেই ভিতরে গিয়ে দরজায় খিল দিল সে। এতক্ষণ বিদ্যুত ছিল না ।এবার এলো বোধহয় । বাতিটার পাওয়ার বেড়েছে অনেকটাই। ক্যাসারোলটা খুলতেই মন ভরে গেল। গরম গরম এগ পাকোড়া । তাড়াতাড়ি আরও একটা পেগ সাজিয়ে বসে গেল। রাতটা সেলিব্রেট করতে হবে তো !

মিনিট দশেক পর বৃষ্টি থেমে যেতেই আবার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। জায়গাতেই বসে জিজ্ঞেস করল, কে ?
-- ম্যায়, ভঞ্জু সাব। 
উঠে দরজা খুলে দিতেই দেখে ভঞ্জু একটা ক্যাসারোল নিয়ে দাঁড়িয়ে ।
 অবাক কান্ড ! এখন আবার কি নিয়ে এলে ?
-- আপকা পকোড়া সাব ।
-- আবার পকোড়া ?
-- আপ বোলা না সাব । ভঞ্জু এবার একটু নেশা করে এসেছে ।
-- এই একটু আগেই তো তোমার বউকে দিয়ে পাঠালে, আবার কেন ?
--ক্যায়া সাব , আপভি না -- । মেরা কোই বিবি নেহি হ্যায় সাব, ইসকো তো হাম বহুত পহলেই উপর ভেজ দিয়া থা । অভি ইস দুনিয়া মে ম্যায় একেলা হুঁ । বলতে বলতে সে প্রায় ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভেতরে চলে গেল। টেবিলে ক্যাসারোল রাখতে গিয়ে হঠাৎই তার নজরে পড়লো আগের ক্যাসারোলটি । সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন, ইয়ে কিসনে দিয়া সাব ?
-- বললাম তো তোমার বউ । সুখময় ছোট্ট করে উত্তর দিলে ।
-- আপ খা লিয়া সাব ?
বললে, হ্যাঁ, কেন ?
-- ইস্ , আপভি না সাব ! কোইভি কুছ দেগা তো খানা নেহি সাব ।
বোঝা গেল লোকটা নেশার চোটে ওকে পাকাচ্ছে। বললে, ঠিক হ্যায় অব তুম যাও । ন বাজে খানা ভেজ দেনা ।
চলে যাচ্ছিল, সুখময় ওকে বলল, তোমার ক্যাসারোল নিয়ে যাও। 
ভাল করে চোখ বুলিয়ে চলেই যাচ্ছিল, হঠাৎই দরজার ওপরে নজর পড়ায় আবার ফিরে এলো । -- ওহ ফটো কাঁহা গিয়া সাব ?
-- পড়ে গিয়েছিল, তাই তুলে রেখেছি । সুখময় উত্তর দিল ।
ভঞ্জু কিছুটা ভয় পেয়েছে মনে হল । সঙ্গে সঙ্গেই একটা টুল টেনে ফটোটা আগের জায়গাতে টাঙিয়ে দিল । এবার ভেতর থেকে দড়ি এনে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে , যাতে আর পড়ে না যায় । ফিরে এসে বললে, সাব, ফটো ওহিপে রহনা হ্যায় । ওসকো হঠানা নেহি , ঠিক হ্যায় সাব ?
সুখময় হেসে বললে, ঠিক আছে ।
-- হ্যাঁ, ইয়াদ রহেগা না সাব ? বলে একটু এগিয়েই আবার এসে বলল, সাব -- ফটো কাঁহা পে রাখনা হ্যায় সাব । সুখময় আঙুল তুলে জায়গা দেখিয়ে বলল, ওহি পে ।
-- একদম সহি সাব । হান্ড্রেড মে হান্ড্রেড। তারপর একটু ইতস্তত করে ওর বোতলটার দিকে আঙুল তুলে বললে, সাব, থোরা মিলেগা সাব। একদম থোরা ?
-- দিতে পারি , কিন্ত তোমার তো এখনই নেশা হয়ে গেছে --
-- ক্যায়া বাত সাব, ভঞ্জু কো নেশা ! ভঞ্জু নেশা ভাঙ নেহি করতা । সিরিফ দারু পিতা হ্যায় ।
সুখময়ের মনে হল, এই লোকটা আরও কিছু সময় থাকলে ওর আমেজটাই নষ্ট হয়ে যাবে । একটা গ্লাসে খানিকটা ঢেলে দিয়ে বলল, এখানে খাওয়া চলবে না একদম । ঘরে নিয়ে যাও , ওখানে গিয়ে খেও। 
যেতে যেতে লোকটা আবার বলল, ফটো কাঁহা পে রাখনা হ্যায় সাব ?
বলল, জানি, তুমি এখন যাও ।
-- হ্যাঁ সাব চলতা হুঁ । লেকিন সাব --
-- কোন লেকিন টেকিন না, তুমি এখন যাও ।
-- নেহি সাব গলত হোগা তো গজব হো জায়গা -
 তাকে প্রায় জোর করে বের দিয়ে বলল, বুঝেছি । তোমাকে আর বলতে হবে না । রাতের খাবারটা মনে করে ঠিক সময়ে দিয়ে দিও ।
এতক্ষণ একটা ভাল লাগা ঘোরের মধ্যে ছিল, লোকটা এসে মুডটাই পুরো তেতো করে দিল । এখন গান শুনতেও ভাল লাগছে না ওর । আরও একটা পেগ বানিয়েছে বটে কিন্ত খেতে অরুচি লাগছে ।
টিভিটার এক মাথা থেকে অন্য মাথা অবধি সার্চ করল, কিছুতেই ইন্টারেস্ট নেই । একটা বিষয় কিছুতেই পরিষ্কার হচ্ছে না, ভঞ্জু যদি ওর বৌটাকে কোথাও পাঠিয়ে থাকে তবে পকোড়াগুলো দিয়ে গেল কে ? পর মূহুর্তেই ওর মনে হল, লোকটা নেশা করে কি বলতে বলে গেছে । এই নিয়ে ভাবার কি আছে ? কিন্ত মেয়েটা সত্যিই অপূর্ব সুন্দরী । শালা, বাদরের গলায় মুক্তোর মালা ! ভেজা গায়ে যেভাবে এসে দাঁড়িয়েছিল, যেকোন সময় কোন কেলেঙ্কারি হয়ে যেতে পারতো । মেয়ের ছবিটা কিছুতেই মন থেকে মোছা যাচ্ছে না ।
ঠিক নয়টায় ভঞ্জু খাবার নিয়ে এল । ভাত, মিক্সড ডাল, আলুভাজা আর চিকেন কসা। রান্না ভাল হয়েছে। দুপুরে ঠিকঠাক খাওয়া হয়নি । এবারে খাবার গরম থাকায় খুব তৃপ্তি করে খেল সুখময় । 
বাসনগুলো বাইরে রেখে আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়ল সে। আকাশ এখন পরিষ্কার। মেঘের চিহ্ন মাত্র নেই। দূরে পাহাড়ের গায়ে টিমটিম আলো জ্বলছে । ওখানে জনবসতি আছে নিশ্চয়ই। সামনেই সম্ভবত পূর্ণিমা । বাইরের আলোতে ঘর ভাসছে । পর্দাগুলো সরিয়ে দিয়ে ঘরের সব কটা আলো নিভিয়ে দিল একসাথে। সত্যিই জায়গাটা সুন্দর। ঘুম আসতে খুব একটা সময় লাগল না ।
 তখন সে গভীর নিদ্রায় । হঠাৎ বিড়ালের কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। অদ্ভুত মায়াবী কান্না । একা একা খুব অস্বস্তি লাগছিল তার। এই প্রথম যে একা থাকছে তাতো নয়, কিন্ত এই একঘেয়ে কান্নাটা শরীরে শিরশিরানি লাগছে । কেমন একটা অসহ্য অস্বস্তিকর পরিবেশ । ঠিক তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। তাকিয়ে দেখে ভঞ্জুর বৌ । একলাফে বিছানায় উঠে বসে সুখময় । ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সময় প্রায় একটা । এত রাতে একটা মেয়ে --
স্বাভাবিকভাবেই উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে, কি চাই ?
-- ম্যায় সুভদ্রা সাব , দরওয়াজা খোল না সাব ।
এতরাতে একটা মেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে । কি হতে পারে ? একবার মনে হল খুলে দেয় , নিশ্চয়ই কোন প্রয়োজন আছে নইলে এত রাতে কেন দরজায় এসে খটখটাবে। আবার ভাবছে কি প্রয়োজন? যদি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে, মান সম্মান কিছুইথাকবে না। মন স্থির করতে পারছিল না । যত সময় যাচ্ছে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার একটা প্রচন্ড তাগিদ অনুভব করছে সে । কিন্ত সাহস হচ্ছে না । শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিল খুলেই দেখা যাক । হয়তো সত্যি সত্যিই কোন প্রয়োজন থাকলেও থাকতে পারে । ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে সোজা গিয়ে দরজা খুলে সরে দাঁড়াল সুখময়। ভেবেছিল দরজা খুলে দিলেই মেয়েটি ভেতরে চলে আসবে । কিন্ত বাস্তবে মেয়েটি ভেতরে এলো না । তাই একটু মুখ বাড়িয়ে বললে, ভেতরে এসো ।
-- আপ বাহার আইয়ে না সাব ।
মেয়েটি দরজায় দাঁড়িয়ে । খোলা চুল, পড়নে ভীষণ উগ্র পোষাক । মেক আপ ছাড়াই অপূর্ব সুন্দর লাগছে । চোখ সরানো যায় না । মেয়েটির সমস্ত শরীর জুড়ে একটা নিষিদ্ধ আকর্ষণ। 
-- সাব । সুভদ্রার ডাকে ঘোর কাটল। 
-- বল । সুখময় ঘোরের মধ্যেই উত্তর দিল।
-- বাহার আও সাব ।
-- কিন্ত কেন ?
-- এইসেই --। কথাটা বলে সুভদ্রা অদ্ভুত এক শারীরিক ভঙ্গি করলে ।
-- কি আশ্চর্য ! 
সুভদ্রা নিরুত্তর। শুধু রহস্য করে হাসছে ।
সুখময়ের ভেতরে একটা প্রচন্ড ক্ষুধা ধীরে ধীরে মাথা চাড়া দিচ্ছে । নিজেকে অনেক কষ্টে সংযত রেখে বলল, যদি ভঞ্জু এসে আমাদের দেখতে পায় তবে কি ঘটতে পারে ভাবতে পারছো ?
-- কুছ নেহি হোগা সাব, ওহ তো দারু পিকে শো রহা হ্যায় । সাথমে ম্যায়নে নিদকি গোলি মিলা দি ।
চমকে উঠল সুখময়। বলে কি মেয়েটা ! বললে, কেন ??
-- আপ কে লিয়ে সাব । তারপর একটু থেমে বললে, ডর মত সাব । আও না, থোরা বাহার বৈটতে হ্যায় । 
হয়তো বেরিয়েই যেত সুখময়, হঠাৎই ফোন বেজে উঠতে চমকে উঠল সে। এতরাতে কে আবার ফোন করছে ? ছুটে গিয়ে ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো , হাম পৌঁছ গ্যায়ে সাব। 
-- কৌন ? কে বলছেন ভাই ?
-- ম্যায় ড্রাইভার হু সাব ।
মনে গেল ওকে বলেছিল, যত রাতই হোক বাড়ি পৌঁছে একটা ফোন করে দিও । আসলে ওর একার জন্যই ওকে তন্দ্রাবঙ আসতে হয়েছে কিনা ।
বলল, ঠিক আছে, গুড নাইট। 
-- গুড নাইট সাব, ফির মিলেঙ্গে। 
ফোন কেটে যেতেই আবার দরজায় ফিরে এল সুখময়। অবাক কান্ড, দরজায় সুভদ্রা নেই। কোথায় গেল সুভদ্রা ? আমি এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল কিন্ত নেই। একবার মনে হল নিশ্চয়ই ঘরের ভেতর এসে বসেছে । ঘরের লাইটা জ্বালিয়ে দিল সে। নাঃ, ঘরে তো আসেনি । তাহলে নিশ্চয়ই বাইরে অপেক্ষা করছে । দরজা খুলে বাইরে যাবে, তখুনি কে যেন মাথার পেছন থেকে ওকে আঘাত করল জোরে। বেশ জোরেই লেগেছে । চমকে উঠল সুখময়।  
পেছন ফিরে দেখে, দরজার উপর লাগানো ফটোটি আবার পড়ে গেছে । মাটি থেকে ফটো তুলে পাশেই চেয়ারে রাখতে রাখতে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সুভদ্রা সিঁড়ি থেকে নেমে গেছে কখন, এখন সে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে। ওখান থেকেই সুখময়কে ইশারায় ডাকছে । ওর চোখ জুড়ে অস্বস্তিকর একটা প্রচন্ড আকর্ষণ । সরাসরি চোখের দিকে তাকানো যায় না । সুখময় ওর সম্মোহনী শক্তিতে স্থির তাকিয়ে আছে । শরীরে চলার শক্তি নেই । সুভদ্রা শরীরের গড়ন যেন কোন শিল্পীর সুক্ষ ভাস্কর্য । এই নির্জন চাঁদনী রাতে পাহাড়ের কোলে এক সুন্দরীর বারংবার আহ্বান- সুখময়তো ক্লীব নয় । সুখময় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সুভদ্রা ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে আসছে , বুঝতে পারছি আর মূহুর্ত খানিক পরেই ওর সর্বনাশ হতে চলছে কিন্ত সে নিরুপায়। শরীরের রোমে রোমে উত্তেজনা, মনে প্রাণে যে কোন মূল্যে নিজেকে সঁপে দিতে সে প্রস্তুত। কিন্ত কিছুতেই ছুটে যেতে পারছে না । সমস্ত শরীর পাথরের মত শক্ত, নিঃশ্চল । 
ধীরে ধীরে সুভদ্রা ওর সামনে এসে দাঁড়ায় । সুভদ্রা, নাকি স্বর্গের ডানাকাটা পরী । ওর ঠোঁট জুড়ে এক শতকের কামনার আগুন। ধীরে ধীরে তার পদ্মের কলির হাতটা আ বাড়িয়ে দেয় সুখময়ের দিকে। সুখময় সেই অবস্থাতেই ওর হাত বাড়িয়ে দিতেই, সুভদ্রা হাত ধরে টান দিতে চায় । ঠান্ডা হিম শীতল হাত । কিন্ত মূহুর্তের জন্য মাত্র । পর মূহুর্তেই এক হ্যাঁচকায় হাত ছাড়িয়ে নেয় । অবাক কান্ড! সুখময় লক্ষ্য করে তার চোখে আগুন, প্রচন্ড ক্রোধে ওর হাতে ধরা সেই শেরওয়ালী মায়ের ফটো দিকে তাকিয়ে আছে । মনে হচ্ছিল ক্ষমতায় দিলে সে এই মূহুর্তেই ফটোটা পুড়িয়ে ফেলতো । দেখল, সুভদ্রা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল সত্যি, কিন্ত তারপর নিরাপদ দূরত্ব থেকে আবারও তাকে ডাকছে । কিন্ত এই মূহুর্তের ঘটনায় হঠাৎই ওর ভেতরে একটা আশ্চর্যজনক পরিবর্তন এসে গেছে । সে সিদ্ধান্ত নেয়, যাবে না । ওর মনে হয় কেউ যেন ভেতর থেকে তাকে বারবার নিষেধ করছে । বারবার বিপদে পড়েও বেঁচে যাচ্ছে সে । মূহুর্তে উঠে দাঁড়িয়ে সে দরজা বন্ধ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটি দরজায় এসে আবার কড়া নেড়ে ওকে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে । সেকি আকুল আকুতি, পাগল হবার পালা । সুখময় এতক্ষণে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে, কিছুতেই দরজা খুলবে না । দরজায় আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে । মনে হচ্ছে যেন দরজা ভেঙ্গে ফেলবে কেউ। এখন সত্যি রীতিমত ভয় লাগছে ওর । খুব সাবধানে উঠে সেই ফটোটা চেয়ারে রেখে, চেয়ারটা টেনে দরজায় লাগিয়ে দিল সে । কেন করল, নিজেই জানে না । কিন্ত চেয়ারটা দরজায় টেনে দিতেই কড়া নাড়ার শব্দ থেমে গেল। এবার পাশের জানলায় । সেকি অসহ্য শব্দ।  কানে বালিশ চাপা দিয়ে শক্ত হয়ে শুয়ে আছে সে । কিন্ত তাতেও কিছুতেই কিছু হচ্চে না । ধীরে ধীরে সুভদ্রার গলার স্বর পাল্টাতে লাগলো । এতক্ষণ যে আকুতি বা শারীরিক আহ্বান ছিল এখন তা আর নেই। রীতিমত ভয় দেখানো চলছে । সুুখময়ের হাত পা ভয়ে ঠান্ডা । ইচ্ছে করছে চিৎকার করে সাহায্য চায়, কিন্ত গলা থেকে একটা গোঙানি ছাড়া কোন শব্দ বেরুচ্ছে না। ক্রমে সে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে । শেষ কবে ঈশ্বরের স্মরণ নিয়েছিল মনে পড়ছে না । একটা সময় মনে হলো একমাত্র ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া ওর মুক্তি নাই। নিজের মনে নিজেকে গালি দেওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই । মনে হল ভঞ্জুর কথা শুনে যদি এখানে সে না আসত তাহলে এই বিপদে পড়তে হত না । নিজে যে এত এত ঈশ্বরের নাম জানে ভাবতে অবাক লাগছে সুখময়ের। ডুবন্ত মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে বাঁচতে চায় সেও তেমনি একের পর এক ঈশ্বরের দোহাই দিচ্ছে । এভাবে কতক্ষণ কেটেছে ধারণা নেই, এখন সে রীতিমত ঘামছে । গলা শুকিয়ে কাঠ । ওঠে গিয়ে একটু জল খায় সেই সাহস হারিয়ে ফেলেছি সুখময় । হঠাৎ মনে হলো এই যে সুভদ্রা ওকে এত ভয় দেখাচ্ছে , সে চাইলেই তো ঘরের ভেতর আসতে পারে, তবে কেন ভেতরে আসছে না ? নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে তার পেছনে। কী সেই কারণ ? যে ভাবে জানালায় আঘাত হানছে, চাইলেই তো জানলা ভেঙ্গেই ভিতরে আসতে পারে সুভদ্রা । ভয় দেখানোর কি প্রয়োজন ? ধীরে ধীরে মাথা কাজ করতে লাগল সুখময়ের। মনে সাহস ফিরে পাচ্ছে সে । লক্ষ্য করল, যখনই সুভদ্রা যে জানলার কাছে যাচ্ছে সেখানেই ভঞ্জুর লাগানো লাল সূতো গুলো আগুনের মত জ্বলতে থাকে । তবে কি ভঞ্জুর লাগানো সূতোই ওকে এই মূহুর্তে সুরক্ষা দিচ্ছে । মনে মন ভঞ্জুকে কি বলে ধন্যবাদ দেব বুঝতে পারছে না সে । কিন্ত এভাবেই বা কতক্ষণ চলতে পারে !
বারবার সুতোগুলো জ্বলে ওঠায় ঝলসে যাচ্ছে । এভাবে বেশিক্ষণ চলতে পারে না । জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সুতো । ওর কাছে কোন এক্সট্রা সুতো নেই যে আবার দরজায় টাঙিয়ে দেবে । মনে মনে প্রমাদ গুনছে সুখময় । বাইরে তখনও মধ্য রাত্রি চলছে । হঠাৎই ওর বিছানার ঠিক পাশের জানলাটির সূতো দুই প্রান্ত জ্বলে যাওয়ায় জানলা থেকে মাটিতে খসে পড়ে । আর সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিকট আওয়াজে জানলার কাঁচ ভেঙ্গে চৌচির। ঘরের ভেতরে তখন তুফান শুরু হয়ে গেছে । বাতাসের কী ভীষণ তীব্রতা । দেওয়ালের টিভিটা সশব্দে মাটিতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে সমস্ত ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে । সুখময় ছিটকে বিছানা থেকে দরজার পাশের চেয়ারে হোঁচট খেয়ে পড়ে । প্রতি মূহুর্তে সে মৃত্যুর প্রহর গুনছে এখন । এখন আর সুভদ্রাকে চেনা যাচ্ছে না । জানলার ওপাশে চোখগুলো যেন আগুনের গোলা । এবারে আর একটা নয় অসংখ্য সুভদ্রা বাইরে দাঁড়ানো । ভাঙ্গা জানলা থেকে আগুনের ফলকা যেন ছুটে আসছে ওকে গিলে নিতে । সুখময় যত ভয় পাচ্ছে, ভয় দেখানোর তীব্রতা যেন আরও তীব্রতর হচ্ছে । সে পড়ে যেতে যেতে শক্ত হাতে চেয়ারের হাতল ধরে কোন ক্রমে চেয়ারে বসতে যায়, তখনই হাতে ঠেকে সেই ফটোটি । তক্ষুনি সে ফটোটা তুলে নিয়ে বুকে চেপে ধরে মূহুর্তে। লক্ষ্য করে এতক্ষণ যে আগুনের হলকা ওর দিকে ছুটে আসছিল হঠাৎই তার লাগামটা কে যেন কশে টেনে ধরেছে । এখন আর শিখা গুলোর তীব্রতা নেই তবে বাইরের আস্ফালন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে । অনেকটা সময় চেয়ারে বসে থাকে সুখময় । ঘরের চালে তখন পাথর বৃষ্টি চলছে । প্রচন্ড শব্দ আর এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি । একটা পেঁচা ক্রমাগত কর্কশ স্বরে ডাকছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অসংখ্য বিড়ালের কান্না । অন্ধকারের প্রেতপুরীতে সে একা নিঃসহায় । শরীরের সবটুকু রক্ত হিম শীতল, নিজের বুকের ধুকধুকানি যেন ঢাকের বাদ্যির মত কানে লাগছে । সে এখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে । 
এভাবেই আরও মিনিট পনেরো কেটে গেল । এবার সে বুঝতে পারছে এই ফটো কিংবা জানলায় টাঙানো সূতোগুলোর জন্য সে এতটা সময় ধরে সুরক্ষিত এবং ওকে আসলে সুরক্ষিত করে গেছে ভঞ্জু। ভঞ্জু জানত আজ রাত এমন একটা কিছু ঘটতে পারে এবং তার জন্যই সে বারবার ওকে সাবধান করতে চেয়েছিল । সে বুঝতে চায়নি, সেটা ওর অপরাধ । তবে ভঞ্জুর চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না । সুখময়ের মনে হয় এখনও যদি তাকে বাঁচতে হয় তাহলে যে কোন উপায়ে ওকে ভঞ্জুর কাছে পৌঁছতে হবে । ভাবনা মনে আসতেই, মুহূর্তে বিছানা চাদরটা টেনে নিয়ে ফটোটাকে বুকের উপর শক্ত করে বেঁধে নেয় সে। এখান থেকে পালাতে হবে তাকে । মনে পড়ল, ফটোটা ধরাছিল তাই সুভদ্রা ওর হাত ধরেও ছাড়িয়ে নিয়েছিল। সুখময় নিশ্চিত, এই ফটোতে কিছু একটা শক্তি আছে যা তাকে বাঁচাতে পারে । এই ফটো বুকে বেঁধেই ওকে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে হবে । কিন্ত দরজা খোলার পর যদি সে আক্রান্ত হয় ? সিদ্ধান্ত নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল, কিন্ত দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেে ই নিজেকে বাঁচানোর। সে ধীরে ধীরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। এক পা এক পা করে জানলার দিকে এগুচ্ছছে মনে হল যারা এতক্ষণ ওকে ভয় দেখাচ্ছিল তারা সেই জানালা থেকে সরে গিয়ে অন্য জানালা থেকে ওকে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে । সে একটানে জানলা থেকে সুতো খুলে নিয়ে নিজের হাতে শক্ত করে বেঁধে নিল। জানালায় তখন কঠিন নিস্তব্ধতা ।  পেছন ফিরতেই এই জানলাটাও সশব্দে ভেঙ্গে গেল। সারা ঘরময় কাঁচের টুকরো । শরীরের ঠিক পাশ ঘেঁষে ছুটে ছুটে গেছে কাঁচের টুকরো কিন্ত একটা টুকরো ভুল করেও গায়ে লাগেনি । এখন সে ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেছে । তার সুটকেস থেকে কাপড়গুলো কেউ যেন খুলে খুলে ছুঁড়ে দিচ্ছে ওর দিকে । হঠাৎ টেবিলে রাখা মদের বোতলটা কেউ যেন ওকেই লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলো । একটু হলেই ওর গায়ে লাগতে পারত, বসে যেতেই বোতলটা দেওয়ালে ধাক্কা লেগে টুকরো টুকরো । অবশিষ্ট মদ তখন মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে । ভাঙ্গা জানলা থেকে ভিতরে পাথর ছুড়ছে কেউ । গায়ে এখনও লাগেনি কিন্ত লাগতে কতক্ষণ।  সে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে একটার পর একটা জানলা থেকে সুতো খুলে নিজেকে সুরক্ষিত করতে লাগল। ওর শরীরের বিভিন্ন অংশে সুতো বাঁধা হয়ে গেছে । এদিকে জানলাগুলো আর সুরক্ষিত নয় এখন । সবকটার কাঁচ ভেঙ্গে গেছে । চারদিক থেকে বাতাসের তীব্রতায় ঘরটা কাগজের ঠোঙার মত যে কোনও মূহুর্তেই দুমরে মুচড়ে যেতে পারে । ঘরের চেয়ার, টেবিল, খাট কিছুই আর স্থির নয় । সে নিজেও কয়েকবার এই দেওয়াল থেকে ওই দেওয়ালে ছিটকে গিয়ে পড়েছে । শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের যন্ত্রণা । এখানে থাকা আর কোন অবস্থাতেই নিরাপদ নয় । দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল সুখময়। মূহুর্তে ঘরটা চোখের সামনেই চাল শুদ্ধ উড়ে গিয়ে সোজা পাহাড়ের খাদে । একসঙ্গে একশটি পিচাশ যেন সশব্দে হেসে উঠল তখনই। রক্ত জল করা সেই হাসি । ওর পায়ে কেউ যেন শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে মাটির সঙ্গে । সে এগোতে পারছে না । কেউ ওকে টেনে ঘরের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে । সুখময় খুবই কষ্ট করে হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে । দূরে ভঞ্জুর ঘর দেখা যাচ্ছে, স্পষ্ট দেখা যায়, কিন্ত পথ কিছুতেই শেষ হয় না । ওর হাত-পা পাথরের ঘষায় ছাল চলে গিয়ে রক্ত পড়ছে চুঁইয়ে। একটা একটা করে ওর চারপাশে অনেকগুলো কুকুর । ওরা ওকে দেখে ভয় পেয়ে দূর থেকে চিৎকার করছে সব । সুখময়কে ঘিরে অসংখ্য সুভদ্রা বাতাসে ভাসছে যেন । মাটির ঘষায় একে একে সুতোগুলো খুলে যাচ্ছে শরীর থেকে । একটা সময় ফটোটি ছাড়া সুখময়ের কাছে কিছুই নেই। সুখময়ের মনে হয় সুভদ্রার শরীরটা ক্রমশ শিয়ালের আকৃতি ধারণ করছে । প্রথমে একটা তারপর আরও একটা, তারপর আরও একটা শিয়াল ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে এল । ওদের চোখ দুটো অন্ধকারেও টকটকে লাল। সুুুখময়ে শরীরে ওদেরকে তাড়ানোর শক্তি নেই। শিয়াল ওর পা চাটছে। সে আপ্রাণ চেষ্টা করছে এগিয়ে যাবার। আর মাত্র একটু পথ । ওকে পার হতেই হবে । চারদিক থেকে শিয়ালগুলো ওর শরীরের রক্ত চেটে খাচ্ছে । প্রচন্ড ভয়ে আর তাকাতে পারছে না সুখময় । শরীর ক্রমশ অবশ হয়ে যাচ্ছে , বিন্দুমাত্র শক্তি নাই। সে বুঝতে পারছে আর একটু ক্ষণের মধ্যেই সে মারা যাবে তবু শেষবারের মত শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ভঞ্জুকে ডাকার চেষ্টা নিল সুুখময়। তারপর আর কিছুই মনে নেই। 

জ্ঞান ফিরতেই বুঝতে পারল সে বিছানায় শুয়ে । একটা সেলাইন দেওয়া চলছে । হাত পায়ের বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্রণা । নাড়াতে গেলে খুব কষ্ট হয় । ঘরে চাপা স্বরে অপরিচিত কারা যেন ফিসফিস করে কিছু একটা বলছে । ওর চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না । সমস্ত শরীর জুড়ে বিশাল ক্লান্তি । সুখময় চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছে । একসময়ে কেউ একজন মনে হল ওর মাথায় রাখল । বরফের মত ঠান্ডা সেই হাত । চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে মাথার ঠিক পাশেই সুভদ্রা দাঁড়িয়ে । ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে ।
-- এখন কেমন লাগছে ?
সুখময়ের শরীরে বিদ্যুত বেগে একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেল যেন।  সামনে পৃথিবীটা অন্ধকার থেকে অন্ধকারতর হতে লাগল। অতি কষ্টে সে জিজ্ঞেস করল, সুভদ্রা ?
ভদ্রমহিলা একটু অবাক হলেন যেন ।
-- কিছু বলছেন ? আমাকে চিনতে পারছেন ? আমি মাধবী সরকার, এই হোমস্টের--
সুখময় হাত হালকা তুলে থামিয়ে দিল ওনাকে । ওর স্থির ধারণা ভদ্রমহিলা সত্যি বলছেন না ।ওর গলা থেকে অস্পষ্ট গোঙানি ছাড়া আর কোন শব্দ বেড়োচ্ছে না এখন । সুখময় বুঝতে পারে এখনও সে বিপদ মুক্ত নয় । মূহুর্তে  আবারও জ্ঞান হারায় সুখময়। 

Comments